গাজীপুরে নিহত দুই বন্ধু (বাঁয়ে); সিলেটে নিহত ওয়াসিম -
২৪ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ৮:৫২

গাজীপুর সিলেট ও মুন্সীগঞ্জে বাসচাপায় ৪ ছাত্র নিহত

সড়কে লাশের মিছিল থেমে নেই। রাজধানীর নর্দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার নিহত হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই গাজীপুর, সিলেট ও মুন্সীগঞ্জে গতকাল সড়কে বাসের চাকায় পিষ্ঠ হলেন আরো চার ছাত্র। এছাড়া জয়পুরহাটে অপর এক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত হয়।

গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, মহানগরের সালনা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গতকাল দুপুরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই কলেজছাত্র নিহত এবং তাদের এক সহপাঠীসহ দু’জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেনÑ স্থানীয় লিঙ্কন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মাস্টারবাড়ি এলাকার জুম্মান হোসেন নাছির (১৮) এবং ভীমবাজার এলাকার রবিন (২২)। আহতরা হলেনÑ লিঙ্কন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও দক্ষিণ বাউপাড়া এলাকার মো: আলামিন (১৮) ও আসোয়াত (১১)।

গাজীপুর সদর থানার এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, ইটাহাটা এলাকার লিঙ্কন কলেজ থেকে মোটরসাইকেলে তিন বন্ধু বাড়িতে যাওয়ার পথে দক্ষিণ সালনা এলাকায় কনকর্ড গার্মেন্টের সামনে বিপরীতগামী একটি অটোরিকশার সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী ছিটকে মহাসড়কের ওপর পড়ে যায়। এ সময় ময়মনসিংহগামী সৌখিন পরিবহনের একটি যাত্রবাহী বাস কলেজছাত্র নাছিরকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান রবিন। আলামিন ও অটোরিকশা যাত্রী শিশু আসোয়াতকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় অন্তর (১২) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। সে লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী মো: রাজা মিয়ার ছেলে এবং মেদিনীমণ্ডল আনোয়ার আলী উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।

গতকাল দুপুরে মেদিনীমণ্ডল এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বাড়িতে যাওয়ার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয় এলাকাবাসী। আড়াই ঘণ্টা পর লৌহজং থানার নির্বাহী কর্মকর্তা কাবিরুল ইসলামের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা ও এলাকাবাসী মহাসড়ক থেকে নেমে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।

হাসাড়া হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ তালুকদার জানান, বাসটি আটক করা হয়েছে। মাওয়া থেকে ঢাকামুখী বনফুল পরিবহনের বাসটি রঙ সাইড দিয়ে এসে সড়কের পাশে থাকা স্কুল ছাত্রকে ধাক্কা দেয়।

সিলেট ব্যুরো জানায়, ভাড়া নিয়ে বাগি¦তণ্ডার জের ধরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র ওয়াসিম আব্বাসকে চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বিকেলে সিলেটের শেরপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সিলেটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ করেছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওই এলাকায় বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত ছাত্র ওয়াসিম আব্বাসের বাড়ি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। ওয়াসিম আব্বাস সকালে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে নিজ এলাকায় বিয়ের অনুষ্ঠানে যান। বিকেলে তারা নবীগঞ্জের টোলপ্লাজায় আসেন।

সেখান থেকে সিলেট-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী উদার পরিবহনের একটি বাসে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। পার্শ্ববর্তী শেরপুরে আসার আগে ভাড়া নিয়ে বাসের চালকের সহকারীর সাথে বাগি¦তণ্ডা হয় আব্বাসের। ভাড়া নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় একপর্যায়ে তাদের শেরপুরে নামিয়ে দেয়া হয়। তবে বাসে থেকে যান ওয়াসিম আব্বাস। তিনি বাস থেকে নামার আগেই বাসটি ছেড়ে দেয়। এ সময় বাসের সহকারী দরজা বন্ধ করে দেয়।

কিছু সময় দরজায় ঝুলে থেকে একপর্যায়ে তিনি বাসের নিচে চাপা পড়েন। ওয়াসিমের বন্ধুরা জানিয়েছেন ওয়াসিম নামার আগেই বাসটি ছেড়ে দেয়। একপর্যায়ে ওয়াসিম বাসের চাকার নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াসিমকে মৃত ঘোষণা করেন। সিকৃবির ছাত্র শিপলু রায় অভিযোগ করেনÑ তারা সিলেট-ময়মনসিংহ সড়কে নামার সময় হেলপার তাদের ধাক্কা দেয় এবং জোর করে দরজা লাগিয়ে দেয়াতে ওয়াসিম বাসের নিচে চাপা পড়ে। হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, পরে স্থানীয়রা বাসটিকে ওসমানীনগরের বেগমপুর এলাকা থেকে ধাওয়া করে আটক করেছে।

জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জেলার পাঁচবিবিতে দু’টি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহীসহ দু’জন নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার পাঁচবিবি-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের কুসুম্বা ইউপি পরিষদ বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থলে একজন ও হাসপাতালে নেয়ার পথে অপরজন মারা যান।

নিহতরা হলেন- পাঁচবিবি উপজেলার দানেজপুর এলাকার সাইফুল রহমানের ছেলে মাহাফুজ (১৯) ও পানিয়াল গ্রামের মৃত মফিজ মণ্ডলের ছেলে তৈবুর রহমান (৫৫)।

এ ছাড়াও দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত রাতুল নামে একজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/397704