দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদের উপকূল জুড়ে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ। ইনসেটে ২০১০ সালে কদমরাসূলে নির্মাণাধীন ক্ষয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধ
১০ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ১:১৭

দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন বেড়ি বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় ব্যয় হবে ১০৮৬ কোটি টাকা

দক্ষিণ চট্টগ্রামে সাগর ও নদীভাঙন প্রতিরোধে ১০৮৬ কোটি টাকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং একই সাথে নদী ও খালের ভরাট অংশ খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে গৃহীত প্রকল্পের মধ্যে বাঁশখালীতে ৭৪ ভাগ চন্দনাইশে ৯৫ ভাগ এবং পটিয়া-আনোয়ারা ও পতেঙ্গায় ৫৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অপর প্রকল্পে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ এগিয়ে চললেও ওই প্রকল্পের আনোয়ারা চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া অংশে ভরাট হয়ে যাওয়া শঙ্খনদী খননকাজ আজো ফাইলবন্দী রয়েছে।

এ দিকে নগরীর পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা হাটখালী পর্যন্ত টেকসই ভাঙন প্রতিরোধ কাজের গতি সন্তোষজনক হলেও ১০৮৬ কোটি টাকায় গৃহীত প্রকল্পে লবণ ও আর্দ্রতা প্রতিরোধে কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। অপর দিকে এসব টেকসই কাজে বালু, সিমেন্ট ও পাথরের মিশ্রণ পদ্ধতি তথা অনুপাত এক তিন ছয় হওয়ায় কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

একই বিষয়ে গত বছরের ৫ জুলাই নয়া দিগন্তে সাগরের লোনাপানিতে ক্ষয় হয়ে হুমকির মুখে উপকূলের বেড়িবাঁধ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের ভাঙন প্রতিরোধ এবং নদী খননকাজের জন্য ২০১৬ ও ২০১৭ সালের মধ্যে পৃথকভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডে চলমান প্রকল্পগুলো হলো চন্দনাইশে শঙ্খ নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১৪০ কোটি টাকায় ১৬টি প্যাকেজে ভাঙন প্রতিরোধ কাজ চলছে, যা চলতি বছরের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা ইতোমধ্যে এসব প্যাকেজের কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে।

একইভাবে বাঁশখালীতে ২৯৩ কোটি টাকায় ৩৬টি প্যাকেজের কাজ চলছে। এখানে কাজের অগ্রগতি প্রায় ৭৪ ভাগ হলেও সনুয়ায় একই সাথে ৩টা প্যাকেজে প্রায় ২৫ কোটি টাকার কাজ যথাসময়ে ঠিকাদার করতে না পারায় তা নতুনভাবে দরপত্র দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ দিকে আনোয়ারা থেকে নগরীর পতেঙ্গা পর্যন্ত ৩২০ কোটি টাকায় ৪২টি প্যাকেজের কাজ চলছে। এ প্যাকেজের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। কাজের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের জুনে। এর মধ্যে এই প্যাকেজের কাজ প্রায় ৫৫ ভাগ এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম।

এ দিকে নতুনভাবে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় নদী ও খালের ভাঙন প্রতিরোধ এবং সেই সাথে ভরাট হয়ে যাওয়া শঙ্খ নদীর ২২ কিলোমিটার এলাকা খননসহ ৩৩৩ কোটি টাকায় ১৩টি প্যাকেজের মধ্যে নদী খননকাজ আজো ফাইলবন্দী থাকলেও অপর ১২টি প্যাকেজের কাজ চলছে। এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী সওকত ইবনে সাঈদ বলেন, নদী খালের ভাঙন প্রতিরোধে ১২ প্যাকেজের কাজ ভালোভাবে এগিয়ে চলছে এবং খননকাজের জন্য দরপত্র গ্রহণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।

জানা গেছে, সাগর বা নদী উপকূলে ভাঙন প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষামূলক টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজে-সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। অথচ এই বেড়িবাঁধ নির্মাণে অর্ডিনারি পোর্ট ল্যান্ড সিমেন্ট (ওপিসি) ও পোর্ট ল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট ( পিসিসি) ব্যবহার করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুর: প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ড. এমডি মঈনুল ইসলাম বলেন, সাগর তীরে নির্মাণাধীন অবকাঠামোতে লবণ পানি প্রবেশ করে পরে তা শুকিয়ে স্থাপনায় ফাটল বা ক্ষয় হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে পাওয়া পোর্টল্যান্ড কম্পোজিট সিমেন্ট (পিসিসি) কিছুটা ভালো হলেও অর্ডিনারি পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট (ওপিসি) কোনোভাবেই দীর্ঘদিন টেকসই হতে পারে না কারণ এসব সিমেন্টে লবণ বা আর্দ্রতা প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। তাই তিনি এসব অবকাঠামো নির্মাণে মিশ্রণের সাথে আলাদাভাবে ফ্লাই্এ্যাশ বা স্ল্যাগ সমন্বয় করা হলে লবণ ও আর্দ্রতা প্রতিরোধ অনেকটা সম্ভব এবং বালু সিমেন্ট ও পাথরের মিশ্রণ বা অনুপাত পরিবর্তন করার পরামর্শ দেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী সামসুল করিম বলেন, ইতোমধ্যে নতুন প্রতিরোধমূলক কাজে মিশ্রণে পরিবর্তন আনা হচ্ছে যাতে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ টেকসই হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকেীশলী (ডিজাইন) মোতাহার হোসেন বলেন, কিভাবে বেড়িবাঁধ আরো টেকসই করা যায় সে বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। নতুন ডিজাইনে মিশ্রণে পরিবর্তন করে ১, ২ ও ৪ করা হয়েছে বলে তিনি মুঠোফোনে নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/394203