১০ মার্চ ২০১৯, রবিবার, ১:১৫

শান্তিনগর থেকে ঝিলমিল ফ্লাইওভার

ভূমি অধিগ্রহণসহ নকশায় খরচ ৭১৯ কোটি টাকা

দেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ফ্লাইওভার নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজধানীর শান্তিনগর থেকে ঝিলমিল (ঢাকা-মাওয়া) পর্যন্ত প্রায় ১৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার এই ফ্লাইওভার প্রকল্পের জন্য প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১৯ কোটি টাকা। চার বছরে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা এই লিংক প্রকল্পের মাধ্যমে ১৬৬ শতক ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন, বিভিন্ন সেবা সংস্থার লাইন সরানো, সম্ভাব্যতা যাচাই, ড্রইং, ডিজাইন, পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। মূল প্রকল্পটির ব্যয় নিয়ে এখনো দোটানায় রয়েছে এই মন্ত্রণালয়। এখানে প্রতি শতক জমি অধিগ্রহণে মূল্য প্রাক্কলন করা হয় ২ কোটি টাকা। ফলে নির্মাণব্যয় আরো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চার লেনের এই ফ্লাইওভারের শুরু রাজধানীর ফকিরাপুল ইন্টারসেকশন থেকে এবং পুরান ঢাকাকে যুক্ত করে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর দিয়ে অপর প্রান্তে মিলবে চুনকুটিয়া পর্যন্ত।

ঢাকা একটি জনঘনপূর্ণ শহর। জাতিসঙ্ঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালে এর জনসংখ্যা হবে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ। ঢাকার আয়তন প্রায় এক হাজার ৫ শ’ বর্গকিলোমিটার। এর নগরায়ণের হার অত্যন্ত দ্রুত। শহরের মোট আয়তনের তুলনায় রাস্তার পরিমাণ মাত্র ৮ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মান হচ্ছে ২৫ শতাংশ। রাজউক গোলাপশাহ মাজার সার্কেল থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পরে পল্টন থেকে এটা শুরু করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করা হয়। ঝিলমিল আবাসিক এলাকা পর্যন্ত নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে প্রকল্পের আওতায় বুড়িগঙ্গা নদীর ওপর দিয়ে চতুর্থ ব্রিজ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। ফলে ফ্লাইওভারের মোট দৈর্ঘ্য ১৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) আওতায় করার প্রস্তাবনা গত ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে অনুমোদন দেয়া হয়।

জানা গেছে, রুট নির্ধারণ নিয়ে বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি-৩) রুটের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়া এবং পিপিপিতে হবে নাকি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে করা হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ফ্লাইওভারটির নির্মাণে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময় পিপিপিতেই নির্মাণে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। বেশ কিছু স্থানে নতুন রুট নির্ধারণ এবং কয়েকটি স্থানে লুপ বাদ দেয়া হচ্ছে। ফলে এখন প্রায় ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার চার লেনের এ ফ্লাইওভারটি তৈরিতে আর কোনো বাধা থাকছে না। ফ্লাইওভারটি নির্মাণ হলে পুরান ঢাকার যানজট নিরসন এবং খুব সহজেই রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে যাতায়াত করা যাবে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) মূল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য ব্যয় প্রাক্কলন করেছে বুয়েট টিম ১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, যা সমীক্ষা করে পিডব্লিউডি দিয়েছিল এক হাজার ৭৮২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

রাজউকের প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, পিপিপি পদ্ধতিতে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের জন্য লিংক প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ, পরামর্শক সেবা ইত্যাদির জন্য ২০১৪ সালে ব্যয় ধরা হয় ৬৪৩ কোটি টাকা। এখানে ইউটিলিটি সেবা সরানোর ব্যয় নতুন করে যুক্ত করায় ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৭১৮ কোটি ৬৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এখানে ১৬৫ দশমিক ৩০ শতক জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। জমি অধিগ্রহণে ধরা হয়েছে ৩৩১ কোটি ২৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। প্রতি শতকের জন্য মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি টাকা। পাশাপাশি ৩ হেক্টর জমি রিক্যুইজিশন করার প্রস্তাব রয়েছে। এখানে পরামর্শক খাতে যাবে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। পুনর্বাসনে যাবে ১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বিদ্যমান স্থাপনার ক্ষতিপূরণে ধরা হয়েছে ২৯ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর ইউটিলিটি লাইন সরাতে ২৪৬ কোটি ৪১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে মূল প্রকল্প পিপিপিতে বাস্তবায়নে কোনো বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে কি না জানতে চাওয়া হয়। যেহেতু ঢাকায় বাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (পিআরপি-৩) চলমান প্রকল্প রয়েছে তাই দুই প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্ট সাংঘর্ষিক হচ্ছে কি না সেটাকে যাচাই করতে হবে। চার বছরের জন্য এই প্রকল্প মেয়াদ প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ব্যয়কে বাস্তবসম্মত করার জন্য পিইসি থেকে বলা হয়েছে বলে কমিশন সূত্র বলছে।

উল্লেখ্য, দেশের দীর্ঘতম ফ্লাইওভার নির্মিত হচ্ছে চট্টগ্রামে। লালখানবাজার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এই এলিভেটেড এক্সপ্রেস নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে নির্মিত দেশের দীর্ঘতম ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের ভিত্তি স্থাপন করেন।


http://www.dailynayadiganta.com/first-page/394177