২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ১১:০৫

‘বোমার’ সাথে বসবাস

সকালে ফোন করলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। বললেন, ‘ভাই, আতঙ্কে আছি। যে বাসায় থাকি তার নিচে পার্কিংয়ে থাকে ৭২টি গাড়ি। কোনোভাবে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে পুরো ভবনের আর কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর একবার বিস্ফোরিত হলে ১২০টি ফ্ল্যাটের কোনো মানুষের বাঁচার সম্ভাবনা থাকবে না।’ ওই কর্মকর্তা বললেন, রাজধানীতে যারা ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন তারা সবাইকে এভাবে জীবনের শঙ্কা নিয়ে ঘুমাতে হয়। যেসব গাড়িতে সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে প্রতিটিই একটি ‘বোমা’ বলে মন্তব্য করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এই সিলিন্ডার যেকোনো সময় মানুষের জীবন সংহার করতে পারে। শুধু গাড়ির সিলিন্ডারই নয়; রান্নার জন্য বাসাবাড়িতে যেসব সিলিন্ডার ব্যবহার হয় সেগুলোও এক একটি শক্তিশালী ‘বোমা’ বলে মন্তব্য করেন অনেকে। যারা সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করছেন তারাও ‘বোমার’ সাথেই বসবাস করছেন।

শাফি উদ্দিন আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তি, যিনি এই সিলিন্ডার নিয়ে কাজ করছেন, তিনি বলেন, এগুলো এক একটি শাক্তিশালী ‘বোমা’। যেকোনো সময় এগুলো বিস্ফোরিত হতে পারে। অথচ এগুলো আমাদের ঘরের মধ্যেই আমরা রাখছি। যে গাড়িতে চলাচল করছি সেই গাড়ির সাথেই এই সিলিন্ডার রয়েছে। শাফি উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, প্রায়ই এই সিলিন্ডারের কারণে মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে রান্নার সময় আমরা একটি বারের জন্যও চিন্তা করছি না ওগুলো বিস্ফোরিত হতে পারে। শাফি উদ্দিন বলেন, যে সিলিন্ডারগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে তার বেশির ভাগই পুরনো। যেকোনো সময় তা দুর্ঘটনা ডেকে আনতে পারে। গাড়ির সিলিন্ডার নিয়মিত চেক করার কথা থাকলেও কয়জন গাড়ি মালিক তা চেক করছেন?

চকবাজারের চুড়িহাট্টায় যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে তার সূত্রপাত গ্যাস সিলিন্ডার থেকেই বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে তার ভয়ানক বিস্তৃতি ঘটেছে সেখানকার কারখানা ও গোডাউনে মজুদ থাকা কেমিক্যাল দিয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে যে খাবারের হোটেলটি ছিল সেই হোটেলের সামনে একটি সিলিন্ডারবাহী পিকআপ দেখা গেছে। সেটি রাখা ছিল হোটেলের সামনের চুলার কাছেই। ধারণা করা হচ্ছে ওই চুলার আগুনের তাপে পিকআপে থাকা সিলিন্ডারের কোনো একটি বিস্ফোরিত হয়েছে। পরে তা অন্যান্য সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এতে ওই হোটেলের ভেতরে থাকা সিলিন্ডারও বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে গেছে। আর এই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিয়েছে ওখানকার কারখানা ও গুদামে রক্ষিত বিভিন্ন রকম কেমিক্যালে।

প্রায়ই ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা, যাতে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ে একটি মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হন। আহত হন আরো চারজন। গত ২৫ জানুয়ারি নড়াইলের হবখালী ইউনিয়নের সাধুখালী গ্রামের সবুর ফকিরের বাড়িতে রান্না ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একই পরিবারের আটজন দগ্ধ হন। ২৫ জানুয়ারি মিরপুর-১ নম্বরের ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।

এ দিকে রাজধানীর যেসব এলাকায় লাইনের গ্যাস নেই; সেসব এলাকার অলিগলিতে বিক্রি হচ্ছে সিলিন্ডার। খিলগাঁও সি ব্লকের এক বাসিন্দা সকালে জানান, ওখানে একটি স্কুল ও কলেজের পাশেই গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। যেখানে রাস্তার ওপর অহরহ পড়ে থাকছে সিলিন্ডার। যেকোনো সময় সেসব সিলিন্ডার থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ওই ব্যক্তি জানান, বিষয়টি তারা পুলিশকে অবহিত করেছেন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

রাজধানীর অনেক এলাকায় রাস্তার ওপর বা ফুটপাতে সিলিন্ডার রেখে চুলা জ¦ালিয়ে রান্না করার দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ে। এগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে পথচারীরা জানালেও তা বন্ধ হচ্ছে না।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের চৌধুরী নয়া দিগন্তকে জানান, সিলিন্ডারের কারণে অবশ্যই আমরা ঝুঁকির মধ্যে আছি। আমাদের অনেকেই আছেন যারা এর ব্যবহারবিধি জানেন না। নিয়মকানুন জেনে এগুলো ব্যবহার করতে হবে। আবার এগুলো মানসম্মত কি না তাও আমরা জানি না। মানসম্মত কি না তা জানতে হলে তা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেটা নেই। তিনি বলেন, বেশির ভাগ সিলিন্ডারই হয়তো মানসম্মত নয়।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/390488