চকবাজার ট্র্যাজেডিতে মারা গেছেন বাবা। জমজ দুই শিশুকে কোলে নিয়ে নিহতের স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনরা : মোহাম্মদ শরীফ -
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ১২:৩৫

মৃতের সংখ্যা ৮১

চকবাজার যেন মৃত্যুপুরী

উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত; ৪১ জনের লাশ শনাক্ত; নিখোঁজ ৫১ জন; ৩টি তদন্ত কমিটি; লাশ শনাক্ত তিনভাবে

পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টার মসজিদ গলিতে পাশাপাশি দু’টি খাবার হোটেল। একটি রাজমহল। ঠিক বিপরীত পাশেই হজরত আনাস (র:) হোটেল। হোটেলের পাশে ওষুধের দোকান। সামনে রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম। দোকানের সংখ্যা আনুমানিক ২৫টি। পাশে ডেকোরেটরের দোকান। রয়েছে ফার্মেসি ও ডেন্টাল ক্লিনিক। প্রতিদিনের মতো বুধবার রাতেও ব্যস্ত ছিল চুড়িহাট্টার চৌরাস্তা। চলছিল ব্যবসা। ভিড় ছিল হোটেলে। লোকেলোকারণ্য ছিল। সাথে চিরচেনা যানজটও। চুড়িহাট্টার হাজী ওয়াহিদ ম্যানসনের পেছনের দক্ষিণ পাশেই জামাল সরদার কমিউনিটি সেন্টারে চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। ফলে লোকের আনাগোনায় যখন এলাকাটি সরগরম, তখনি ঘটল এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। হঠাৎ বিকট আওয়াজ। লোকজনের দিগি¦দিক ছোটাছুটি। আগুন, বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার। মুহূর্তের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে চুরিহাট্টা মসজিদ গলির সড়কে। এরপর পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় পাঁচ রাস্তার মোড়ে থাকা প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, পিকআপ, রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি। কেউ কেউ রিকশা, মোটরসাইকেল, গাড়ি রেখেই রাস্তার গলি ধরে দৌড়ে প্রাণ বাঁচায়। আর কেউ পুড়ে ঘটনাস্থলেই অঙ্গার। শেষ রক্ষা আর হয়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু পথ সরু হওয়ায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে অনেকটাই সময় লেগে যায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। ততক্ষণে মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয় ব্যস্ত ওই এলাকাটি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা জানান, রাত আনুমানিক ১০টা ৩৫ মিনিটের দিকে হাজী ওয়াহিদ ম্যানসনের সামনের রাস্তায় একটি পিকআপ ভ্যানের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। সাথে সাথে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। যানজটে বসে থাকা মানুষগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিক্ষা তাদের গ্রাস করে। আগুনের একটি ফুলকি গিয়ে পাশের খাবার হোটেলে পড়লে, হোটেলের থাকা আরো কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮১ জনে। এর মধ্যে ৭০ জন পুরুষ, সাতজন নারী ও চারজন শিশু বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টার শ^াসরুদ্ধকর অভিযানে ঘটনাস্থল থেকে ৭০টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আরো ১১টি লাশ বিভিন্নভাবে পৌঁছায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। সাংবাদিকদের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মো: এনামুর রহমান। এ ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আহতরা ঢাকা মেডিক্যালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেশ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী সামন্ত লাল সেন।

এ দিকে ভোর থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। দুপুর ২টার পর ঢাকা মেডিক্যালে নিহতদের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। তাদের মধ্যে ৪১ জনকে শনাক্ত করা গেছে। বাকিদের ডিএনএ ছাড়া কোনো মতে শনাক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। বিকেল থেকে লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে হস্তান্তর শুরু হয়। রাতে এ খবর লেখা পর্যন্ত ৩৯টি লাশ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সেলিম রেজা জানিয়েছেন, যে ৪১টি লাশ শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে ১৫ জন নোয়াখালীর। তিনি জানান, লাশ হস্তান্তরের সময় প্রত্যেককে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।

এ দিকে ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তিন সদসস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ভয়াবহ এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। চার পাশে পোড়া গন্ধ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে অনেকেই হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের খুঁজছেন। কেউ কেউ স্বজনের ছবি হাতে নিয়ে কান্না করছেন। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে এসেছে ওই এলাকার বাতাস। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আত্মীয়স্বজন ও উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন এলাকাটিতে। বন্ধ রাখা হয়েছে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ও দোকানপাট।

এলাকাবাসীর কারো কারো ভাষ্যÑ ওয়াহেদ মিয়ার বাড়িতে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। তাই আগুন লাগার পরপর তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

তদন্ত কমিটি গঠন : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পৃথক ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ জানান, উপপরিচালক (অপারেশন্স) দিলীপ কুমার ঘোষকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক (এডি) সালাহ উদ্দিন ও উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) আব্দুল হালিম।

এ ছাড়া শিল্প মন্ত্রণালয় ১২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। তিনি বলেন, কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

শিল্পমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: মফিজুল হককে কমিটির আহ্বায়ক এবং বিসিক পরিচালক (প্রকল্প) মো: আব্দুল মান্নানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতর, বিস্ফোরক অধিদফতর, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং কেমিক্যাল ব্যবসায়ী সমিতির একজন করে প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে আছেন।

এ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। অতিরিক্ত সচিব (অগ্নি অনুবিভাগ) প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে মতামত ও সুপারিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে।

অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা : ১৫ ঘণ্টা পর আগুন নিভিয়ে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল দুপুর ১টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, আগুন পুরোপুরি নেভানো হয়েছে। এরপরও ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট থাকবে। যাতে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। সেজন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। এজন্য একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

তিনি বলেন, নিহতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। যাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না তাদের ডিএনএ টেস্ট করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। শনাক্ত লাশগুলো সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীর জুরাইন কবরস্থান দাফন করা হবে। তিনি বলেন, অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হলেও ফায়ার সার্ভিসের তিনটি টিম কাজ করবে। যাতে নতুন করে আগুন লাগতে না পারে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ওখানকার আর্বজনা ও রাবিশগুলো দ্রুত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ওই এলাকার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি আপাতত বন্ধ। ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহত-আহতদের তালিকা তৈরি করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগুন লাগার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ৫১
‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এই অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করছে। আপনার পরিচিত অথবা নিকটাত্মীয় কেউ থাকলে দয়া করে আমাদের এখানে নাম ঠিকানা লিপিবদ্ধ করুন।’ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্টের মাঠপর্যায়ের একজন কর্মচারী মাইক হাতে কিছুক্ষণ পরপরই ঘোষণা দিচ্ছিলেন। তাদের কথায় সাড়া দিয়ে গতকাল রাত ৭টা পর্যন্ত মোট ৬৪ জনের স্বজন নিখোঁজ থাকার তালিকা লিপিবদ্ধ করেন।

সকাল ৯টা থেকেই রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফিল্ড অফিসার মাহাবুবুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল চকবাজারের নন্দ কুমার রোডের ‘চকবাজার ট্র্যাজেডির’ অদূরে অবস্থান নেন। এ সময় কিছুক্ষণ পরপরই তারা মাইকিং করে নিখোঁজদের তালিকা দিতে অনুরোধ করেন। এ সময় উৎসুক জনতার ভিড়ের কারণে উদ্ধারকর্মীদের কাজ করতে বেগ পেতে হয়। পরে পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা পাঁচ রাস্তার মোড়ে মোড়ে বেরিক্যাড দিয়ে লোকজনের যাওয়া আসার গতি কমানোর চেষ্টা করেন। কখনো কখনো মানুষের জোয়ার ঠেকাতে পুলিশকে উত্তেজিত হতেও দেখা যায়।

গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কাছে নিখোঁজ ৬৪ ব্যক্তির নামের তালিকা জমা পড়ে। এর মধ্যে দু’টি শিশু ও দু’জন মহিলা রয়েছেন।

গতকাল রাতে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফিল্ড অফিসার মাহাবুবুল আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের সাথে নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা মোট ৬৪ জনের নাম দিয়ে আবেদন ফরম পুরন করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ১১টি ডেডবডি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ডাবল এন্ট্রি হয়েছে দু’টি। এখন পর্যন্ত মিসিং রয়েছেন ৫১ জন। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে তারা আবার দুঘটনাস্থলে যাবেন। যারা নিখোঁজ তাদের পরিবারের সদস্যরা আমাদের কাছে আবেদন করতে পারবেন। পরে আমরাই তাদের জানিয়ে দেবো নিখোঁজের সর্বশেষ তথ্য।

লাশ পুড়ে কয়লা : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার করা বেশ কিছু লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। চেহারা দেখে শনাক্ত করার উপায় নেই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ এ কথা জানান। তিনি বলেন, যেসব লাশ পুড়ে গেছে, কিন্তু চেহারা দেখে শনাক্ত করা যায়, সেগুলোর ময়নাতদন্ত করে গতকালই স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে যাদের লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, শনাক্ত করার জন্য তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগতে পারে।

মেডিক্যাল কলেজ মর্গের সামনে সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, তাদের এখানে মোট ৬৭টি লাশ আনা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু লাশ আছে, যেগুলো পুড়ে গেছে কিন্তু চেহারা শনাক্ত করা যাবে। কিছু লাশ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। চেহারা দেখে বা ফিঙ্গারপ্রিন্টে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। তাদের জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করতে হবে। যাদের চেহারা শনাক্ত করা যাবে, সেগুলো ময়নাতদন্ত করে লাশ বুঝিয়ে দেয়া হবে।

তিনভাবে লাশ শনাক্ত : নিহতদের লাশ তিনভাবে শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) প্রেসিডেন্ট ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। গতকাল বিকেলে মর্গে লাশ দেখার পর বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, যে পরিস্থিতি দেখলাম, চিকিৎসকদের সাথে কথা বলেছি। এখানে ৬৭টি লাশ আছে। এগুলো তিনভাবে শনাক্ত করা হবে। যাদের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে তাদের পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) করা হবে, যাদের বোঝা যাচ্ছে না তাদের ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে। আর যাদের ফিঙ্গার টেস্টের মাধ্যমেও শনাক্ত করা সম্ভব হবে না, তাদের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে। তবে ডিএনএ টেস্ট করাতে সময় লাগবে।

৩৯ লাশ হস্তান্তর : রাত সাড়ে ৯টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪১ জনকে শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে ৩৯টি লাশ তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি দু’টির পরিচয় মিললেও স্বজন না পাওয়ায় হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি বলে ঢাকা মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে। বিকেল ৩টা থেকে লাশ হস্তান্তর শুরু করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি লাশের সাথে স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। হস্তান্তর করা লাশগুলো হলোÑ ১৫ নম্বর ব্যাগে রাখা অছি উদ্দিন (২৩), ৩৬ নম্বর ব্যাগে রাখা কামাল হোসেন (৪৫), ১৪ নম্বর ব্যাগে রাখা মাহফুজুর রহমান বাবু (৪০), ৪৭ নম্বর ব্যাগে রাখা হাফেজ মো: কাউসার (২৬)। এ ছাড়া অন্য লাশগুলো হলো সিয়াম আরাফাত, শাহাদৎ হোসেন, হেলাল উদ্দিন, এনামুল হক কাজী, মোশারফ হোসেন, সিদ্দিকউল্লাহ, ওয়াসীউদ্দিন, খবির উদ্দিন, জুম্মন, আলী হোসেন, ইয়াসিন খান, মোরশেদ আলম মিঠু, সজিব, মো: কাওসার, আ: রহিম ওরফে দুলাল, সাহির, সোনিয়া, আবু বকর সিদ্দিক, ইমতিয়াজ ইমরোজ রাজু, মাসুদ রানা, মাহাবুবুর রহমান, আশরাফুল হক রাজন, ওমর ফারুক, মোহাম্মদ আলী, অপু রায়হান, তিন বছরের আরাফাত, জসিমউদ্দিন, রাজু, নয়ন খান, আয়েশা খাতুন ও আনোয়ার হোসেন। এর মধ্যে কিছু লাশ গ্রামের বাড়িতে এবং কিছু লাশ আজিমপুরে দাফন করা হয়েছে।

ভবনগুলো যেন সেলফ্ মেইড এক্সপ্লোসিভ : ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, পুরান ঢাকাকে অবকাঠামোগতভাবে নতুন করে সাজাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি মূল্য দিতে হবে। আবাসিক এলাকায় বেআইনিভাবে প্লাস্টিক দানা ও কেমিক্যালসহ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যা সেলফ মেইড এক্সপ্লোসিভের (নিজ থেকেই বিস্ফোরকে পরিণত হওয়া) মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া না হলে যেকোনো মুহূর্তে আরো বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/390301