২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:০৩

৫ শর্তে ২০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি পাচ্ছে কর্মসংস্থান ব্যাংক

পাঁচ শর্তে কর্মসংস্থান ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেয়া হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধার বিপরীতে এই রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চেয়েছে ব্যাংকটি। অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে পাঁচ শর্ত পূরণ করতে কর্মসংস্থান ব্যাংককে এই গ্যারান্টি দেয়া যেতে পারে। অর্থ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে কর্মসংস্থান ব্যাংককে ১০ বছরের জন্য এ গ্যারান্টি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে অর্থবিভাগ তিন বছরের জন্য এ গ্যারান্টি দেয়ার সুপারিশ করেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্মতি দিলেই কর্মসংস্থান ব্যাংকে ৫ শর্তে এ গ্যারান্টি দেওয়া হবে। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ পত্র পাঠিয়েছেন অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

অর্থ বিভাগের সুপারিশে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাদের প্রস্তাবে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচি’ এর আওতায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির নীতিগত সম্মতি দেয়ার কথা বলেছে। অর্থ বিভাগ থেকে কর্মসংস্থান ব্যাংকের অনুকূলে ইতঃপূর্বে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিসমূহ ছিল তিন বছর মেয়াদি। কারণ কর্মসংস্থান ব্যাংকের আর্থিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয় যে, দীর্ঘমেয়াদী ঋণের পরিবর্তে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী ঋণ গ্রহনপূর্বক তা বিনিয়োগ করে পরিশোধ করা সম্ভব। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদী কোন ব্যবসায়িক পরিকল্পনাও তারা গ্রহন করেনি। এ জন্য তাদেরকে ৩ বছরের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির নীতিগত সম্মতি দেয়াই সমীচীন বলে মনে করে অর্থ বিভাগ।

গ্যারান্টি পেলে কর্মসংস্থান ব্যাংককে ৫টি বিষয় অনুসরন করার শর্ত আরোপ করেছে অর্থ বিভাগ। রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি নীতিগত সম্মতির পর নিয়ম অনুযায়ী গ্যারান্টি গাইডলাইন অনুযায়ী চূড়ান্ত করে সেটি প্রস্তাব আকারে অর্থ বিভাগে দিতে হবে। ঋণের প্রতিটি কিস্তি পরিশোধের সাথে সাথে তা অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বকেয়া অর্থের হালনাগাদ তথ্য অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। গ্যারান্টির মেয়াদের মধ্যে ঋণের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করবে এবং পরিশোধ সংক্রান্ত কাগজপত্র অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে তিন বছরের জন্য বলবৎ থাকবে।

জানা গেছে, এই ব্যাংক দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবক ও যুব মহিলা আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তানুযায়ী আলোচ্য ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহক পর্যায়ে সর্র্বোচ্চ সুদের হার হবে ৯ শতাংশ।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ব্যাংকের তহবিল সংগ্রহের জন্য ঋণ গ্রহীতা ব্যতীত সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের কোনো বিধান নেই। ফলে পরিশোধিত মূলধন এবং শুধুমাত্র ঋণ গ্রহীতাদের আমানতের মাধ্যমে সংগৃহিত অর্থ দিয়ে ব্যাংকের প্রশাসনিক খরচ, রিজার্ভ সংরক্ষণ ইত্যাদি মেটানোর পর অবশিষ্ট অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরন করতে পারে।

কর্মসংস্থান ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রস্তাবিত ২০০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নিতে পারলে তা ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জনসহ ব্যাংকের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে। ইতোপূর্বে ব্যাংকটি একই কর্মসূচীতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন ঋণ নিয়েছে এবং ঋণের সুদ নিয়মিত পরিশোধ করছে বলে অর্থসচিব তার সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন।

সূত্র জানায়, কর্মসংস্থান ব্যাংক ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ২৪টি শাখার মাধ্যমে দেশব্যাপী বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ব্যাংকের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ প্রায় ৪৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/390075