১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ৭:১৯

কমছে রিজার্ভ

দীর্ঘ দিন ধরে অব্যাহতভাবে কমছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৩৬ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে তা কমে নেমেছে ৩ হাজার ১৮৫ কোটিতে। এক বছরে কমেছে ১৫১ কোটি ডলার। এর আগে রিজার্ভ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে ছেড়ে গিয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ বেড়েছে। এ ছাড়া দেশের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। একই সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়ছে।

কিন্তু চাহিদার চেয়ে ডলারের সরবরাহ বাড়েনি। ফলে বাজারে ডলারের ঘাটতি হচ্ছে। এ ঘাটতি মেটাতে রিজার্ভ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। সরবরাহ না বাড়লে সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করেন তারা।

জানা গেছে, প্রতি মাসে বিপুল অঙ্কের এলএনজি আমদানির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে রাসায়নিক সার ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হচ্ছে। এর ফলে আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) দায় বেড়ে হয়েছে ১৪৪ কোটি ডলার। সব মিলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এদিকে প্রায় প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮ শতাংশ, যেখানে গত বছরের একই সময়ে ছিল প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ। আর মাস হিসাবে গত ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৩৫ শতাংশ, যেখানে আগের বছরের ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ।

সূত্র জানায়, গত বছরের শুরু থেকেই কমতে শুরু করেছে রিজার্ভের পরিমাণ। ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত তহবিলের সংস্থান না করেই অস্বাভাবিকভাবে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে থাকে। ফলে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এলসির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে ব্যাংকগুলো। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ সময় পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে প্রায় ১৫৫ কোটি ডলার। রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে গিয়ে টানা পড়েছে রিজার্ভে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে বিক্রি করেছে ৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর বিক্রি করেছিল ২৩১ কোটি ডলার। ডলার বিক্রির পরও প্রতি ডলারে ১০ পয়সা বেড়েছে। গত বৃস্পতিবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১৮৫ কোটি ডলার।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যেখানে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৩৬ কোটি ডলার। ২০১৭ সালের জুনে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৩০০ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। ওই বছরের জুন শেষে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৪৯ কোটি ডলার। এরপর থেকে ৩ হাজার কোটি ডলারের ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে।

এদিকে ডলারের মূল্য আগের স্থানে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। যেমন বছরখানেক আগেও যেখানে প্রতি ডলার পেতে ৭৭ থেকে ৭৮ টাকা ব্যয় হতো, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৮৪ টাকা ১০ পয়সা। তবে বাজারে এই দামে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতি ডলার পেতে ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা ব্যয় হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের তুলনায় আমদানি বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাপ বাড়ে। সুদসহ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। এসব কারণে রিজার্ভ কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম ৬ মাসে আমদানিতে ৩ হাজার ৭ কোটি ডলারের ব্যয় হয়েছে। বর্তমানের এ আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৭৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর আমদানি বেড়েছিল ২৫.২৩ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার এবং রেমিট্যান্স এসেছে ৭৪৯ কোটি ডলারের। রপ্তানি বেড়েছে ১৪.৪২ শতাংশ। রেমিট্যান্স বেড়েছে ৮.০৬ শতাংশ।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=160008&cat=10