১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১১:৫১

জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮

জারির ৮ মাসের মাথায়ও কার্যকর না করেই আরো সংশোধনী আসছে

গত বছরের ১২ জুন জারি করা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ কার্যকর করার আগেই আবারো কাটা-ছেঁড়া শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ওই নীতিমালা সংশোধনী কমিটি গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত একাধিক দফায় বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে ওই নীতিমালার বেশ কিছু ধারা-উপধারা সংশোধনীর জন্য কমিটি একমত হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরো এক-দু’দফা বৈঠকের পর সব কিছুই চূড়ান্ত হবে বলে জানান কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আরো একটি বৈঠক করেই সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে। সহসাই সব কিছু জানতে পারবেন।

বৈঠকের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, সংশোধিত জনবলকাঠামোর বেশ কিছু ধারা-উপধারায় শব্দগত পরিবর্তন, ও কিছু সংশোধনী আনা হবে। কোনো কোনো ধারায় শব্দগত বিন্যাসও করা হবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সর্বোাচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন নিয়ে আবারো পরিপত্র জারি করে সংশোধনীগুলোর বাস্তবায়নের আদেশ দেয়া হবে। এ সংশোধিত নীতিমালার আলোকেই আগামী দিনে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির জন্য সুপারিশ করা হবে।

নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত বছরের ১২ জুন ‘জনবলকাঠামো ও এমপিভুক্তির নীতিমালা’ জারি করা হয়। এ নীতিমালার ভিত্তিতেই এখন থেকে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। তবে নীতিমালা জারির পরপরই আপত্তি জানিয়ে আসছে মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষক সংগঠন। এ ছাড়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিভুক্তির দাবিতে গত কয়েক বছর লাগাতার অনশন-অবস্থান ধর্মঘটকালে ‘নতুন নীতিমালা’র ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন।

শিক্ষক সংগঠনগুলো এ নীতিমালার বেশ কিছু ধারা-উপধারা নিয়ে আপত্তি ও সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন। নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের নেতারা বলেন, যে নীতিমালা জারি করা হয়েছে তার নির্দেশনা ও তারই আলোকে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে গেলে ৫০০ স্কুল-কলেজও এমপিওভুক্ত হবে না।

‘নতুন নীতিমালার যে বিষয় নিয়ে সব চেয়ে বেশি আপত্তি উঠেছে তা হচ্ছে ডিগ্রি ও স্নাতক পর্যায়ের কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগের যোগ্যতা এবং গ্রেড নির্ধারণ নিয়ে। এটিতে যে নির্দেশনা রয়েছে তাতে, অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের (২০১৮) আগস্টেই বেসরকারি কলেজে ও ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে স্থগিতাদেশ দিয়ে পরিপত্র জারি করে মন্ত্রণালয়।

গত ১২ জুন ‘জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮-তে বলা হয়েছে, নতুন নীতিমালার আলোকেই কাম্য যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি করা হবে। একসাথে সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য বিবেচনায় নেয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করা হবে। নীতিমালার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাজেটে ভারসাম্য রক্ষায় আগামী পাঁচ বছরে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্ত করা হবে।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস ছিল, বাজেটে এমপিভুক্তির জন্য বরাদ্দ নির্ধারিত না থাকলেও ‘থোক বরাদ্দ’ থেকে সর্বাধিক প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্ত করা হবে। বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখেই নীতিমালাও শিথিল করা হতে পারে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য নয়া দিগন্তকে জানান। সে আলোকেই নীতিমালায় সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ কারণেই বৈঠকে এসব নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) জাবেদ আহমেদ বলেন, আগামী একটি বৈঠকেই পুরো নীতিমালার ব্যাপারে সব কিছু চূড়ান্ত করা হবে। এর পরই অনুমোদনের জন্য উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন পেলেই এটিকে বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা চাওয়া হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/387341