১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১২:১৩

বাংলাদেশকে মিয়ানমার সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জাতিসংঘের

মিয়ানমারে নতুন করে শুরু হওয়া সহিংসতার জেরে যেসব মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চাইছে তাদেরকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। গত শুক্রবার সংস্থাটি এক বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানায়।

ইউএনএইচসিআর বিবৃতির মাধ্যমে মিয়ানমারে সম্প্রতি শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে দেশটিতে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা এমন বিপর্যয় পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন প্রদেশে নতুন করে সহিংসতা শুরু হলে গত কয়েক দিনে বান্দরবানের সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের প্রায় দেড়শ’ নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে। নতুন করে আসা এসব মানুষ দেশটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে।

জেনেভায় অবস্থিত সদর দফতরে সংস্থাটির মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বলেন, মিয়ানমারের ওসব রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতার কারণে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে দেশের ভেতরে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে কিংবা ভয়ে দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছেন অনেকে। আর এ কারণে যে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।

সংস্থাটির মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বাংলাদেশের উদ্দেশে বলেন, মিয়ানমারে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে যেসব মানুষ আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছে তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমরা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু করলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে আসা বৌদ্ধদের নতুন করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মিয়ানমার সংলগ্ন সীমান্ত প্রায় বন্ধ করে দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাখাইন রাজ্য থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে বেশ কয়েকটি নতুন সেনাঘাঁটি তৈরি করছে মিয়ানমার। দেশটির এ পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকর্তা ইয়াংঘি লী শুক্রবার নিউইয়র্কে এ উদ্বেগের কথা জানান।
নিউইয়র্কে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন (এফআরসি) আয়োজিত এক সভায় তিনি আরও বলেন, রাখাইন রাজ্য থেকে এখনও মুসলমানদের তাড়ানো হচ্ছে।

সেনাবাহিনীর সাজোঁয়া যান রাতের আধারে রাখাইনে অভিযান চালাচ্ছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা অভিযোগ করছে। অনেকে গোলাগুলির শব্দে আতংকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে।
রাখাইন থেকে মুসলমান ছাড়া অন্য নৃগোষ্ঠীর লোকজনও পালাতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৬২ হাজার মানুষ মিয়ানমারের মধ্যেই বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন লী।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের হামলা ও নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার খেকে নতুন করে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রেবশ করেছে।

http://www.dailysangram.com/post/364509