৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ১০:৪৪

চমেক হাসপাতাল

পাঁচ শতাধিক অবৈতনিক কর্মচারী কাটছে রোগীর পকেট!

সরকারি বেতনভোগী চতুর্থ শ্রেণির সাড়ে ৩ শতাধিক কর্মচারী রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পাশাপাশি আরো ৫ শতাধিক অবৈতনিক কর্মচারী কাজ করছে এখানে। যাদের বেতনের টাকা আসছে রোগীদের পকেট থেকেই।

অবৈতনিক কর্মচারীরা বকশিশের নামে রোগী ও স্বজনদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে। টাকা না পেলে দুর্ব্যবহারের সঙ্গে রোগীদের নানাভাবে হয়রানি করছে। কর্তৃপক্ষ এসব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

সূত্র জানায়, একহাজার ৩১৩ শয্যার চমেক হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী রয়েছেন ৩৫১ জন। কিন্তু হাসপাতালে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন তিন হাজারেরও বেশি রোগী।

রোগীর তুলনায় জনবল কম হওয়ায় এসব কর্মচারীকে নিয়োগ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতাল থেকে তাদের কোনো বেতন দেয়া হয় না।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাদের বেতন রোগীদের কাছ থেকে আদায়ের পথ তৈরি করে দেয়। এই সুযোগে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার-হাজার টাকা। রোগীদের ট্রলি বা চেয়ারে করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা, সিটের ব্যবস্থা করাসহ নানা কাজ করে রোগী প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব কর্মচারী। এভাবে প্রত্যেক কর্মচারীর দিনে আয় ২-৩ হাজার টাকা, মাসে ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। যা সরকারি বেতনের চেয়েও অনেক বেশি। আর এই টাকা আদায়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা।

হাসপাতালে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর স্বজন আরাফাত হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে চাচাকে নিয়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। যে রোগীকেই ট্রলি করে নিয়ে আসা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে দুই-তিনশ’ এমনকি ৫০০ টাকা দাবি করছে এসব কর্মচারী। টাকা না দিলে সিটে রোগীকে রাখতে দেবে না বলে হুমকি দেয়। অসহায় রোগীরা তাদের টাকা দিতে বাধ্য হন।

রোগীর কয়েকজন স্বজন জানান, কর্মচারীরা নানা অজুহাতে রোগী ও স্বজনদের হয়রানি করে। স্বজনরাও যদি রোগীর সেবা করতে চায় তাতেও নানা অজুহাত দেখিয়ে হয়রানি করে তারা। বলতে গেলে-টাকা না দিলে সেবা মেলে না। তারা রোগীদের আনা-নেয়ার হিসাব করে ফ্লোর অনুযায়ী। যত উপরে রোগীকে উঠাবে, তত বেশি টাকা তাদের দিতে হবে।
তাদের অভিযোগ, অবৈতনিক কর্মচারীরা হাসপাতালে সিট বাণিজ্য, ওষুধ চুরি, দালালদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করানোসহ নানা অপরাধে লিপ্ত। সিন্ডিকেটের যোগসাজশে বিভিন্ন অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ করছে অবৈতনিক কর্মচারীরা। প্রতিদিন যে টাকা পায় তার একটি অংশ ওই সিন্ডিকেটের কাছে চলে যায়।

হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি রত্তশন আলী বলেন, অবৈতনিক কর্মচারীর কারণে প্রতিদিন আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করে আমরাই এসব করছি। এসব বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি বলেন, হাসপাতালের কাগজ অনুযায়ী এসব কর্মচারীর সংখ্যা ৩০০ হলেও বাস্তবে এ সংখ্যা পাঁচশতাধিক। এসব কর্মচারীরা বেশির ভাগ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ট্রলি বা চেয়ারে করে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নিয়ে যান। তারপর রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে সুযোগ বুঝে দুই থেকে পাঁচশ’ টাকা দাবি করে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বলেন, রোগীর সেবা করে যাবেন, আর কোনো রোগী যদি সম্মানী দিতে চান শুধু তাই নিবে এই শর্তে নিয়োগ দেয়া হয় তাদের। কিন্তু টাকা হাতিয়ে নেয়ার কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নেয়ার বিধান করে দেয়। তাও মানছে না অবৈতনিক কর্মচারীরা। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=158598&cat=6