৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ১০:৩৯

শ্রমিক আন্দোলনের জেরে ২৭ কারখানায় ৭৫৮০ জন ছাঁটাই

বাংলাদেশে বেতন বাড়ানোর দাবিতে সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলন শেষ হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ কারখানা থেকে সাড়ে ৭ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নেয়ার কারণেই এমন ছাঁটাই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের প্রধান বাবুল আখতার বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ২৭ কারখানা থেকে অন্তত ৭ হাজার ৫৮০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

মঙ্গলবার শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, আন্দোলনের অংশ নেয়ায় এইচ অ্যান্ড এম ও নেক্সটসহ অন্তত তিনটি ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি কারখানায়ও সম্প্রতি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে রাজধানী ও এর আশপাশের অঞ্চলগুলোতে আন্দোলনে নামেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। শীর্ষ কাগজ।

বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের প্রধান কাজী রুহুল আমিন জানান, যেসব শ্রমিক স্লোগান দিয়েছে বা আন্দোলনের সময় কাজ বর্জন করেছে, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ও যাদের কোনো রকম শ্রমিক সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, তারা এখন চাকরি হারাচ্ছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যেসব শ্রমিকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় ভাঙচুর ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তাদের এখন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
এ দিকে কয়েকজন শ্রমিক বলেছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছেন। কিন্তু অন্য শ্রমিকদের একজোট করার প্রচেষ্টা চালানোর কারণে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারীশ্রমিক বলেন, (ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের) তালিকায় আমার নাম শীর্ষে দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম।

তিনি বলেন, বিক্ষোভের সময় আমি প্রতিদিন কাজে গেছি। আমি কখনোই কোনো ভাঙচুর বা অপরাধকর্মের সাথে জড়িত ছিলাম না। আমার ও আমার সহকর্মীদের নাম তালিকায় আসার পেছনে কারণ ছিল, আমরা একটি জোট গঠনের চেষ্টা করছিলাম।

বাংলাদেশের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক শিল্প রফতানিকারক দেশ। বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে তৈরী পোশাক শিল্প থেকে। প্রতি বছর গড়ে পোশাক শিল্পের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশের আয় হয় প্রায় তিন হাজার কোটি ডলার।

এ দিকে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা মঙ্গলবার বলেন, ক্রনি গ্রুপ, ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেড ও মেট্রো নিটিং অ্যান্ড ডায়িং মিলস লিমিটেড থেকে সম্প্রতি শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সুইডেনভিত্তিক এইচ অ্যান্ড এম ও ব্রিটিশ ব্র্যান্ড নেক্সটের জন্য পোশাক তৈরী করে থাকে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে চেয়ে ক্রনি ও মেট্রোর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ইস্ট ওয়েস্টের প্রধান প্রশাসক আমিনুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের সময় ৭ জানুয়ারি বেশ কয়েকজন শ্রমিক কারখানায় হামলা চালিয়েছে ও ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর সব মিলিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের আট শতাধিক শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।

ইস্ট ওয়েস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান কোনো অবৈধ বা অন্যায্য কাজ করছে না। তিনি বলেন, আমরা জানি, এমনটি করলে আমাদের ক্রেতারা এটি হালকাভাবে নেবে না। তারা এটি পছন্দ করবে না।

বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এক ই-মেইল বার্তায় নেক্সট ব্র্যান্ড জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি স¤পর্কে অবগত। বাংলাদেশে তাদের নিজস্ব অডিট কর্মচারীরা এ বিষয়ে তদন্ত করছে। এইচ অ্যান্ড এম জানিয়েছে, তারা অ্যাসোসিয়েশনের স্বাধীনতাকে আলোচনার অযোগ্য মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনা করে। তারা বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে ঘটা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

এ ছাড়া জারা, ম্যাঙ্গো, গেস ও সাকসসহ অন্যান্য ইউরোপীয় ও মার্কিন ব্র্যান্ডের সাথে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/387036