৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৮

আধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণে খরচ হচ্ছে দ্বিগুণ

প্রকল্পে অর্থায়নকারী বিশ্বব্যাংকের অর্থছাড়ে বিলম্ব, পরামর্শক নিয়োগে সৃষ্ট আপত্তি নিরসনে দেড় বছর অতিক্রম, ডিজাইন করতে সময় বেশি লাগার কারণে আধুনিক খাদ্যগুদাম বা সংরক্ষণাগার বা স্টিলের সাইলো নির্মাণ নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। ৫ বছর ধরে ঢিমেতালে চলছে কার্যক্রম। ৫ বছরে অগ্রগতি মাত্র ৪০ শতাংশ। এখন নতুন করে বেশ কিছু খাত যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ৯৭৯ কোটি ৯৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে দ্বিগুণে বেড়ে চার হাজার ১৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় দাঁড়াচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের জুন থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধন করা হয়; যা মূল্যায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, ইতোমধ্যে আড়াই লাখ হাউজ সাইলো হস্তান্তর সম্পন্ন করা হয়েছে। অর্থ ছাড়সহ অন্যান্য কাজ বিলম্ব না হলে প্রকল্প নির্ধারিত সময়েই সমাপ্ত করা সম্ভব হতো।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগপরবর্তী সময়ে খাদ্যনিরাপত্তা, বীজ, শস্য সংরক্ষণ এবং গুণগত ও পুষ্টিমান বজায় রাখার জন্য আটটি আধুনিক খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৪ সালে একনেক থেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২০ সালের জুনে এই খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। বিশ্বব্যাংক প্রথম পর্যায়ে বলেছিল দুই দফায় ১৪টি গুদাম নির্মাণ করতে সহায়তা দেবে। পরে তারা জানিয়ে দেয় ৮টির বেশি গুদামের জন্য টাকা দেবে না। এতে বাধ্য হয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিবর্তন করে ৮টি করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ হাউজহোল্ড সাইলো বিতরণ করা হবে অর্থাৎ পারিবারিক পর্যায়ে সাইলো বিতরণের জন্য এ প্রকল্প। প্রতি পরিবারকে ১০০ কেজি চাল সংরক্ষণের জন্য ফুড গ্রেড প্লাস্টিক কন্টেইনার দেয়া হবে। প্রতিটি হাউজহোল্ডার সাইলোর দাম ৩০ ডলার। কিন্তু সরকার এটা বিতরণ করবে ১০ ডলারে। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় এই প্রকল্পের ঋণ অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের মূল কাজ ৫ দশমিক ৩৫ লাখ টন ধারণক্ষমতার ৮টি আধুনিক স্টিল সাইলো (চাল ও গম) নির্মাণ। ৮টি খাদ্যগুদাম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৯১৯ কোটি ৯৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের কারণে প্রকল্প শুরু করতে বিলম্ব হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

ডিপিপিতে দেয়া তথ্যানুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে ৮টি সাইলো এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি ৬টি সাইলো নির্মাণের সুপারিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে করা হয়। প্রথম পর্যায়ে চলমান সাইলোর মধ্যে ২টি গম এবং ৬টি চাল সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ছিল। সংশোধিত প্রকল্পে বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ ১৯টি জেলার ৭৩টি উপজেলার প্রান্তিক ও ভূমিহীন কৃষক সমবায় সমিতির সদস্য ও মহিলাখানা প্রধান জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মাত্র ৮০ টাকা মূল্যে এই সাইলো বিতরণ করা হবে।

পরিচালক জানান, প্রকল্পে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ের দফতরসহ এক হাজার ৬৪০টি স্থাপনায় আইসিটি যন্ত্রপাতি স্থাপন। এ জন্য ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ঢাকাস্থ খাদ্য অধিদফতরের ক্যাম্পাসে একটি ১৫ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি স্থাপনায় ১৫টি ডিজিটাল ট্রাক স্কেল ক্রয় এবং স্থাপন আর খাদ্য অধিদফতরের ৬টি আঞ্চলিক অফিসে ৬টি আধুনিক ফুড টেস্টিং ল্যাবরেটরি নির্মাণ কাজ রয়েছে প্রকল্পে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মার্চ ’১৮ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৩৯ শতাংশ। যেখানে ব্যয় হয়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বা ২১৮ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন পেলেও একটি প্যাকেজের ঠিকাদার মেসার্স তমা কনস্ট্রাকশন ও ফ্রেইম জেভির সাথে চুক্তি হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। আরো দুটি প্যাকেজের চুক্তি এপ্রিল’১৮ পর্যন্ত হয়নি। তবে সাইলো নির্মাণের জন্য ভূমি উন্নয়ন, সাইট অফিস ভবন নির্মাণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ বাবদ ব্যয় হয়েছে মার্চ’১৮ পর্যন্ত ৫১ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মো: গাজীউর রহমান প্রকল্প প্রসঙ্গে জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থছাড়ে বিলম্ব, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে আপত্তি নিরসন, ডিজাইন করতে সময় অতিবাহিত হওয়ার কারণেই প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়। পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি বিশ্বব্যাংক থেকে অনুমোদন নিতে দেড় বছর পার হয়। তিনি বলেন, এখন প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। গত জুনে যেখানে আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, সেটা ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৪০ শতাংশ বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন অঙ্গ নতুন করে সংযোজন করার কারণেই প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুণ হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট উইং সূত্র জানায়, গত জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ১৮৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা; যা বরাদ্দের ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। অথচ ইতোমধ্যে প্রায় ৫ বছর সময় অতিক্রান্ত হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/386522