৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ১০:১৯

মূলধন সংরক্ষণে পিছিয়ে পড়ছে ব্যাংকিং খাত

লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ হচ্ছে না ; আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা

মূলধন সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার পাঁচ বছরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে এ বছরই। কিন্তু এখনো মূলধন সংরক্ষণের নির্ধারিত সীমার ধারে কাছেই যেতে পারছে না অনেক ব্যাংক। এমনকি সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১১ শতাংশের নিচে। এমনি পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মধ্যে নির্ধারিত সীমায় মূলধন সংরক্ষণ করা মোটেও সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সীমার মধ্যে মূলধন না আনতে পারলে বৈদেশিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশের ব্যাংকিং খাত পিছিয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ায় ব্যাংকিং খাতে ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর এ ঋণ খেলাপির কারণে ঋণের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ এবং কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। আর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকের ঝুঁকি সহনক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকি। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য রোডম্যাপ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালে দেয়া এ রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ বছরের সময়সীমার চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টম্বরে মূলধন সংরক্ষণ হয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে। অথচ এ সময়ে হওয়ার কথা ছিল সোয়া ১২ বারো শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক এজন্য প্রধান বাধা হিসেবে দেখছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশঙ্কা, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিব্যয় বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণের আধিক্য বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোতে বেশি। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। আর এর পুরো প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংকিং খাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে পুরো ব্যাংকিং খাত গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে।

ব্যাংকভিত্তিক গত সেপ্টেম্বরে মূলধন সংরক্ষণের দিক থেকে ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে। আর ৯টি বিদেশী ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করেছে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হারে। আর বিশেষায়িত দুই ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ঋণাত্মক ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ হারে।

মূলধন সংরক্ষণের এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি বছর শেষে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে প্রায় এক বছর আগেই। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সামগ্রিক প্রভাব গোটা ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, সেপ্টেম্বর শেষে ৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ১৯

হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ছয় ব্যাংকেরই প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি রাতারাতি উন্নীত হওয়া সম্ভব নয়। বরং ব্যবসাবাণিজ্য মন্দা ও নানা কারণে সরকারি ব্যাংকসহ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ না কমে বরং বেড়ে যেতে পারে। আর এটা হলে প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের মূলধন সংরক্ষণ কিভাবে সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হবে। ফলে পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। এতে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হবে এবং ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্কতার সাথে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

মূলধন সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার পাঁচ বছরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে এ বছরই। কিন্তু এখনো মূলধন সংরক্ষণের নির্ধারিত সীমার ধারে কাছেই যেতে পারছে না অনেক ব্যাংক। এমনকি সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১১ শতাংশের নিচে। এমনি পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মধ্যে নির্ধারিত সীমায় মূলধন সংরক্ষণ করা মোটেও সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সীমার মধ্যে মূলধন না আনতে পারলে বৈদেশিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশের ব্যাংকিং খাত পিছিয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ায় ব্যাংকিং খাতে ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর এ ঋণ খেলাপির কারণে ঋণের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ এবং কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। আর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকের ঝুঁকি সহনক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকি। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য রোডম্যাপ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালে দেয়া এ রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ বছরের সময়সীমার চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টম্বরে মূলধন সংরক্ষণ হয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে। অথচ এ সময়ে হওয়ার কথা ছিল সোয়া ১২ বারো শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক এজন্য প্রধান বাধা হিসেবে দেখছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশঙ্কা, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিব্যয় বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণের আধিক্য বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোতে বেশি। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। আর এর পুরো প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংকিং খাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে পুরো ব্যাংকিং খাত গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে।

ব্যাংকভিত্তিক গত সেপ্টেম্বরে মূলধন সংরক্ষণের দিক থেকে ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে। আর ৯টি বিদেশী ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করেছে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হারে। আর বিশেষায়িত দুই ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ঋণাত্মক ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ হারে।

মূলধন সংরক্ষণের এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি বছর শেষে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে প্রায় এক বছর আগেই। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সামগ্রিক প্রভাব গোটা ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, সেপ্টেম্বর শেষে ৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ছয় ব্যাংকেরই প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি রাতারাতি উন্নীত হওয়া সম্ভব নয়। বরং ব্যবসাবাণিজ্য মন্দা ও নানা কারণে সরকারি ব্যাংকসহ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ না কমে বরং বেড়ে যেতে পারে। আর এটা হলে প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের মূলধন সংরক্ষণ কিভাবে সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হবে। ফলে পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। এতে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হবে এবং ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্কতার সাথে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

মূলধন সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার পাঁচ বছরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে এ বছরই। কিন্তু এখনো মূলধন সংরক্ষণের নির্ধারিত সীমার ধারে কাছেই যেতে পারছে না অনেক ব্যাংক। এমনকি সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১১ শতাংশের নিচে। এমনি পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মধ্যে নির্ধারিত সীমায় মূলধন সংরক্ষণ করা মোটেও সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সীমার মধ্যে মূলধন না আনতে পারলে বৈদেশিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশের ব্যাংকিং খাত পিছিয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ দেয়ায় ব্যাংকিং খাতে ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। বাড়ছে খেলাপি ঋণ। আর এ ঋণ খেলাপির কারণে ঋণের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ এবং কমছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। আর সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকের ঝুঁকি সহনক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকি। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য রোডম্যাপ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালে দেয়া এ রোডম্যাপ অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ বছরের সময়সীমার চার বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টম্বরে মূলধন সংরক্ষণ হয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে। অথচ এ সময়ে হওয়ার কথা ছিল সোয়া ১২ বারো শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক এজন্য প্রধান বাধা হিসেবে দেখছে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশঙ্কা, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিব্যয় বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রোডম্যাপ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে ঊর্ধ্বমুখী খেলাপি ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণের আধিক্য বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোতে বেশি। এ কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। ফলে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। আর এর পুরো প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংকিং খাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে পুরো ব্যাংকিং খাত গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ হারে।

ব্যাংকভিত্তিক গত সেপ্টেম্বরে মূলধন সংরক্ষণের দিক থেকে ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে। আর ৯টি বিদেশী ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করেছে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ হারে। আর বিশেষায়িত দুই ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ঋণাত্মক ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ হারে।

মূলধন সংরক্ষণের এ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি বছর শেষে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছেছে প্রায় এক বছর আগেই। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সামগ্রিক প্রভাব গোটা ব্যাংকিং খাতের ওপর পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, সেপ্টেম্বর শেষে ৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি ছয় ব্যাংকেরই প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি রাতারাতি উন্নীত হওয়া সম্ভব নয়। বরং ব্যবসাবাণিজ্য মন্দা ও নানা কারণে সরকারি ব্যাংকসহ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ না কমে বরং বেড়ে যেতে পারে। আর এটা হলে প্রভিশন ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের রোডম্যাপ অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের মূলধন সংরক্ষণ কিভাবে সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারলে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ মূলধন ঘাটতি থাকলে ব্যাংকিং খাতের রেটিং খারাপ হবে। ফলে পণ্য আমদানিতে দেশীয় ব্যাংকগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে। এতে থার্ডপার্টি গ্যারান্টির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হবে এবং ব্যয় স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাবে। পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে ব্যাংকগুলোকে আরো সতর্কতার সাথে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/386285/