৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ১০:১৭

ধর্ষণ লাশ এসিড

নিখোঁজের ৬ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীর লাশ গোয়াইনঘাটে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় গৃহকর্মীকে এসিড নিক্ষেপ নোয়াখালীতে না’গঞ্জে দুই বোনকে গণধর্ষণ মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন

দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন ধর্ষণ লাশ উদ্ধার ও এসিড নিক্ষেপের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জে দুই বোনকে গণধর্ষণ মামলায় গতকাল ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় পৃথক স্থান থেকে দু’টি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন বালুরমাঠ থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিল্লাল হোসেন (১৮) নামে এই যুবক ভোলা সদর উপজেলার মেদুয়া এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে। রূপগঞ্জে ইফসিবি এক্সপ্রেস নামে একটি কোম্পানিতে চাকরি করত।
রূপগঞ্জ থানার এসআই বাদশাহ আলম জানান, উপজেলার কাঞ্চন বালুরমাঠে লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তকে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করে জানা যাবে।

অপর দিকে সোনারগাঁয়ে অজ্ঞাত (৩৫) এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরহোগলা এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। লাশটির নাখ ও মুখ থেঁতলানো। লাশের পরণে ছিল একটি ধূসর রঙয়ের জ্যাকেট, নিচে সবুজ রঙয়ের বাংলাদেশ লেখা হাফ হাতা গেঞ্জি এবং ব্লু রঙয়ের জিন্সের প্যান্ট।

সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরহোগলা বালুর ঘাট এলাকায় নদীতে একটি অজ্ঞাত লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেন এলাকাবাসী। পরে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কে বা কারা যুবককে অন্যত্র হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। লাশটি ভাসতে ভাসতে সোনারগাঁয়ের চরহোগলা এলাকায় এসেছে।

গোয়াইনঘাট (সিলেট) সংবাদদাতা জানান, সিলেটের গোয়াইনঘাটে নিখোঁজের ছয় ঘণ্টা পর দেলোয়ার আহমেদ সাহেল (৬) নামের এক স্কুল শিক্ষার্থীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি কবরস্থানের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত সাহেল উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের ফেনাইকুনা গ্রামের সোয়াব আলীর ছেলে ও স্থানীয় লাবু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্র। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সাহেল বাড়ির পাশেই খেলাধুলা করছিল। খেলাধুলার একপর্যায়ে হঠাৎ বেলা ১টার দিকে সে নিখোঁজ হয়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি কবরস্থানের কাছে এলাকাবাসী সাহেলের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার উত্তর সার্কেল নজরুল ইসলাম, ওসি গোয়াইনঘাট মো: আব্দুল জলিলসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও লাশ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। ওসি গোয়াইনঘাট মো: আব্দুল জলিল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে সিওমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে এবং আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, জেলার মাইজদীর হাউজিং এলাকায় রাহেনা বেগম (১৯) নামে এক গৃহকর্মীকে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় বাসায় আটকে রেখে অ্যাসিডে শরীর ঝলসে দেয়া হয়েছে। পরে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট ব্রিজের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে সোমবার রাতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে রাতে তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই জাকির হোসেন বাদি হয়ে নোয়াখালী সুধারাম থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। সুধারাম মডেল থানার পুলিশ গত সোমবার রাতে মো: সাহাব উদ্দিন, মিজানুর রহমান সুমন, আলেয়া বেগম ও রীনা আক্তার নামে চারজনকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল গ্রেফতারকৃত চার আসামিকে নোয়াখালী ১ নম্বর আমলি আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ।

জানা গেছে, জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের চরনঙ্গলিয়া গ্রামের নির্যাতিতা রাহেনা আক্তারকে তাদের প্রতিবেশী রিনা আক্তার প্রায় চার মাস আগে বাসায় কাজ দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে ফুসলিয়ে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী নিয়ে আসে। প্রথম মাস মাইজদী নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রিনার বাসায় ছিল। পরে রিনা তার পরিচিত আলেয়া বেগম নামের এক মহিলার বাসায় দেয়। সেখানে তাকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করায় সেখান থেকে তিন মাস আগে বাসা পরিবর্তন করে শহরের বালুরমাঠসংলগ্ন মাইজদী হাউজিং এস্টেটে একটি নতুন বাসা ভাড়া নেয়া হয়। সে থেকে দুই মাস ভালোভাবেই ওই বাসায় কাজ করছিলেন রাহিন। কিন্তু মাসখানেক আগে গৃহকর্ত্রী তাকে বাসায় অসামাজিক কাজ করার জন্য চাপ দেন। এতে রাজি না হলে তার ওপর মারাত্মক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতিতা রাহেনা জানান, তাকে রড দিয়ে পিটিয়ে পুরো শরীরে আঘাত করা হয়। মুখের ভেতর ওপরের পাটির বেশ কয়েকটি দাঁত তুলে ফেলা হয়। তারপরও সে অনৈতিক কাজে রাজি না হওয়ায় গত প্রায় ৮-১০ দিন আগে রাতের বেলায় তার শরীরে অ্যাসিড ঢেলে দেয়া হয়। এতে তার বুক, পেট, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। পরে ঝলসে যাওয়া শরীরের অংশ থেকে পচন ধরলে তাকে বাসে চট্টগ্রাম নিয়ে কালুরঘাট এলাকার একটি ব্রিজের নিচে ফেলে আসা হয়। এ দিকে গুরুতর অসুস্থ ভিকটিমকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো পরামর্শ দেন। মাইক্রোতে রাহেনা বেগমকে ঢাকা নেয়ার জন্য যখন প্রস্তুতি নেয়া হয়। তখন সুধারাম থানার পরিদর্শক সাইফুল আলম মামলার প্রস্তুতি নেয়ার নামে অ্যাম্বুলেন্সসহ অসুস্থ মেয়েটিকে সুধারাম থানার সামনে রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখেন। শুধু তাই নয়, পরিদর্শক সাইফুল বলে ওঠেন গ্রেফতারকৃত চারজনের মধ্যে একজন নিরপরাধ। তদন্ত ছাড়া কিভাবে বলছেন নিরপরাধ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।

সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি হাসপাতালে গিয়ে ভিকটিমকে দেখে এসেছেন। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে সুমন ও সাহাবুদ্দিনসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন আসামিদের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে দুই বোনকে গণধর্ষণ মামলার রায়ে পাঁচজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। সাজা প্রাপ্তরা হলো- নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মঙ্গলেরগাঁও এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে শাহ আলম, একই এলাকার আবদুল খালেকের তিন ছেলে- খোকন, এমদাদ, ইকবাল এবং হাবিবুল্লার ছেলে জিয়া।

এ মামলায় মঙ্গলেরগাঁওয়ের হাকিম মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম খালাশ পেয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় সাজাপ্রাপ্ত শাহ আলম আদালতে উপস্থিত ছিল। অন্যরা পলাতক রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ আদালতের স্পেশাল পিপি রকিব উদ্দিন জানান, লালমনিরহাট থেকে দুই বোন সপরিবারে সোনারগাঁয়ে চাচার বাড়িতে বেড়াতে এসে ২০১০ সালের ২৮ মে গণধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে সোনারগাঁও থানায় ধর্ষিতাদের মধ্যে একজন মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রায় ঘোষণা করেছেন।

গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে রায়ে মামলার আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তের নাম বিল্লাল ভূঁইয়া (৪৬) সে শ্রীপুর উপজেলার চিনাশুকানিয়া গ্রামের রহম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে। মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ মেজবাহ উদ্দিন এ রায় দেন।

গাজীপুর আদালত পরিদর্শক মো: রবিউল ইসলাম জানান, গত ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার চিনাশুকানিয়া এলাকায় স্থানীয় একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ওই ছাত্রী খেলাধুলা করতে অভিযুক্ত বিল্লাল ভূঁইয়ার বাড়িতে যায়। এ সময় বিল্লাল ভূঁইয়া মেয়েটিকে তার ঘরের মেঝে ঝাড়– দেয়ার জন্য ডেকে নেয়। মেয়েটি ঘরের মেঝে ঝাড়– দেয়ার সময় বিল্লাল ভূঁইয়া তার ঘরের দরজা বন্ধ করে মুখ চেপে শিশুটিকে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি প্রকাশ করলে মেয়েটিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে ধর্ষণের শিকার ওই শিশু ঘটনাটি তার মাকে জানায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদি হয়ে তিনজনকে আসামি করে ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে ওই বছরের ১৭ নভেম্বর বিল্লাল ভূঁইয়াকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় পুলিশ মামলার অন্য আসামি স্থানীয় রুবেল (২৩) এবং হেলাল খানকে (৪৯) মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

আদালতের বিচারক এম এ মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার এ রায় দেন। এ সময় মামলার আসামি বিল্লাল ভূঁইয়া আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে গাজীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি ফজলুল কাদের এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন নুরুল আমিন মামলা পরিচালনা করেন।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/386261