৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১:১১

আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বাড়ছে

আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আবার এরূপ কোনো কোনো ঘটনা জন্ম দিচ্ছে নানা রহস্যের। এসব ঘটনা আবার কোনো কোনো মানুষকে বিপদের মধ্যেও ফেলে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিচারহীনতার কারণেই এরূপ ঘটনা ঘটছে। ভিকটিম যদি মনে করে তিনি বিচার পাবেন না, তখনই তার দ্বারা এরূপ ঘটনা ঘটানো সম্ভব।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পিটিয়ে হত্যার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। সাধারণত দুর্বৃত্ত সন্দেহে এসব পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে। মাসে গড়ে ৫-৬ জনকে এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। আগে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটত। সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে এমন কয়েকজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। অথচ এই ঘটনাগুলো নিয়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। ধর্ষণ মামলার ওই আসামিরা কিভাবে খুন হলেন, কারা খুন করলেন ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গরুচোর সন্দেহে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গত শনিবার ভোরে উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কালিয়াকৈর থানার ওসি মো: আলমগীর হোসেন মজুমদার জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ও নওলা গ্রামে ট্রাক নিয়ে গরুচোরের একটি দল হানা দেয়। তারা ওই দুই গ্রামের মোহন আলী ও শাহজাহানের বাড়ি থেকে ছয়টি গরু চুরি করে। পরে তারা পাশের বরিয়াবহ গ্রামের আব্দুস সামাদের বাড়িতে হানা দিয়ে গরু চুরি করার চেষ্টা করে। এ সময় বাড়ির লোকজন টের পেয়ে চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা জেগে ওঠেন। তারা স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিলে গ্রামবাসী এগিয়ে আসেন। পরে দু’জনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়া হয়। গত এক বছরে অর্ধ শতাধিক লোক গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। একটি মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬ জন, মার্চে ৮ জন, এপ্রিলে ২ জন, মে মাসে ৫ জন, জুনে ২ জন, জুলাইয়ে ৪ জন, আগস্টে ৩ জন, সেপ্টেম্বরে ৬ জন, অক্টোবরে ৪ জন এবং নভেম্বরে ৩ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়। গত ৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে মহিউদ্দিন সোহেল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। সোহেল নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা বলে পরিচয় দিতেন। তিনি ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যবসায়ীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়।

সম্প্রতি ধর্ষণ মামলার তিন আসামি নিহত হয়েছে সাভার ও ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ায়। তিনটি ঘটনায় প্রায় একই স্টাইলে খুন হয়েছেন ধর্ষণ মামলার আসামি। তাদের গলায় ঝোলানো চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি ধর্ষণকারী। এটাই আমার পরিণতি।’ নতুন করে এই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। ঝালকাঠির রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ায় নিহত রাকিব ও সজল পাশর্^বর্তী পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানার একটি ধর্ষণ মামলার আসামি ছিল। রাকিব ও সজলের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, অভিযোগের তদন্তের আগেই রাকিব ও সজলকে হত্যা করা হয়েছে। সজলকে হত্যা করা হয় কাঁঠালিয়া থানা এলাকায়। আর রাকিবের লাশ উদ্ধার করা হয় রাজাপুর থেকে। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি তারা তদন্ত করছে। তবে ঘটনাটি রহস্যজনক। এভাবে কে বা কারা রাকিব ও সজলকে হত্যা করল সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এখনো অন্ধকারে। এর আগে সাভারে এক ধর্ষণ মামলার আসামির লাশ একইভাবে উদ্ধার করা হয়।

মানবাধিকারকর্মী সাইদুর রহমান বলেন, বিচারহীনতাই এই হত্যাকাণ্ডের কারণ। আইনের শাসন না থাকলে এরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাইদুর রহমান বলেন, বিচারহীনতার কারণে যারা অপরাধ করে তারাও মনে করে তাদের কিছু হবে না। ফলে তারা একের পর এক অপরাধ করেই যাচ্ছে। তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে এরূপ চলতেই থাকবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেল বলেছেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। এতে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। সরকারকে এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে হবে, যাতে এগুলো বন্ধ হয়। যে মানুষটি এভাবে নিহত হচ্ছে সে নিজেকে শোধরানোরও সময় পাচ্ছে না, যা ভীষণ অনৈতিক।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/386016