৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:৪৯

ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ৪৮ হাজার কোটি টাকা

রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ এখন ৪৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ২২২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর আগে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ কমেছে ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের সর্বশেষ খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ যাতে আর না বাড়ে সেজন্য আমরা একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি। এটি সফল হলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো নিজেরাও কর্মপরিকল্পনা নিচ্ছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে হাইকোর্টে একটি পৃথক বেঞ্চ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কাজ করছে। আমরা আশা করছি, অর্থবছর শেষে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমে একটি সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে ব্যাংকগুলোর প্রেরিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে একমাত্র জনতা ব্যাংক ছাড়া বাকি পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে। আলোচ্য সময়ে জনতা ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩০৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এটি এর আগের প্রান্তিকের তুলনায় দুই হাজার ৮৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেশি। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা।

অন্য দিকে বাকি পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে গত ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে এক হাজার ৫৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

একই সময়ে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৮৫৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে রূপালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৯৭০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১১৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

গত ডিসেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ৩৩৮ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৮৯ কোটি টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ২১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল আট হাজার ৮২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

গত ডিসেম্বর শেষে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ (বিডিবিএল)-এর খেলাপি ঋণ কমেছে ১৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৪৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ডিসেম্বর শেষে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দেশের ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক-ই হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। গত বছর নভেম্বরের শেষদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’-এর বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে (বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত) খেলাপি ঋণ (নন-পারফর্মিং লোন) বেড়ে যাওয়ায় তা দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

দেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯ হাজার ৮৭৬ কোটি টাকা। তবে অবলোপনকৃত ঋণ ধরলে তা দেড় লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে যাবে। কারণ অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। যা কিনা ব্যাংকগুলো খেলাপি তালিকায় স্থান না দিয়ে অন্য হিসাবে রেখে দিয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/385977