৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১২:০৭

সড়কে ঝরলো ১০ প্রাণ

প্রতিদিনই দেশের সড়ক-মহাসড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। গতকালও বিভিন্ন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১০ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫, মনোহরগঞ্জে ২, দোহার, তালতলী ও বাসাইলে একজন করে মারা যান। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও শতাধিক। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

দোহারে মাহেন্দ্রর ধাক্কায় প্রাণ গেল কলেজ ছাত্রের
দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার দোহার উপজেলায় মাটিভর্তি মাহেন্দ্র গাড়ির ধাক্কায় শাওন হোসেন (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ফুলতলা বাজারে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শাওন ফুলতলা ঢালারপাড় এলাকার মাঈন উদ্দিনের ছেলে এবং পদ্মা কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখার প্রথম বর্ষের ছাত্র বলে জানা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার বেলা ১১টার দিকে শাওন মোটরসাইকেল নিয়ে কলেজ থেকে বের হয়ে বাসায় যাওয়ার সময় কলেজের পার্শ্ববর্তী ফুলতলা তানশীর মার্কেটের সামনে মাটিবাহী একটি মাহেন্দ্র গাড়ি শাওনের মোটর সাইকেলকে ধাক্কা দেয়।

গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে সুযোগ বুঝে গাড়ির চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে শাওনের মরদেহ উদ্ধার করে। ঘাতক গাড়িটিও জব্দ করা হয়।

এদিকে চালককে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-দোহার সড়ক অবরোধ করেন।
তালতলীতে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

তালতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার তালতলী উপজেলায় মালবাহী পিকআপের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শনিবার রাতে আমতলী-তালতলী সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে জনতার সহায়তায় পুলিশ পিকআপটি জব্দ করে ও চালককে আটক করা হয়েছে। নিহত মোটরসাইকেল আরোহী হলেন মো. রিপন হাং (৪০) কলাপাড়া উপজেলার রশিদ হাওলাদারের ছেলে।

বাসাইলে ট্রাকচাপায় মেয়ে নিহত, মা আহত বাসাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের বাসাইলে বালু ভর্তি একটি ড্রাম ট্রাকের চাপায় জাহানারা (৫২) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহতের মা গুরুতর আহত হয়েছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপজেলার বাঐখোলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাহানারা (৫২) মির্জাপুরের বেলতুলী এলাকার হাসান আলী খানের মেয়ে। আহত হয়েছেন মা বাচাতন (৭০)।

চট্টগ্রামে একদিনে মহাসড়কে ঝরলো ৫ প্রাণ
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, চট্টগ্রামের পটিয়া ও সীতাকুণ্ডে একদিনেই মহাসড়কে ঝরলো পাঁচ প্রাণ। এতে আহত হয়েছেন আরো ২৪ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত চারজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

গতকাল সকালে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনা দুটি ঘটে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া উপজেলার ভাইয়ের দীঘিরপাড়ে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তিনজনের। তারা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৪০), মো. শাহজাহান (৩০), আরেক জনের নাম জানা যায়নি। তবে, তার বয়স আনুমানিক ১৫ বছর হতে পারে বলে জানান পটিয়া থানার এসআই মো. সোহাগ।

এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১৬ জন। আহতদের ১১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর ছিল বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জহিরুল হক জানান, গুরুতর আহত চারজনের মধ্যে মাইক্রোবাসচালক সাকিবকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। তিনি সাতকানিয়ার নতুনহাট এলাকার ইছাক মিয়ার ছেলে।

হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন- আলী আহমদ (৪০), ফরহাদ (২৫), ইরফান (৩৫), আহমদ হোসেন (৫৫), রাশেদুল ইসলাম (৩২), হাসান (২৫), দিলীপ (৫০), নাসির উদ্দিন (৪৫), তৌকির আহমদ (১৫), মো. রফিক (৪০) এবং আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবক।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, সকাল ৮টার দিকে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি ভাইয়ের দীঘির পাড়ে পৌঁছলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চট্টগ্রামগামী মাইক্রোবাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে ঘটনাস্থলে নিহত তিনজনসহ আরো ১১ জনকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করে।

একইভাবে সৌদিয়া পরিবহনের আরেকটি বাসের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা এলাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষে মিনি ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন (৪৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় আরো আটজন আহত হয়েছেন।

গতকাল ভোর সাড়ে ৪টার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে জানান সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ওয়াসী আজাদ।

তিনি জানান, কুমিরা এলাকায় চট্টগ্রামমুখী সৌদিয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মিনি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। তখন মিনি ট্রাকটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ট্রাক ড্রাইভার আনোয়ার হোসেন (৪৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এই ঘটনায় আহত হওয়া সৌদিয়া পরিবহনের ৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মনোহরগঞ্জে দুর্ঘটনায় নিহত ২
মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের মনোহরগঞ্জ উপজেলাধীন খিলা দক্ষিণবাজার নামক স্থানে যাত্রীবাহী অটোরিকশা ও মালবাহী কাভার্ডভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাথেরপেটুয়া থেকে লাকসামগামী সিএনজিচালিত একটি যাত্রীবাহী অটোরিকশা খিলা দক্ষিণবাজার নামক স্থানে এলে বিপরীতমুখী নোয়াখালীগামী মালবাহী কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতাল নেয়ার পথে একজন মৃত্যুবরণ করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহতদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

নিহতরা হলেন- মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাইকচাইল গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৭০) ও সরসপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে লাকসাম কলেজের ছাত্র রিয়াদ হোসেন (২০)। আহতরা হলেন- নাঙ্গলকোট উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের বেলঘর গ্রামের ড্রাইভার জসিম উদ্দিন (৪০), চাটিতলা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে মোহাম্মদ হিরণ (৩২), মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের বিনয়ঘর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (১৭), বাইশগাঁও গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে স্কুলছাত্র মোহাম্মদ আলী মিঠু (১৮)।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=157893