৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১২:০০

রাঘব বোয়ালরা কোথায়?

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান। জিজ্ঞাসাবাদ, বদলি। বেরিয়ে আসছে অবিশ্বাস্য সব কাহিনী। ছোট-খাটো কর্মচারীদের সম্পদের পাহাড় দেখে রীতিমতো তাজ্জব সবাই। বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের সারি, বাড়ি, গাড়ি, জাহাজ- কী নেই তাদের। নিজের সঙ্গে পরিবার, স্বজনদের নিয়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের সম্পদের ফিরিস্তি এখন মানুষের মুখে মুখে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের অ্যাকশনের প্রশংসা করছেন সবাই।

মন্ত্রণালয়ও বেশকিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা প্রশ্ন তুলছেন, যাদের ধরা হয়েছে বা যাদের সম্পদের সম্পর্কে জানা গেছে তারা সবাই কর্মচারী পর্যায়ের। নিচের স্তরে থেকে তারা এতো সম্পদ গড়তে পারলে ঊর্ধ্বতনরা তাহলে কী করেছেন। তারা কতোটা সম্পদের মালিক হয়েছেন অবৈধভাবে। স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির সেই রাঘববোয়ালদের ধরা হবে কবে? প্রশ্ন উঠেছে মন্ত্রণালয়ের যারা নেতৃত্বে ছিলেন তারা কি দায় এড়াতে পারেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দুর্নীতি দমনে বড় সাফল্য আশা করা যায় না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক রিপোর্টেও বলা হয়েছে, গতবছরের তুলনায় বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ওই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। একসময় বাংলাদেশ দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছিলো। সে বদনাম ঘুচালেও এখনো শীর্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর কাতারে নাম রয়েছে বাংলাদেশের। দুর্নীতির কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই মানুষকে হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়। টাকা ছাড়া আসলে কিছুই নড়ে না এখানে। বর্তমান সরকার এরই মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাড়ানোর পরও দুর্নীতি করলে তা সহ্য করা হবে না। বিভিন্ন দপ্তর পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। কেউ কেউ বলছেন জিরো না টলারেন্স হবে মাইনাস। কিন্তু সাম্প্রতিক স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে যেমন প্রশংসা করছেন অনেকে একই সঙ্গে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ওই খাতের নিচের স্তরের কর্মচারীরা যদি দুর্নীতি করে এতো সম্পদ গড়তে পারে তাহলে ঊর্র্ধ্বতনরা কি চোখ বুঝে ছিলেন। এও বলা হচ্ছে- চুনোপুঁটিদের এতো সম্পদ থাকলে রাঘববোয়ালদের সম্পদের পরিমাণ হয়তো আরও বেশি হবে। স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। দীর্ঘদিনের। এসব অভিযোগের সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন সময়ের গবেষণা প্রতিবেদনে।

দুইবছর আগে আইন কমিশন এক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যখাতের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে তা সারিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছিল। প্রায় একই সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন একটি প্রতিবেদন দেয় এ খাত নিয়ে। উভয় প্রতিবেদনেই অনিয়ম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার চিত্র উঠে আসে। তা দূর করার সুপারিশও ছিল উভয় প্রতিবেদনে। তবে গত দুই বছরে এইসব সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন কোনো উদ্যোগই দৃশ্যমান হয়নি। সম্প্রতি দুদকের অ্যাকশনের পর চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগ জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের শুধু বদলি করা হয়েছে বর্তমান কর্মস্থল থেকে।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=157897