৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১১:৪১

নীতিমালা না মানায় চট্টগ্রামে সাত কেন্দ্রে ভুল প্রশ্ন

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন কোনো প্রশ্ন ফাঁস না হলেও আলোচনায় আসে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) ও সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করার বিষয়টি। মূলত পরীক্ষা পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা না মানায় এই ভুল হয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন ৭ কেন্দ্রে এই ভুলের শিকার হয়েছে ৩৯৭ শিক্ষার্থী।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা অনুসারে নিয়মিত এবং অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের পৃথক কক্ষে আসন বিন্যাসের কথা। কিন্তু এই নির্দেশনা না মেনে নিয়মিত ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের একসঙ্গেই আসন বিন্যাস করা হয় চট্টগ্রামের সাত কেন্দ্রে। এর ফলে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত বহুনির্বাচনী ও সৃজনশীল প্রশ্ন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করার মতো ঘটনা ঘটেছে।

গতকাল শনিবার বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্ন সরবরাহ করার পর আজ রোববার বিষয়টির কারণ অনুসন্ধানে নামে শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কলেজ পরিদর্শক নগরের যে চারটি কেন্দ্রে এই ভুল হয়েছে, সেগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা নির্দেশনা না মানার বিষয়টির প্রমাণ পান। তাৎক্ষণিকভাবে পতেঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব মো. ওবায়দুল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাকি ছয়টি কেন্দ্রের সচিবকেও অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এসএসসি পরীক্ষা পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা প্রত্যেক কেন্দ্রসচিবকে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত ২০ জানুয়ারি তাঁদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানেও প্রতিটি নীতিমালা স্পষ্ট করে বোঝানো হয়। কিন্তু এরপরও তাঁরা নির্দেশনা না মেনে নিয়মিত আর অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে আসন বিন্যাস করেন। এর ফলে তাঁরা ভুল করেছেন।

ছয় কেন্দ্রে ভুল এমসিকিউ, এক কেন্দ্রে সৃজনশীল প্রশ্ন সরবরাহ
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পতেঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ১২০ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থীকে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত সৃজনশীল প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। তবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর পরীক্ষার্থীরা বিষয়টি ধরতে পারলে কক্ষ পর্যবেক্ষকদের জানায়। এরপর তাদের পুনরায় নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা থাকলেও কেন্দ্রসচিব তা করেননি। এ ছাড়া আরও কিছু ভুল করেন তিনি। এ জন্য তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তবে চট্টগ্রামের আর ছয়টি কেন্দ্রে একই ভুল করেছেন কেন্দ্রসচিবেরা। তাঁরা অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত এমসিকিউ প্রশ্ন সরবরাহ করেছেন নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা এই প্রশ্নে পরীক্ষাও দিয়েছে। পরীক্ষা শেষে তারা বিষয়টি বুঝতে পারে। কেন্দ্রসচিবদের এই ভুলের শিকার হয়েছে চট্টগ্রাম নগরের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ১৯ জন, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ১১৬ জন, গরিবে নেওয়াজ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৩০ জন এবং কক্সবাজারের পেকুয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৩৬ জন, উখিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৬৩ জন ও পালং উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ১৩ জন।

আরও ছয় কেন্দ্রের সচিবদেরও অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহেদা ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাকি ছয় কেন্দ্রের সচিবকে সোমবার অব্যাহতিসংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হবে। তবে এতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আন্তশিক্ষা বোর্ডের ট্যাবুল্যুশন নীতিমালা অনুযায়ী তাদের উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়ন করা হবে।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1577453