৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১১:৩০

আসল মোড়কে ভেজাল ওষুধ!

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অখ্যাত ফার্মেসিতে বিক্রি

মোড়ক দেখলে মনে হবে নামীদামি কোম্পানির ওষুধ। ওষুধের প্যাকেট ও লেবেল এতটা নিখুঁতভাবে তৈরি করা যে, দেখে বোঝার উপায় নেই, এটা নকল ওষুধ। কিন্তু ওষুধটি নকল, দীর্ঘ দিন ধরে একাধিক নামীদামি কোম্পানির ওষুধের নাম ও মোড়ক নকল করে নিজস্ব পদ্ধতিতে বানিয়ে ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করছে একটি চক্র। শুধু তাই নয়; চক্রটি ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে তাতে সিল মেরে মেয়াদ বর্ধিত করত! চক্রটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন অখ্যাত ফার্মেসিতে জীবন ধ্বংসকারী এসব ওষুধ সরবরাহ করত। সেখান থেকে চলে যায় মানুষের হাতে হাতে। আর এসব ওষুধ পরিবহনে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল শিশুরা।

বাজারে বহুল পরিচিত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির ইনসুলিন, প্যাথেড্রিনসহ জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধ নকল করে বিক্রি করছে চক্রটি। আর তাদের সহায়তা করত এক শ্রেণীর ফার্মেসির মালিক। এমন অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেনÑ আবদুস সোবহান, নাঈমুর রহমান তুষার, রিয়াজুল ইসলাম মৃদুল, নারগিছ বেগম ও ওয়াহিদ। এরা দীর্ঘ দিন ধরে একাধিক কোম্পানির নাম ও মোড়ক নকল করে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ওষুধ বাজারজাত করে আসছিল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ভেজাল ওষুধের মোড়ক তৈরিতে ব্যবহৃত প্রিন্টার মেশিন, রঙের কৌটা; তৈরির ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, মূল্য, ব্যাচ নম্বর ইত্যাদি লেখাসহ বিভিন্ন প্রকার সিল, ৫ মিলি: পানির বোতল ৩০০ পিস, সেক্স পাওয়ার বৃদ্ধির ক্যাপসুল ৮৫ হাজার পিস, অ্যাক্ট্রাপিড ১০ মিলি: ৬৫ পিস ইনসুলিন, মিক্সটার্ড ৩০ মিলি: ৫ পিস ইনসুলিন, জি পেথিডিন ইনজেকশনের খালি কাচের বোতল ১৬২৫টি, একটি এয়ার হটগান, জি পেথিডিন ইনজেকশনের প্লাস্টিকের ট্রে (ছোট) ১ বস্তা, গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড লেখা জি পেথিডিন ইনজেকশনের ফয়েল পেপার (স্টিকার) ১ রোল, প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লি.-এর অ্যালাট লেখা ওষুধের ফয়েল পেপার ইত্যাদি জব্দ করা হয়েছে।

গোয়েন্দারা জানিয়েছে, ডায়াবেটিস রোগীদের অন্যতম জরুরি ওষুধ ইনসুলিন ও বিভিন্ন রোগের উপশমে গুরুত্বপূর্ণ প্যাথেড্রিন ছাড়াও চক্রটি নানা প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনজেকশন নকল করে বাজারজাত করে আসছিল। এসব ওষুধের গায়ে সেঁটে দিতো বিভিন্ন পরিচিত কোম্পানির লেবেল।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, চক্রটি দীর্ঘ দিন নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের পাঁচজনকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করা হয়। তারা শিশুদের দিয়ে কৌশলে এসব বহন করত।

তিনি বলেন, চক্রটি সাধারণত অখ্যাত ফার্মেসিগুলোতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওষুধ সরবরাহ করে থাকে। এদের টার্গেট নি¤œআয়ের মানুষ। তাদের কাছেই উত্তেজক ওষুধসহ বিভিন্ন নকল ওষুধ সরবরাহ করত।

তিনি বলেন, পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে আমাদের অভিযান চলবে। কারা, কোন প্রক্রিয়ায় এসব নকল ওষুধ বানাচ্ছে এবং কিভাবে ফার্মেসিগুলোকে তা বিক্রির জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, তা জানাই এখন আমাদের মূল টার্গেট। আশা করি, আমরা খুব দ্রুত এ চক্রকে ধরতে পারব।
সবাইকে সাবধান করে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ আপনার জীবননাশের কারণ হতে পারে। মোহের বশে এসব ওষুধ না কিনে ভালো মানের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনবেন। নকল ওষুধ মানুষের কোনো কাজে আসে না বরং মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং, সবাই সাবধান থাকবেন।

গোয়েন্দারা জানান, এ চক্রের মূলহোতা আব্দুস সোবহান এক সময় একটি ওষুধ কোম্পানিতে কাজ করতো। নানা অনিয়মের কারণে সেখান থেকে তার চাকরি চলে গেলে অন্যদের নিয়ে শুরু করে নকল ওষুধের ব্যবসা। সোবহান দীর্ঘ দিন ধরে একাধিক ওষুধ কোম্পানির নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে নকল ওষুধ বানাত। ওষুধের মোড়ক ও লেবেল এগুলো তৈরি করে নিজেই গায়ে সব তথ্যসম্বলিত সিল বসাত। আর তার তৈরি ওষুধ বিক্রিতে সহায়তা করত অসাধু ফার্মেসি মালিকরা।

জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে দেশীয় পদ্ধতিতে তার গায়ে মেয়াদ, ব্যাচ নম্বর, মূল্য ইত্যাদি নতুনভাবে সংযোজন করে পুনরায় বাজারজাত করত চক্রটির সদস্যরা।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/385753