৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১১:২৬

ইউনিয়ন ও উপজেলা সড়ক উন্নয়ন

বছর অতিক্রমে ব্যয় বাড়ছে কিলোমিটারে ৩১ লাখ টাকা

সমীক্ষা ছাড়াই ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

বছর গড়াতেই দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে সড়ক খাতে এই ব্যয় বৃদ্ধি থামানো যাচ্ছে না। চলমান প্রকল্পের তুলনায় স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নের ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে ৩১ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলমান প্রকল্পে এই ব্যয় কিলোমিটারে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্প হলে সে জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক হলেও এই প্রকল্পে সেটা করা হয়নি বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রকল্প প্রস্তাবনার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলমান রুরাল কানেকটিভিটি ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে উপজেলায় ব্যয় হবে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং ইউনিয়নে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পের ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় সড়কের মান উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ হবে এক হাজার ১.৫১ কিলোমিটার। যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪৫২ কোটি ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। আর ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত হবে ৫ হাজার ৮৫৭.১১ মিটার। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪৪ কোটি ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। এখানে প্রতি মিটার নির্মাণ ব্যয় ১১ লাখ টাকা। যেখানে চলমান প্রকল্পের ব্যয় ৭ লাখ টাকা। গ্রামীণ এই রাস্তা করতে পরামর্শককে দিতে হবে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ঢাকা বিভাগের ১৩ জেলার ৬৩ উপজেলার এই সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে।

চলমান প্রকল্পের তথ্য থেকে দেখা যায়, অন্যান্য গ্রামীণ বিশেষ করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয় ৭০ থেকে ৯০ লাখ টাকা। কিন্তু এই প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে উপজেলায় ব্যয় হবে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা এবং ইউনিয়নে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এখানে এক ধরনের চলমান প্রকল্পের তুলনায় ব্যয় বাড়ছে ২০ লাখ টাকার বেশি। টাঙ্গাইল জেলায় কয়েকটি সড়ক উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। কিন্তু একই সময় চলমান প্রকল্পে বরগুনা জেলাতে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এবং ময়মনসিংহ জোনে প্রতি কিলোমিটার ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

জানা গেছে, বাংলাদেশের আয়তন এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার। লোক সংখ্যা ১৬ কোটিার বেশি। ২০১১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় এক হাজার ২৬৬ জন। ২৪.৮ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। গ্রামে এই দারিদ্র্য বেশি। বিশ্বব্যাংকের ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার ১২.৯০ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলছে, প্রকল্পটি যুক্তিযুক্ত মনে হলে বিগত ৫ বছরের মধ্যে যে সব সড়ক নির্মাণ বা মেরামত করা হয়েছে যেগুলো এখনই আবার না ভেঙে যখন মেরামতের প্রয়োজন হবে তখন যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীত করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত সড়কগুলো কত সালে নির্মাণ করা হয়েছে, কত সালে সর্বশেষ মেরামত করা হয়েছে তার একটা ডাটাবেজ ডিপিপিতে সংযুক্ত করা দরকার।

প্রকল্পটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, ইন হাউজ সম্ভাব্যতা যাচাই করে এটা প্রণয়ন করা হয়েছে। এডিবির সহায়তায় রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে সড়কের প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ কার্যক্রমের লক্ষ্যে একক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলন ওই প্রকল্পের আলোকে করা দরকার। প্রকল্পে ৩০৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কি পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে তা উল্লেখ করা হয়নি।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/385763