৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১১:২৪

বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলন

রিজার্ভ চুরির মামলা নিষ্পত্তি তিন বছরে : এ পর্যন্ত ব্যয় তিন কোটি টাকা

রিজার্ভ চুরির মামলা নিষ্পত্তি হতে তিন বছর সময় লাগতে পারে। তবে রিজার্ভ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে এ পর্যন্ত তিন কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আরো কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হবে তার হিসাব চূড়ান্ত করা হয়নি।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান, বিএফআইইউ উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো: সিরাজুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক জি এম আবুল কালাম আজাদ।

আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা মামলা তিন বছরের মধ্যে সমাধান হবে। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এ সময় কমতে বা বাড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কের (ফেড) সাথে মামলার বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। তারা মামলার জন্য বিভিন্ন নথি, তথ্য সরবারহসহ সাক্ষী দেবে। ১০৩ পৃষ্ঠার মামলায় ১৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি, সাতটি প্রতিষ্ঠান ও ২৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে বিবাদি করা হয়েছে।’

মামলা করতে কেন বিলম্ব হলো, এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ফেডের সাথে চুক্তি করতে সময় লেগেছে। শুরু থেকে লেগে ছিলাম। সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এখন ভালো অবস্থানে আছি। ফিলিপিন্সে মামলা না করে কেন যুক্তরাষ্ট্রে করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, মামলা করার জন্য তৃতীয় স্থান যুক্তরাষ্ট্রই উত্তম ছিল। কারণ, এখানে মামলা নিষ্পত্তি দ্রুত হবে। এ ছাড়া, বিবাদিদের অনেক সম্পদ আছে যুক্তরাষ্ট্রে। ফিলিপিন্সের চুক্তিও আছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। যা দিয়ে উভয় দেশের যেকোনো তথ্য আদান-প্রদান এবং মামলার রায় কার্যকর করা সম্ভব।

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের প্রতিবেদন কেন প্রকাশ করা হয়নি জানতে চাইলে আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি বলেন, সরকার কেন প্রকাশ করেনি তা আমি জানি না। তবে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে ফিলিপিন্সে চলমান তদন্ত ব্যহ্যত হতো। ওই জায়গায় আমি নিজে থাকলেও তা প্রকাশ করতাম না। হয়তো সরকার সে কারণে প্রকাশ করেনি।

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরত আনতে এ পর্যন্ত কত ব্যয় হয়েছে এবং মামলা পরিচালনা করতে কত ব্যয় হতে পারে এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান বলেন, টাকা উদ্ধারে খরচ নিয়ে সবার জানার আগ্রহ বেশি দেখছি। হিসাব চূড়ান্ত হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত তিন কোটি টাকার বেশি খরচ হয়নি। একই প্রশ্ন টেনে নিয়ে বিএফআইইউ উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, কত খরচ হলো সেটা বড় কথা নয়; সরকারের লক্ষ্যÑ অপরাধী ধরা।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ৩৬ মাস পর বাংলাদেশ সময় গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোর ৭টায় মার্কিন আদালতে মামলা করা হয়। মামলার প্রধান আসামি করা হয় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংককে। এতে চুরি হওয়া অর্থসহ মামলা পরিচালনার সমুদয় ব্যয় এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা আইনি প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কোনর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মামলাটি করে। বাংলাদেশ ব্যাংক বনাম রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন শিরোনামে করা এ মামলার নথিভুক্তির নাম্বার হচ্ছে ১৯-০০৯৮৩।

মামলায় বলা হয়, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিউ ইয়র্ক শাখায় রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরির মধ্যে ফিলিপাইনে যায় আট কোটি ১০ লাখ ডলার এবং শ্রীলঙ্কায় যায় দুই কোটি ডলার। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

ফিলিপাইনের আট কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে আরসিবিসিতে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাসহ আরো বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি এর সাথে জড়িত রয়েছে। তারা মানি লন্ডারিংয়ের বিধিবিধান পরিপালন না করে ওই সব অর্থ ছাড় করার মাধ্যমে পাচার করতে সহায়তা করেছে। এতে আরো বলা হয়, ব্যাংকটির শীর্ষ কয়েক কর্মকর্তা এ অর্থ চুরির জন্য কয়েক বছর ধরে ‘বড় ধরনের জটিল ষড়যন্ত্র’ করেন। অজ্ঞাতনামা উত্তর কোরীয় হ্যাকাররা এ চুরিতে সহায়তা করেছে। অর্থ চুরির পর তা ফিলিপাইনের আরসিবিসির অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। পরে সেখান থেকে মানি এক্সচেঞ্জ হয়ে এর বেশির ভাগ অর্থ ফিলিপাইনের ক্যাসিনোর মাধ্যমে পাচার করে দেয়া হয়।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। সুইফটের নিরাপত্তাব্যবস্থা হ্যাক্টড করে পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া এ অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া দুই কোটি ডলার ফেরত আসে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া আট কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনো ফেরত আসেনি ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলার।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/385729