৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১১:০৬

৩ ভারতীয় কোম্পানি ফেনীতে নির্মাণ করবে বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় একটি বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে তিন ভারতীয় কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম। ৩০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারকে ২০ বছরে ব্যয় করতে হবে ৯৩৩ কোটি টাকার বেশি।

বেসরকারি খাতে বিল্ড-ওন-অপারেট (বিওও) ভিত্তিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী বাঁধ এলাকায় ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তৈরি করা হবে। যে তিন ভারতীয় কোম্পানি এটি নির্মাণ করবে তারা হলো কনসোর্টিয়াম অব ‘ব্যাংগোয়াটি প্রোডাক্টস লিমিটেড’, ‘রিজেন পাওয়ারটেক প্রাইভেট লিমিটেড’ ও ‘সিদ্ধান্ত উইন্ড এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড’। বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়ার পর এই বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। প্রতি কিলোওয়াট বা ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১১ সেন্ট, যা বাংলাদেশী টাকায় ৮ টাকা ৮৮ পয়সা।

বিশ বছর মেয়াদে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের আনুমানিক ব্যয় হবে ৯৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সম্প্রতি ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতঃপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘টেলর ইঞ্জিনিয়ারিং’ ও ‘পিএইচ কনসালটিং ইঙ্ক’-এর যৌথ উদ্যোগে কক্সবাজার জেলায় ৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এবং কনসোর্টিয়াম অব ‘পিআইএ গ্রুপ এলসিসি’ ও ‘বাংলাদেশ অল্টারনেটিভ এনার্জি সিস্টেম লিমিটেড’-এর উদ্যোগে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উল্লিখিত দুটি কেন্দ্রেই প্রতি কিলোওয়াট বা ঘণ্টা বিদ্যুতের ট্যারিফ হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ সেন্ট। যা বাংলাদেশী টাকায় ৯ টাকা ৬০ পয়সা।

সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ পর্যন্ত স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট ক্ষমতা হচ্ছে ৩০৬ মেগাওয়াট। কিন্তু বায়ুশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি নেই। এ পর্যন্ত দেশে মাত্র ২ দশমিক ৯ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মুহুরী বাঁধ এলাকায় ৩০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে গঠিত কনসোর্টিয়াম ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর প্রস্তাব দাখিল করে। কোম্পানি নিজ অর্থে ও নিজ ব্যবস্থাপনায় প্রকল্পের জন্য জমির সংস্থান, বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য ট্রান্সমিশন লাইন ও সাব-স্টেশন নির্মাণসহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় বহন করবে। প্রস্তাব দাখিলের পর নেগোসিয়েশন সভায় প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা, আর্থিক সক্ষমতা ও কারিগরি যোগ্যতা, জমি উন্নয়ন, প্রকল্প সাইট, প্রকল্পের ইনিশিয়াল এনভায়রনমেন্ট এসেসমেন্ট, পাওয়ার ইভ্যাকুয়েশন, ট্রান্সমিশন লাইন ও সাব-স্টেশন নির্মাণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। সে হিসাবে আগামী ২০২১ সালে দেশে দৈনিক ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। এ দিকে বর্তমানে দেশে দৈনিক মোট বিদ্যুৎ (ক্যাপটিভসহ) উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না থাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদিত হচ্ছে। আর গ্যাসনির্ভর সার কারখানাগুলো চালু থাকলে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যায় আরো প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগের সুপারিশে এই প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/385731