৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১০:১১

ঐক্যের কথকতা

সালাহউদ্দিন বাবর

মৌলিক বিষয়ে জাতীয় ঐক্যে প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব কতটা জরুরি সেটা ব্যাখ্যা করার বিশেষ দরকার নেই, বরং এটা মানুষের বোধের বিষয়। আর এই বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য সমাজের বিভিন্নস্তরের নেতার ভূমিকা বলতে গেলে অনেকখানি। সমাজে বসবাসকারী মানুষের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ উদার এবং ন্যায়ভিত্তিক হলে সেখান থেকে ঐক্যের বোধটি জাগ্রহ হতে পারে। তার পর থেকে স্তরে স্তরে এই বোধ জাতীয় পর্যায়ে এসে উপনীত হতে পারবে। সম্প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো হয়েছে। আজ বহুধা বিভক্ত জাতির কাছে এমন আহ্বান আরো কার্যকর হতে পারত, যদি ঐক্যের পটভূমি রচনায় প্রয়াসটি সমান্তরালভাবে শুরু করা হতো।

আজকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে পরিবেশ বিরাজ করছে, সে অবস্থায় জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ এবং সুদূর পরাহত। এই দুর্বল ভিত্তির ওপর ঐক্যের মিনার নির্মাণের কথা ভাবা যায় না। তাই আমাদের সব রাজনৈতিক নেতাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐক্যের একটি মজবুত ভিত্তি রচনার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা বড় প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের সবচেয়ে আগে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের প্রতি তাদের বর্তমান যে আচরণ। বিশেষ করে গত ১০ বছর ধরে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলকে তাদের স্বাভাবিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে দেয়া হয়নি। তাদের ওপর হামলা মামলা দায়ের করে যে বিভক্তির দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐক্যের কামনা করাটা কেবল বাতুলতা মাত্র।

আজ আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা ভাঙচুর অবস্থা বিরাজ করছে। এই অবস্থাকে বজায় রেখে বহুধা বিভক্ত মানুষের মধ্যে ঐক্যের সেতুবন্ধনের আশা করাটা সম্ভব নয়। তাছাড়া ঐক্যের জাল বোনার কারিগরদের তো সক্রিয় হতে হবে। কিন্তু আরো কথা হলো, ঐক্যের জালের যে শত ছিন্ন অবস্থা তাকে পুনর্বুননের জন্য সর্বজন গ্রাহ্য এবং দক্ষ ব্যক্তি বা সংগঠনের বড় অভাব তো রয়েছে। তাই এখন ঐক্যের জন্য প্রথম কাজটি হচ্ছে সবাইকে ঐক্যের চেতনা বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে।

এখানে ঐক্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হলো বটে, তবে তার অর্থ এই নয় যে, সবাইকে এক সারিতে চলতে এবং একই কথা বলতে হবে। তা তো একটা বদ্ধ সমাজের উদাহরণ। এমনটা গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার চেতনা নয়। গণতান্ত্রিক সমাজে বহু মত পোষণ ও লালনের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

গণতান্ত্রিক সমাজে এটা বিভেদ নয় বরং বৈশিষ্ট্য। এই পার্থক্য নিয়েই বৃহত্তর ঐক্য গড়তে হবে, সেটাই গণতন্ত্রের সুন্দর্য। এখন কথা হচ্ছে, যে ঐক্যের আহ্বান এসেছে তা কি বহু মত একমতে শামিল হয়ে যাওয়ার। দেশে এখন যে শাসন কাঠামো তৈরি হয়েছে তাতে সব কিছু এক কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে কৌশল ছিল, তা কার্যকর হয় এবং এর ফলে যে আইন সভা গঠিত হয়েছে তার সদস্যরা সবাই এক জোটের। অতীতের স্মৃতিচারণ করলে দেখা যাবে- এখন নির্বাচনে কৌশল করে একজোট করা হয়েছে, কিন্তু অতীতে আইন করে এমন করা হয়েছিল। তাই এ নিয়ে শঙ্কা হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেশে এখন গণতন্ত্রের প্রতি যে হেলা অবহেলা চলছে তাতে অদূরভবিষ্যতে তা পরিচর্যাহীন অবস্থায় তার বেঁচে থাকা কঠিন হতে পারে। অথচ দেশের ইতিহাস এ কথা বলে যে, এই জনপদের মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি কতটা অঙ্গীকাবদ্ধ। তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বহু আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এসব আন্দোলনে তাদের আত্মত্যাগ ছিল অপরিসীম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের একশ্রেণীর নেতা গণতন্ত্রকে পুঁজি করে ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেন। বারবার গণতন্ত্র এমন বিপদ মোকাবেলা করে এখন তা মৃত্যুর দশায় এসে উপনীত হয়েছে। আর এজন্য দায়ী রাজনীতির অঙ্গনের লোকজন। তাই তাদের কাছে থেকে এখন আর গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ঐক্যের কথা শুনে তার ওপর কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। গণতন্ত্রের প্রকৃত বিজয় জনমতের বিজয় হওয়া আর এখন মনে করা হয়, যেকোনো বিশেষ দল বিজয়ী হলেই তবেই বিজয়। আর এ বিজয়ের জন্য জনমতে প্রতিফলন ঘটুক আর নাই ঘটুক তাতে কিছু এসে যায় না। সমাজে যে বহু মত ও পথের লোক রয়েছে। তাদের বোধ বিশ্বাসের প্রতি লেশমাত্র শ্রদ্ধা দেখানোর আর কোনো প্রয়োজন পড়ে না। এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে সমাজ রাষ্ট্রে কোনো জবাবদিহিতা বজায় থাকে না। এতে সমাজে যে বদ্ধতার সৃষ্টি তাতে সর্বত্র দূষণ ছড়িয়ে পড়ে। আর এমন এক দূষিত পরিবেশে সুস্থতা বিরাজ করতে পারে না।

জাতীয় ঐক্য যদি আকাক্সিক্ষত হয় তবে প্রয়োজন হবে প্রথমে এর জন্য মানসিকতা সৃষ্টি করা। গণতন্ত্র একটি সংস্কৃতি, মানুষের বোধে বিচার আচার আচরণে এবং বক্তব্য বিবৃতিতে তার প্রতিফলন ঘটতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তাদের থেকে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অনুশীলন হচ্ছে নির্বাচন। এই নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ করার অঙ্গীকার থাকতে এবং বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখাতে হবে। কিন্তু এখন যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে তাকে কেউ অবাধ সুষ্ঠু করার প্রচেষ্টা নিচ্ছে না।

বর্তমানে নির্বাচনের ফলাফলের জন্য জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনের ধার ধারা হচ্ছে না। বিজয় হচ্ছে ক্ষমতা প্রয়োগ, রাষ্ট্রে প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করে। ক্ষমতাসীন দল যাদের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তারাই এবার উপরোল্লিখিত অন্যায় সুযোগগুলো গ্রহণ করে একচ্ছত্র জয় হাসিল করেছে।

প্রকৃতপক্ষে একে নির্বাচন বলা যায় না বরং ভোট কব্জা করা বলাই শ্রেয়। এভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হটিয়ে দিয়ে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করা বা তাদের প্রতি ঐক্য আহ্বান জানানো অর্থহীন। রাজনীতিতে পক্ষ-প্রতিপক্ষের মধ্যে নীতি ও আদর্শ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আলোচনা-সমালোচনা হতে হবে। কিন্তু এই নীতি প্রশ্নে আক্রমণ ও প্রতি আক্রমণে অবশ্যই শিষ্টাচার শালীনতার গণ্ডি থাকে, যা অতিক্রম করবে না। কিন্তু এখন দেখা যায় পক্ষশক্তি প্রতিপক্ষকে যে ভাষায় আক্রমণ করে সবরকম শালীনতা অতিক্রম করে যায়। এমনকি তা ব্যক্তিগত পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয়। এতে দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তো দূরের কথা সহাবস্থানের পরিবেশ বজায় রাখাই অসম্ভব।

সামাজিক সম্মিলন ঘটাও দুই পক্ষের অসম্ভব। আমাদের সর্বজন গ্রাহ্য নেতা মুষ্টিমেয়। তাদের দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে শ্রদ্ধা সম্মান দেখানো উচিত। এই ঔচিত্য বোধ সাধারণ মানুষের মধ্যে বজায় থাকলেও দলীয় নেতাদের সবার মধ্যে তা নেই। এসব শ্রদ্ধেয় নেতার প্রতি কটূক্তিও করা হয়। এমন অবস্থায় জাতীয় ঐক্য নির্মিত হবে কিভাবে। নেতাদের এই ঐক্যের উচ্চারণের পাশাপাশি তাদের ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। জাতীয় জীবনে মৌলিক ইস্যুতে নেতাদের ঐক্য হলেই তা তৃণমূল পর্যায়ে নেমে আসবে।

জাতীয় নেতৃত্ব কখনোই ঐক্য তৈরি করতে পারেনি, তা নয়। দ্বিতীয় দফা যখন দেশে অধিকতর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হিসেবে সংসদীয় শাসন কাঠামো বেছে নেয়া হয়েছিল, তখন পঞ্চম সংসদের সংসদীয়ব্যবস্থা কায়েমের জন্য আইন পাস করা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ বিএনপি জামায়াতে ইসলামী এই আইনের পক্ষে ভোট দিয়ে যে আবেগ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল, তা এক ঐতিহাসিক ঘটনা। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে সে এক অনন্য অধ্যায়ের সংযোজন করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি সেই অকুণ্ঠ সমর্থন ও প্রতিশ্রুতি আজ আর কেউ স্মরণ করে না। প্রতিষ্ঠার পর এর সুষ্ঠু গঠন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রে যে সীমাহীন অনিয়ম অব্যবস্থার আশ্রয় নেয়া হয়েছে, তাতে সংসদীয় শাসন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সংসদ গঠনে যে বিরাট বিচ্যুতি ঘটেছে তাতে এই ব্যবস্থা নিয়ে জনগণ এখন হতাশ বিমর্ষ।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যে বিচ্যুতি ঘটেছে তাতে এর মাধ্যমে যে আইন সভা গঠিত হয়েছে, তার এক ডানা নেই। আইন সভার দু’টি ডানার একটি হচ্ছে সরকারি, অপর ডানাটি হচ্ছে তার প্রতিপক্ষ অর্থাৎ বিরোধী দল। একটি কার্যকর শাসনব্যবস্থার জন্য এই দুই ডানা এক সাথে মেলতে হবে। এর একটি ডানা না থাকলে আইন সভা স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে না। এখন যে আইন সভা গঠিত হয়েছে তাতে কোনো বিরোধী দল নেই। এর ফলে ক্ষমতাসীনদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে তাদের ঠিক পথে চলার ব্যবস্থা থাকল না। দশম সংসদেও এমন অপূর্ণাঙ্গতা ছিল, এখন তেমনি রইল। আইন সভায় সরকারের প্রতিপক্ষ না থাকলে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রশাসনে দেখা দেয়, এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। প্রশাসনের জবাবদিহি না থাকলে সেখানে সৃষ্টি হয় দুর্নীতি। সম্প্রতি টিআইবির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়, দুর্নীতিতে বাংলাদেশের চার ধাপ অবনতি ঘটেছে। অর্থাৎ দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। প্রতিবেদনে রয়েছে ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম যা ২০১৭ সালের তুলনায় চার ধাপ এবং ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ১৪৯তম, যা ২০০১ সালের তুলনায় ৬ ধাপ অবনতি। নীরবে সবার অগোচরে দুর্নীতির ক্রমেই বেড়ে চলা নিয়ে সংসদের কোনো আলোচনা বা দৃষ্টি আকর্ষণ নেই। এমন অবনতি দেশবাসীর জন্য বিব্রতকর। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ এখন এই পরিচিতি লাভ করেছে যে, এ দেশের জনগণ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। আর একটা কথা এর সাথে যুক্ত হবে যে, এ দেশের প্রশাসন দুর্নীতিকে লালন করে। তা না হলে এখানে দুর্নীতি ক্রমাগত বিস্তৃতি লাভ করছে কিভাবে। আরো লজ্জার বিষয় হলো, এই যে এ অঞ্চলের ছোট দেশ ভুটানে সবচেয়ে কম দুর্নীতি হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের একটি অন্যতম অঙ্গ আইন সভার অকার্যকারিতায় বহু অশুভ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি অনুধাবন করে দেশের নীতিনির্ধারকদের এই প্রতিবিধানের অনুসন্ধান নিয়ে ভাবা উচিত।

জাতীয় জীবনের ঐক্যের উদাহরণ এবং এর পরিণতি নিয়ে আলোচনা হলো। এখন এ নিয়ে আরেকটি উদাহরণ দিয়ে এ প্রসঙ্গের ইতি টানব। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এখনকার মতো অতীতেও গোটা দেশের মানুষ ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছিল। এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দাবি সোচ্চার হয়ে উঠেছিল জাতীয় নির্বাচন আর দলীয় সরকারের অধীনে নয় বরং নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। এ নিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সারা দেশে এই দাবিতে এক ঐক্য তৈরি হয়েছিল। পরে তৎকালীন সরকার সংবিধান সংশোধন করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত করে।

পরে এই নতুন ব্যবস্থার অধীনে যতগুলো জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল, সেগুলো নিয়ে কারচুপির কোনো অভিযোগ ওঠেনি। কিন্তু এই ভালো ব্যবস্থাটা বেশি দিন বহাল রাখা যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসে আদালত এই ব্যবস্থাটা রহিত করে দেন। যখন এই বিষয়টি নিয়ে আদালতে তর্ক-বিতর্ক চলছিল তখন আওয়ামী লীগ সরকারের আইন কর্মকর্তারা নির্লিপ্ত ছিলেন। এভাবে সেই জাতীয় ফসলটি বেঁচে থাকতে পারল না। এখন তার পরিণতি সবাই দেখছে এবং অনুতাপ করছে।

নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে পুরো জাতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি ছিল। এর ব্যবহার হলে নির্বাচনে কারচুপি ঘটবে। এই বক্তব্যে সবাই একমত হলেও নির্বাচন কমিশন এই ঐকমত্যকে অগ্রাহ্য করে ইভিএম চালু করে। এখন স্বীকার করা হচ্ছে, এই পদ্ধতির ব্যবহারে কোথাও কোথাও ত্রুটি হয়েছে। জাতীয় ঐক্যের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এভাবে বহু ক্ষেত্রে জাতিকে ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে। বৃহত্তর অভিমতকে অগ্রাহ্য করে দেশের যে ক্ষতি করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো কত ক্ষতি করা হবে তার হিসাব কে দেবে এবং আরো বড় ক্ষতির কথা রাষ্ট্রপতি সম্প্রতি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদের উদ্বোধন করে বলেছেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল শ্রেণীপেশা সবার ঐকমত্য গড়ে তুলতে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। রাষ্ট্রপতির এই মূল্যবান আহ্বানের মর্ম উপলব্ধি করে তা অনুসরণ করে সেভাবে দায়িত্ব পালন উচিত। তাছাড়া যারা রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ তাদের প্রতি এটা নির্দেশ বলেই মনে করা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী যদি ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তবে এর মর্ম সরকারের নির্বাহী বিভাগ এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিজেদের ভূমিকা পর্যালোচনা করে মৌলিক ইস্যুতে তাদের করা ভুলগুলো শুধরে নেয়া উচিত হবে।

ndigantababor@gmail.com

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/385650