রাজধানীর একটি কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১১:৫০

এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে নানা বিশৃঙ্খলা

নতুন-পুরনো সিলেবাসের প্রশ্ন নিয়ে তালগোল; শুরুর ৩০ মিনিট পর ফেসবুকে প্রশ্ন আপলোড !

এবারের মাধ্যমিক স্কুল সাটিফিকেট(এসএসসি) পরীক্ষার প্রথম দিনে ঢাকা চট্টগ্রাম কুমিল্লা ও যশোর বোর্ডের বেশ কিছু কেন্দ্রে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিন লক্ষাধিক অনিয়মিত পরীক্ষার্থী এবার অংশ নেয়ায় এবং পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নের সেট নির্ধারণ করে অবহিত করার নিয়ম চালু করায় নানা বিষয়ে তালগোল পাকিয়েছেন কেন্দ্র সচিবরা। এ নিয়ে পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে, তেমনি অভিভাবকরাও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবস্থাপনা নিয়ে। এসব অব্যবস্থাপনার কথা স্বীকার করে আন্তঃবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তকে বলেন, স্থানীয়ভাবে জেলা প্রশাসকরাই রয়েছেন পরীক্ষার মূল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে। আসলে কী ঘটেছে,তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কারা দায়ী তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে রীতি অনুযায়ী প্রথম দিন পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যান নতুন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সকালে তারাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দু’জন সচিব রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশে নকলমুক্ত পরীক্ষা আয়োজনে তীক্ষè গোয়েন্দা নজরদারি বসানো হয়েছে। তাই কোনোভাবে প্রশ্নফাঁস করা সম্ভব নয়।

তবে পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ না পাওয়া গেলেও পরীক্ষা চলাকালেই বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) প্রশ্ন এবং সৃজনশীল প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে পরীক্ষা শেষে আসল প্রশ্নের সঙ্গে ফাঁস হওয়া বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মিল পাওয়া যায়নি। কিন্তু সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। ফেসবুকের ‘ংংপ ধষষ নড়ধৎফ য়ঁবংঃরড়হ ড়ঁঃ ২০১৯-া১০০%’ নামের একটি পেজে গতকাল সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। এ পোস্টগুলো ছিল বেশ ঝাঁপসা। অন্যদিকে বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে পরীক্ষাটির সৃজনশীল প্রশ্নের ৩নং সেটের প্রশ্ন পোস্ট করা হয়। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সঙ্গে আসল প্রশ্নের মিল পাওয়া না গেলেও সৃজনশীল প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়।

নানা পদক্ষেপ ও কড়া নির্দেশনার পরও পরীক্ষা চলাকালে কিভাবে প্রশ্নপত্র ফেসবুকে এলো তা জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, প্রশ্নফাঁস অথবা কোন ধরনের প্রশ্ন ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই। পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়া গেছে এমন তথ্য জানানোর পর তিনি বলেন, যদি পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্ন ফেসবুকে আসে তবে সেটা আসল কি না তা দেখতে হবে। তিনি আরো বলেন, নিয়ম আছে, কোনো পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ১ ঘণ্টা পরেই চাইলে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে পারবে। হয়তো এ কারণে এমনটি হয়েছে। কোনো পরীক্ষার্থী ১ ঘণ্টা কেন্দ্রে ছিল, পরীক্ষা দিয়েছে, বের হয়ে এসে সেই প্রশ্নের ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়েছে। এ রকম দুষ্টু চক্র আছে সবাইকে তো ধরা সম্ভব নয় জানিয়ে বোর্ড চেয়ারম্যান জিয়াউল হক বলেন, তবে আজই আমরা একটা নির্দেশনা দেবো, কেউ ১ ঘণ্টা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে যদি বের হয়ে যায়, তাহলে তাকে প্রশ্ন কেন্দ্রে জমা রেখে আসতে হবে।

আন্তঃবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বোর্ডের মিরপুরে, মাদারীপুরের কালকিনিতে, চট্টগ্রাম বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম শহরের ২টিসহ মোট ৭ কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে যে সাত কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে, সেগুলো হলো নগরীর ডা: খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চবিদ্যালয়, পতেঙ্গা উচ্চবিদ্যালয় ও গরিবে নেওয়াজ উচ্চবিদ্যালয় এবং কক্সবাজারের পেকুয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, উখিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও উখিয়া পালং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র।

এরমধ্যে ডা: খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয়া দেড় হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪ জন ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। অন্য ছয় কেন্দ্রে কতজন পরীক্ষার্থী এই ভুলের শিকার হয়েছেন, তা জানাতে পারেনি শিক্ষা বোর্ড। সাত কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী কেন্দ্র সচিবদের ‘শো-কজ’ করা হয়েছে বলে জানান বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাহবুব হাসান।

একই ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। পুরনো প্রশ্নে পরীক্ষার বিষয়ে পরীক্ষার্থীরা কক্ষ পরিদর্শকের দৃষ্টিতে আনার পর তারা কেন্দ্রসচিবকে অবহিত করেন। কেন্দ্রসচিব বিষয়টি আমলে না নিলে অভিভাবকরা বোর্ডে যোগাযোগ করলে, বোর্ড স্কুল কর্তৃপক্ষকে সঠিক প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার নির্দেশ দিলে, আধা ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে আবার সঠিক প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাভারের একটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র কম হওয়ায় ফটোকপি করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রশ্নপত্র কম হওয়ায় ফটোকপি করা প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে কুমিল্লা বোর্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে। কুমিল্লায় পরীক্ষা শুরু হওয়ার পৌনে ১ ঘণ্টা পর একটি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের মাঝে রচনামূলক (সৃজনশীল) প্রশ্ন বিতরণ করা হয়েছে। এ বোর্ডের অধীনে দেবিদ্বার উপজেলার দুয়ারিয়া এজি মডেল একাডেমি কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে প্রায় ৪০ মিনিট পর বিতরণ করে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

যশোর বোর্ডের অধীনে কুষ্টিয়ার একটি কেন্দ্রেও পুরনো প্রশ্নপত্রে আধাঘণ্টা পরীক্ষা হওয়ার পর সময় বাড়িয়ে ফের নতুন প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। গতকাল সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে বাংলা প্রথমপত্র এবং মাদরাসা বোর্ডে কুরআন মাজিদ পরীক্ষায় ১০৩৮৭ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কৃত হয়েছে ২৪ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, অনুপস্থিত এবং বহিষ্কারের দিকে শীর্ষে ছিল মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে অনুপস্থিত ছিল ৩৭৮৮ জন আর বহিষ্কার হয়েছে ৬ জন পরীক্ষার্থী। এরপরই কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে। এ বোর্ডে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬২১ জন, বহিষ্কারের সংখ্যা ১৩ জন। এরপর ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডের অনুপস্থিতির সংখ্যা ১৩৯৬ জন। এ ছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ৭৬২, কুমিল্লায় ৬৩১, যশোরে ৪৬৩, দিনাজপুরে ৫৪১, সিলেটে ৩১৮, বরিশালে ৩৯০, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৪৭৭ জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সাধারণ ৮টি বোর্ডে ৫ জন শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে। এরমধ্যে ৩ জন বহিষ্কার হয়েছে বরিশাল বোর্ডে। এ ছাড়া ঢাকা ও দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে একজন করে বহিষ্কার হয়েছে। বাকি বোর্ডে কোনো শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়নি।

চট্টগ্রামে সাতটি কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে এসএসসির প্রথম দিনে সাতটি পরীক্ষা কেন্দ্রে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুসারে প্রণীত প্রশ্নে এবারের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এ ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়। ‘কেন্দ্র সচিবদের ভুলে’ এমন গাফিলতির কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ তাওয়ারিক আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, এতে পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে ব্যবস্থা অবশ্যই করা হবে।

চট্টগ্রামে যে সাত কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো নগরীর ডা: খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, পতেঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়, খাজা গরীবে নেওয়াজ উচ্চবিদ্যালয় ও মিউনিসিপ্যাল মডেল উচ্চবিদ্যালয় এবং কক্সবাজারের পেকুয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও উখিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, এবার বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ২০১৬, ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সিলেবাস অনুসারে হওয়ার কথা। এর মধ্যে সাতটি কেন্দ্রের সচিবদের ভুলে ২০১৯ সালের সিলেবাসে যাদের পরীক্ষা দেয়ার কথা, তাদের মাঝে ২০১৮ সালের সিলেবাস অনুসারে প্রণীত প্রশ্নপত্র বিতরণ করা হয়েছে। তবে ওই সব পরীক্ষার্থীদের রোল নম্বর এবং যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য কেন্দ্র সচিবদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ দিকে দেশের সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণমূলক পরীক্ষায় কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের গাফিলতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, পরীক্ষার ফলাফলে এর প্রভাব পড়লে এর দায় সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।

শ্রীবরদীতে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র
শ্রীবরদী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শ্রীবরদীতে পরীক্ষায় ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র দেয়ায় হয়রানির শিকার হয়েছে পরীক্ষার্থীরা। গতকাল বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষায় শ্রীবরদী এমএনবিপি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষে পরীক্ষার্থীদের মাঝে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়।

উপজেলার বানিবাইদ উচ্চবিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্কুলের পরীক্ষার্থীরা জানায়, প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা দেখতে পায় তাদের প্রশ্নপত্র ২০১৮ সালের। এতে বিপাকে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। শ্রীবরদী এমএনবিপি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রের হল সুপার মনিরুজ্জামান জানান, বোর্ড থেকে এসএসসি পরীক্ষার ২০০ প্রশ্নপত্রের একটি প্যাকেটের ওপরে লেখা ছিল ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্র। কিন্তু ভেতরে কিছু প্রশ্নপত্র ছিল ২০১৮ সালের। এ সময় ৭৪ জন শিক্ষার্থীর কাছে এসব প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছিল। এসব প্রশ্নপত্র দিয়ে পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীদের নজরে আসে বিষয়টি। পরে কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র ও খাতা ফেরত নিয়ে ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্র ফটোকপি করে প্রায় এক ঘণ্টা পর পরীক্ষার্থীদের হাতে দেয়। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। একই পরিস্থিতির শিকার হয় উপজেলার টেংগড়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্রের কিছু পরীক্ষার্থী। ওই কেন্দ্রে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হয়েছিল পুরনো প্রশ্নপত্র। এ ব্যাপারে কেন্দ্র সচিব আবুল খায়ের বলেন, কয়েকটি কক্ষে ভুলবশত ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছিল। পরে ইউএনও স্যার প্রশ্নপত্র ফটোকপি করে পরীক্ষার্থীদের হাতে দেন।

কিশোরগঞ্জে প্রশ্নফাঁস প্রতারণায় শিক্ষার্থী আটক
কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, এসএসসির প্রশ্ন ফাঁসের প্রতারণার দায়ে একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ছেলে আটক হয়েছে। র্যাব-১৪, সিপিসি-২, কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার এম শোভন খানের নেতৃত্বে একটি দল শনিবার বেলা ৩টার দিকে সদর উপজেলার মহিনন্দ উচ্চবিদ্যালয় এলাকা থেকে তাকে আটক করে। আটক তরুণের নাম গোলাম মেহেদী (১৮)। তার বাবা মহিনন্দ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গোলাম মেহেদী গুরুদয়াল সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র।

র্যাব-কর্মকর্তা এম শোভন খান জানান, মেহেদী ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে অর্থ আদায় করে আসছিল।

সাতক্ষীরায় ৩ ঘণ্টা পর আবার পরীক্ষা দিলো ৪৮ জন
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল এপিসি স্কুল কেন্দ্রে গত বছরের প্রশ্নপত্রে ৪৮ শিক্ষার্থীর বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কেন্দ্রসচিব সুখলাল বাইনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় ৩ ঘণ্টা পর নতুন প্রশ্নপত্রে ফের পরীক্ষা নেয়া হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরদার মোস্তফা শাহীন জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র বণ্টনের প্রায় ৩ ঘণ্টা পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে ৪৪০ পরীক্ষার্থীর বেশির ভাগের হাতে এ বছরের প্রশ্ন পৌঁছলেও ৪৮ জনের হাতে আসে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র। তারা এই প্রশ্নে পরীক্ষাও দেয়। বেলা ১টা বাজার কয়েক মিনিট আগে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার সাথে সাথে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, পরীক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হবে না। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রংপুর বিভাগে অনুপস্থিত ৫৪১
রংপুর অফিস জানায়, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের আট জেলায় পরীক্ষার প্রথম দিনে ৫৪১ শিক্ষার্থী ঝরে গেছে, যা গত বছরের চেয়ে ২০ জন বেশি। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো: মানিক হোসেন জানান, শনিবার বাংলা পরীক্ষাতে ৫৪১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হননি। এরমধ্যে রংপুর ও কুড়িগ্রামে ৮০ জন করে, গাইবান্ধায় ৭৬ জন, নীলফামারীতে ৬৬ জন, লালমনিরহাটে ৩৭ জন, দিনাজপুরে ৯১ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭৮ জন এবং পঞ্চগড়ে ৩৭ জন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫২১ জন।

এবার এই বোর্ডের অধীনে বিভাগের ২৬৭ টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩ জন।

দেবিদ্বারে ৪০ মিনিট পর প্রশ্ন বিতরণ
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, দেবিদ্বারের দুয়াড়িয়া এজি মডেল একাডেমি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরুর ৪০ মিনিট পর রচনামূলক প্রশ্ন হাতে পায় পরীক্ষার্থীরা। ওই কেন্দ্রে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫৭৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এই ঘটনায় কেন্দ্রসচিব আবু সেলিমকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, বোর্ড নির্ধারিত রচনামূলক প্রশ্ন কেন্দ্রে না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করে প্রায় ৪০ মিনিট পর তা বিতরণ করেন কর্তৃপক্ষ। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা কেন্দ্রের মূল ফটকে জড়ো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা ও কেন্দ্রসচিব মো: আবু সেলিম ভূঁইয়া অভিভাবকদের বিষয়টি বুঝাচ্ছেন এবং পরীক্ষার্থীদের লস টাইম ৪৫ মিনিট দেয়া হয়েছে বলে জানান।

না’গঞ্জে ৩৬৮৮ জন অনুপস্থিত
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ৩ হাজার ৬৮৮ জন পরীক্ষার্থী।

জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এসএসসি, সমমানের পরীক্ষায় মোট উপস্থিত ছিল ৩০ হাজার ১৪৭ জন এবং অনুপস্থিত ছিল ৩৬৮৮ জন। এর মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতি ৩ হাজার ৩৯২ জন। এ বছর নারায়ণগঞ্জ জেলায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৪০টি কেন্দ্রে মোট ৩৪ হাজার ১০৫ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছে।

সোনারগাঁওয়ে ভুল প্রশ্ন বিতরণ
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সোনারগাঁওয়ে গত বছরের সিলেবাসের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য কেন্দ্রসচিবের অবহেলাকে দায়ী করেছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
সোনারগাঁওয়ের বৈদ্যেরবাজার এনএএম পাইলট উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে সোনারগাঁও জিআর ইনস্টিটিউশনের ২০ জন পরীক্ষার্থী তাদের বহু নির্বাচনী পরীক্ষা ভুল প্রশ্নপত্রে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

কেন্দ্রসচিব কামাল হোসেন জানান, পরীক্ষার্থীদের কোনো ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া হয়নি। প্রশ্ন সঠিক আছে। এতে পরীক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হবে না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রধান জানান, ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে অবগত নই। তবে দুই-একজন পরীক্ষার্থীর প্রশ্ন বিতরণে ভুল হয়েছিল।

পটিয়ায় ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র বিতরণ
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, পটিয়ায় এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র বিতরণ করায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়ে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পাশের বিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষার্থীদের দেয়া হয়। খলিলুর রহমান বালিকা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের ৩০১, ৩০২ ও ৩০৩ কক্ষে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, এই কেন্দ্রে এবার ৮৯১ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। অভিভাবকেরা জানান, তিন কক্ষে প্রায় ৩০ জন পরীক্ষার্থীকে ২০১৮ সালের প্রশ্নপত্র দেয়া হয়।

পরীক্ষার্থীরা ওই প্রশ্নপত্র দিয়েই উত্তর লিখতে থাকে। প্রায় ১০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর বিষয়টি কেন্দ্র সচিব ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামসুল ইসলাম জানতে পারেন। পরে পাশের বিদ্যালয় থেকে প্রশ্নপত্র এনে পরীক্ষার্থীদের দেয়া হয় এবং তাদেরকে উত্তর লেখার জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার রাতে যোগাযোগ করা হলে কেন্দ্র সচিব বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, প্রশ্নপত্র কম হওয়ায় ২০১৮ সালের প্রশ্ন দেয়া হলেও পরে ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টদের ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেয়া হয়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাইনুদ্দীন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেন।