বন্ধ হওয়া নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার জুনিয়র হাই স্কুল।
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ১০:০৩

নারায়ণগঞ্জের ড্রেজার জুনিয়র হাই স্কুল বন্ধ ঘোষণা

বন্ধ হয়ে গেল তিন শ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা

নারায়ণগঞ্জ শহরের কিল্লারপুল এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ড্রেজার পরিদপ্তরের ড্রেজার জুনিয়র হাই স্কুলটি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় ওই স্কুলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। তারা আশপাশের কোনো স্কুলেও ভর্তি হতে পারছে না। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে সর্বশেষ প্রায় তিন শ শিক্ষার্থী ছিল।

জানা গেছে, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্কুলটি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। নতুন বছরের প্রথম দিনে বিতরণের জন্য শিক্ষা অফিস থেকে সরকারি বইও এসেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের আদেশে ওই সব বই ফেরত দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্কুলটিতে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় তিন শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করত; যার মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা বেতনে এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাসে ৬০ টাকা, সপ্তমে ৭০ টাকা ও অষ্টম শ্রেণিতে ৮০ টাকা বেতন দিত শিক্ষার্থীরা। এর বাইরে প্রয়োজনীয় অন্যান্য খরচ ড্রেজার পরিদপ্তর নির্বাহ করত। স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ ১০ জন শিক্ষক ও একজন পিয়ন কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ লস্কর পদে কর্মরত নিজামউদ্দিনকে প্রধান শিক্ষক পদে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যান্য শিক্ষক ও পিয়ন ড্রেজার পরিদপ্তরে ঠিকাদারের অধিভুক্ত শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের জনবল কাঠামো গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার কারসাজিতে ড্রেজার পরিদপ্তরের স্কুল ও শিক্ষকদের এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর ড্রেজার পরিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এক চিঠিতে জানান, স্কুলটি যেহেতু প্রকাশিত গেজেটে স্থান পায়নি, তাই নতুন বছরে কোনো শিক্ষার্থীকে যেন ভর্তি করা না হয়। পরে ওই বছরের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্কুলটি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। স্কুলটির শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই দরিদ্র। চলতি বছর থেকে স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, বর্তমানে স্কুলটির বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ড্রেজার পরিদপ্তরের শ্রমিকদের সন্তান নয়। এরা স্থানীয় নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পরিবারের সন্তান। এ কারণে বন্ধ করে দেওয়ার আগে স্কুলটির শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্তৃপক্ষ তেমন চিন্তিত ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ড্রেজার পরিদপ্তরের কয়েকজন কর্মচারী জানান, লোকসানি প্রকল্প দেখিয়ে প্রকৌশলীরা স্কুলটি বন্ধ করে সেখানে একটি ট্রেনিং সেন্টার করার পাঁয়তারা করছেন।

স্কুলটির শিক্ষক পারভীন আক্তার মালা জানান, তিনি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে এখানে শিক্ষকতা করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী যেখানে ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছেন, দেশকে আলোকিত করছেন, তখন ড্রেজার জুনিয়র স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। স্কুলটির বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই আশপাশের বিভিন্ন শিল্প-কারখানার শ্রমিক ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। অনেকে কাজ করেও লেখাপড়া করত। বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ায় কতগুলো কচি স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের শেষ দিকে বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা পরিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও সিবিএর নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নিজামউদ্দিন বলেন, ‘আমাকে এখানে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে স্কুলটি বন্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার একজন ডেপুটি ডিরেক্টর এসেছিলেন। তিনি স্কুলটির চেয়ার টেবিল ও আসবাবপত্রের তালিকা করে নিয়ে গেছেন।’

ড্রেজার পরিদপ্তরের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক জানান, গত সোমবার তাঁরা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন। যাতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে নিরক্ষরমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সেখানে ড্রেজার জুনিয়র স্কুলটি বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ সরকারের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাতে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাঁরা দ্রুত স্কুলটি চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে ড্রেজার পরিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে স্কুলটি বন্ধ করা হয়েছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।’ স্কুলটির জায়গায় ট্রেনিং সেন্টার করার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি জানান, ভবিষ্যতে তা হতে পারে। তেমন কিছু হলে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তেই হবে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/priyo-desh/2019/02/02/732759