২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:৫২

সুন্দরবনে হরিণ শিকারি চক্র বেপরোয়া

শীত মৌসুমে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে সংঘবদ্ধ হরিণ শিকারি চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বন বিভাগ, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও চোরাশিকারিরা কৌশলে নাইলনের ফাঁদ, জাল, স্প্রিং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, গুলি ছুড়ে, কলার মধ্যে বর্শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদসহ পাতার ওপর চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হরিণ শিকার করছে। আর এর গোশ্‌ত খুলনার দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ , মংলা, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরসহ দেশের ভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি করছে। সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি গভীর রাতে চড়াপুটিয়া থেকে ৩৫ কেজি ওজনের একটি জবাইকৃত হরিণ ও ফাঁদ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে গত এক মাসে ১২২ কেজি গোশ্‌ত, জবাইকৃত হরিণের চামড়া, মাথা ও ফাঁদ উদ্ধার হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত দু’সপ্তাহের ব্যবধানে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ড পৃথক চারটি অভিযান চালিয়ে জবাইকৃত হরিণ, ৬৩ কেজি গোশ্‌ত, মাথা, চামড়াসহ শিকারিদের ব্যবহৃত হরিণ শিকারের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে। এর আগে গত ২১ থেকে ২৩শে নভেম্বর রাসমেলা চলাকালে বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে হরিণের গোশ্‌ত, ফাঁদ, সরঞ্জাম ও নৌকাসহ ৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বন আইনে মামলাও দেয়া হয়। এ সময় হরিণের মাথা ও চামড়াসহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে বনবিভাগ।

এ ছাড়া ২২ জনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

চড়াপুটিয়ার অফিস ইনচার্জ মো. ইসমাইল হোসেন জানান, ৩০শে জানুয়ারি রাতে মরাপশুরের কাগাখালে ভারানী দিয়ে টহলরত অবস্থায় একটি নৌকা, তার একটু উপরে ৩৫ কেজি ওজনের একটি জবাইকৃত হরিণ ও ২০০ হাত ফাঁদ উদ্ধার করা হয়। এ সময় নৌকায় থাকা চাদপাই স্টেশন থেকে ১৫ই জানুয়ারি নেয়া একটি মাছের পাসসহ মংলার দক্ষিণ চাঁদপাই ইউনিয়নের হাকিম হাওলাদারের ছেলে একলাস (৩৫), ইলিয়াস (৩২) ও ইয়াসীন হাওলাদার (২৯)কে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। এছাড়া গত ১৯ জানুয়ারি দিবাগত রাতে সুন্দরবন থেকে আট কেজি হরিণের গোশ্‌তসহ একটি চামড়া ও একটি মাথা উদ্ধার করে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আবদুুল্লাহ আল-মাহমুদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে হরিণের মাথা, গোশ্‌ত ও চামড়া উদ্ধার করা হয়। তবে পাচারকারিরা পালিয়ে যায়। এর আগে ১৭ই জানুয়ারি পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের তেরকাটি খাল এলাকা থেকে এলাকা থেকে ২৫ কেজি হরিণের গোশ্‌ত জব্দ করে বন বিভাগ। এ ছাড়া ৭ জানুয়ারি বনবিভাগ মংলার পশুর নদীর চিলাবাজার সংলগ্ন কানাইনগর এলাকা থেকে একটি ডিঙ্গি নৌকাসহ ৩০ কেজি হরিণের গোশ্‌ত উদ্ধার করে। অবশ্য এসব ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি বন বিভাগ।

এদিকে রাসমেলা ও পরবর্তী সময়ে বিপুল সংখ্যক হরিণ শিকারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। ‘সেভ দ্য সুন্দরবনের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগ ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় এবার রাস মেলায় অনেক বেশি হরিণ নিধনের ঘটনা ঘটেছে। বন বিভাগ ও প্রশাসনকে হরিণ শিকার রোধে আরো বেশি কঠোর হতে হবে। বন আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি বনসংলগ্ন লোকালয়গুলোতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচারেরও আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, নানা সীমাবদ্ধতা ও লোকবল সংকটের মধ্যেও হরিণ শিকারিদের অপতৎপরতা রোধ করতে বনবিভাগ সব সময় তৎপর। বনরক্ষীদের পাশাপাশি আমাদের স্মার্ট পেট্রোল দল সব সময় কাজ করছে। যাদের আমরা আটক করে আদালতে প্রেরণ করি তারা ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা গেলে এই জাতীয় অপরাধ সংঘটনের হার বহুলাংশে হ্রাস পাবে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন ভাবে সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়গুলোতে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করছি।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=157569&cat=3