২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:২০

সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা

সঞ্চয়পত্র দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি না হলেও অব্যাহতভাবে বাড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রথম ছয় মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যা গোটা অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে এই খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার কথা ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬২ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা।

দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যাংক আমানতের সুদহার নিম্নমুখী ও ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা কিছুটা কমে যাওয়ার কারণে সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনায় সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক ঋণের সুদ হার কম হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষজন সঞ্চয়পত্রকেই নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করে। এছাড়া পুঁজিবাজারের প্রতিও মানুষের আস্থা এখনও ফেরেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের জুলাই-ডিসেম্বর এই ছয় মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর আগের বছরের একই সময়ে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেয় ২৩ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুলাই- ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে নিয়েছিল ১৩ হাজার ৩০৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। ২০১৫ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে নিয়েছিল ১৩ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার নিয়েছিল দুই হাজার ৬৫১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে সঞ্চয়পত্র। এতে সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে ব্যাংক খাতের ঋণ ব্যবস্থাপনাতেও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। মূলত, ব্যাংকের আমানতের সুদের চেয়ে দ্বিগুণ মুনাফা মিলছে সঞ্চয়পত্রে। একারণেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে। এছাড়া, প্রতিবছর সঞ্চয়পত্রের পেছনে বিপুল পরিমাণ সুদ গুণতে হচ্ছে সরকারকে, যা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদায় করছে। আবার সরকারের বিপুল পরিমাণ সুদ গুণতে গিয়ে ঋণ ব্যবস্থাপনায় তৈরি হচ্ছে বড় ধরনের ঝুঁকি। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তহবিলেও টান পড়ছে।

জানা গেছে, মূলত দু’টি কারণে সবাই সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। প্রথমত, গ্রাহকদের কাছে অর্থের উৎস জানতে চাওয়া হয় না। দ্বিতীয়ত, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার যেকোনও আমানতের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। তবে সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক শামসুন্নাহার বেগম মনে করেন, ‘সঞ্চয়পত্র যারা কেনেন, তারা সুদের হার ছাড়াও এখানে টাকা রাখাকে নিরাপদ ভাবেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে (২০১৬-১৭) মোট বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার ১৩৫ কোটি। এর মধ্যে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরও বিক্রি কমেনি।

বর্তমানে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের চালু করা চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এগুলো হলো- পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এগুলোর গড় সুদের হার ১১ শতাংশের বেশি।

উল্লেখ্য, সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে। সেখান থেকে সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।

http://www.dailysangram.com/post/363407-