১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ৮:০৩

গণতন্ত্র রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে

এইচ এম আব্দুর রহিম : গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন দেখে মনে হয়েছে এ দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মত যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন তা গড়ে উঠছে না। বিশ শতকের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের অবস্থা কেমন হবে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। গণতান্ত্রিক বিশ্বের কয়েকটি দেশ অভাবিত সাফল্যের পথে এগিয়ে গেছে। সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে ।

গণতন্ত্র যদি জনগণের শাসন হয়, তাহলে জনসাধারণের জীবনের মান উন্নয়নই রাষ্ট্রীয় কর্মকা-ের মৌল লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন। উন্নত জীবনমান বলতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বোঝায় না। তার সঙ্গে জড়িয়ে ব্যক্তির জন্মগত অধিকারগুলোর সংরক্ষণ, সমাজে পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, সুশিক্ষার বিস্তার, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহনশীলতার উচ্চমাত্রা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি। এদিক থেকে বলা চলে, গণতস্ত্রই হলো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার আলোকবর্তিকা স্বরূপ এবং নাগরিকদের নৈতিক ক্ষমতার উৎস। কিন্তু গণতন্ত্র অর্থপূর্ণ হয় সৃজনশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্পর্শে। সৃজনশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের সম্মোহনী পরশেই গণতন্ত্রের ধারায় সমাজ জীবনের উপত্যকা প্লাবিত হয় । একুশ শতকব্যাপী, এর প্রথম ভাগতো বটেই, গণতন্ত্রের ঘনিষ্ঠসহচর ও সহযাত্রী থাকবে অবাধ মুক্তবাজার অর্থনীতি । গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতি বর্তমানে প্রায় সর্মাথক। গণতন্ত্রের প্রধান আবেদন হল, সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আনারা আমাদের ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক প্রতীক। কিন্তু বাজার অর্থনীতির সাফল্যের মূলে বারি সিঞ্চন করে খানিকটা ‘আমি’ বা ‘আমিত্বের’ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গণতন্ত্রের জন্য উপযোগী নয় ।

এসব সমস্যা নেতৃত্বে সঠিকভাবে অনুধাবনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র লাভ করবে না তার কাক্সিক্ষত উচ্চতা, এমনকি অনিশ্চয়তা ও সিদ্ধান্তহীনতার চোরাবালিতে গণতন্ত্র নিক্ষিপ্ত হতে পারে । উন্নয়নশীল বিশ্বে এ সম্ভাবনা প্রচুর । কেননা জনগণের প্রত্যাশা আকাশচুন্বি। কিন্তু রাজনৈনতিক নেতৃত্বের প্রস্ততি অপ্রতুল । অর্থনৈতিক দুর্দশা সীমাহীন, কিন্তু রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও ‘মোটিভেশন’ অত্যন্ত সীমিত। এ সমাজে গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতি দুইই নতুন । দুটির একটিও যুগোত্তীর্ণ হয়নি । সীমিত অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে গণতন্ত্র এসব সমাজের আকাক্সক্ষা বাড়িয়েছে । অর্থনীতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয়নি। তাই সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ, বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাস। বাজার অর্থনীতি প্রাণবন্ত হলে জনগণ, বিশেষ করে রাজনৈতিক দিক থেকে জনগণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাজার অর্থনীতির আনুগত্য স্বীকারে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। একুশ শতকের গণতন্ত্রের জন্য শঙ্কার হেতু এখানেই। দলীয় নেতৃত্বের জাতীয় নেতৃত্বে উত্তরণ না ঘটলে এ আশঙ্কা থেকে যায় । এ প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত এ বিষয় চিন্তাবিদদের চিন্তা আকৃষ্ট হওয়া উচিত। উন্নত বিশ্বের গণতন্ত্রের কথা স্বতন্ত্র। এসব সমাজে বাজার অর্থনীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ ও সেবা রাজনৈতিক নেতৃত্বে জনসমষ্টির মধ্যে সুবিন্যস্ত করে গণতন্ত্র ও মুক্ত অর্থনীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেছে।

উন্নয়নশীল বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখনো গণতন্ত্রের প্রথম পাঠ সমাপ্ত করেনি । বিরোধীতা তাদের কাছে এখন অসহ্য । রাজনৈতিক নেতারা তাদের প্রতিপক্ষকে শত্রুহিসেকে চি‎িহ্ন‎ত করতে অভ্যস্ত এবং শত্রু দলনে এদের জুড়ি নেই । তারা যা বোঝেন তাই সঠিক । অন্যের মতামতকে কোন অবস্থায় প্রাধান্য দেন না । ব্যক্তিগত বুদ্ধি দ্বারা পরিচালিত হয় । সমষ্টিগত আলোর কোন প্রভাব গড়েনি ।

জনসাধারণের কথা ক্ষমতায় আগেণ বটে; তাদের কাজকর্মে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার ত ফলন ঘটে না । দলীয় নেতা থেকে জাতীয় নেতা উত্তরণের কোন প্রয়াস তাদের নেই । তাই জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে দলীয় স্বার্থকে তারা প্রধান্য দিয়ে থাকে । ফ্রান্সের স¤্রাট চতুর্দশ লুইয়ের মতো তারা শুধু মুখে বলেন না বটে, মনে মনে বিশ্বাস করেন তারাই‘রাষ্ট্র’। বর্তমানের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য ইতিহাসের ছেঁড়া পাতায় তারা মুখ ঢাকেন । জাতীয় ঐক্যের কথা বললেও কাজকর্মে প্রতিনিয়ত জাতিকে বিভক্ত করার প্রয়াসে তারা লিপ্ত জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে রাখতে পারলে তাদের ক্ষমতার ভীত স্থায়িত্ব লাভ করতে পারবে । কাজ করার পরিবর্তে বিতর্কিত বক্তব্যকে স্থাপন করার জন্য অধিক চেষ্টা চালিয়ে থাকে। তাই বাচালতা হয়ে উঠে তাদের মূলধন । আইনের শাসন সহ¯্রবার উল্লেখ করে ও ব্যক্তিগত প্রভাবকে মুখ্য নীতি মনে করেন তারা । রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত পাশ কাটিয়ে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে দলীয় স্বার্থে, কোন কোন সময় ব্যক্তি স¦ার্থকে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরের প্রভাবশালী মহলের সাথে গাটছাড়া বাঁধেন । এই অবস্থায় আর যাই হোক ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের ধারা আর প্রাণবন্ত হবে না । গণতন্ত্রের আবেদন বর্তমানে হয়ে উঠেছে বিশ্বজনীন ।

তাই একুশ শতকের গণতন্ত্রের ধারা সুরক্ষার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নতুনভাবে সজ্জিত হতে হবে । নতুন ভাষায় রাজনৈতিক নেতাদের কথা বলা শিখতে হবে । অতীত থেকে ফিরে এসে বর্তমানকে গ্রহণ করতে হবে এবং ভবিষ্যতের রঙিন সুরে বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে হবে। পুরানো দিনের ভাব-ভাষা ঝেড়ে মুছে নতুন দিনের জটিলতা সর্ম্পকে অবহিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে । রাজার অর্থনীতির কার্যকারিতার জটিল জালে গণতন্ত্রের প্রবাহ যেন আটকে না যায় । হাজারো জটিলতার মধ্যে গণতন্ত্রের গতিশীলতা যেন স্থবির না হয় । বিশেষ করে বাজার অর্থনীতির অর্জিত প্রভাব, বৈভব যেন জনগণের করায়ত্ত হয়, সে কৌশল আয়ত্তে আনা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের মূল নিহিত রয়েছে জোর প্রয়োগে নয় ।

বরং শান্তিপূর্ণ মূল্য বোধের ভিত্তিতে গড়ে সংকট সমাধানের উদ্যোগে, গভীর বিশ্বাসে। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র হচ্ছে আলোচনা পর্যালোচনা এ জন্য প্রয়োজন হয় অনুধাবনের এমন এক কাঠামো, এখানে তারা শুনবেন অনুভব করবেন এবং সাধারণ সংস্কৃতির প্রতি অনুগত থাকবেন । এক অর্থে গণতন্ত্রে নেই কোন শাসক, নেই কোন শাসক। গণতন্ত্রে বিদ্যমান থাকে বিভিন্ন স্তর ও শ্রেণীর মধ্যে যৌক্তিকতাপূর্ণ যোগাযোগ । এই যোগাযোগের মধ্যে কার্যকর থাকে সমস্যা সমাধানকল্পে প্রশাসন এবং তার আইনের শাসনের কাঠামো নেতা নন প্রবল পরাক্রমশালী ব্যক্তি । তিনি হলেন সমস্যাপীড়িত জনতার মধ্যে তাঁদের মুখপাত্র,যুক্তিবাদী প্রাজ্ঞ যোগাযোগকারী, যুক্তবাদীতার প্রতিনিধি। নেতৃত্বে এমন রূপান্তর না ঘটলে গণতন্তের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন । বাজার অর্থনীতিতে রয়েছে নিজস্ব গতি । রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রধান ভূমিকা এ ক্ষেত্রে সে গতিকে জনকল্যাণের প্রতি প্রযুক্ত করা । গণতন্ত্রে রয়েছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আবেদন । এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের আবেদনকে সমাজজীবনে প্রতিফলন করা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করা। বাজার অর্থনীতিতে অগ্রগতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সমাজ তার অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু গণতন্ত্র অর্থপূর্ণ হয় সাম্য ও সৌভ্রাত্বের মধ্যে।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজন হয় ব্যক্তিগত অথবা গ্রুপ পর্যায়ে মুনাফা অর্জনের জন্য বাঁধ ভাঙা জোয়ারের শক্তি। কিন্তু গণতন্ত্রের শ্রী বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয় সমষ্টিগত প্রজ্ঞা ও সমাজে ধীরে ধীরে উন্নত গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির আবহ। এসব কারণে বলা যায়, সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া গণতন্ত্রের আকাশ কুয়াশামুক্ত হয় না । প্রয়োজন হয় সজ্ঞান ও সচেতন রাজনৈতিক নেতৃত্বের । এ নেতৃত্বের পথ আমাদের সমাজ প্রশস্ত হোক। সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সীমাহীন অনিয়মের নির্বাচন ছিল এটা। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা এ অনিয়মের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে । তাদের দাবি হল এ নিবাচনের ফলাফল বাতিল করে তিনমাসের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু সরকার এ বিষয়টি কোন আমলে নিচ্ছে না। এদিকে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করেছেন । তাদের মন্ত্রী সভা থেকে ৩৬ জন হেভিওয়েট নেতাকে বাদ দেয়া হয়েছে । ৩১জন তরুণ সংসদকে মন্ত্রীত্ব দিয়েছেন ।।ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ছাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে এসরকারে সংসদে তাদের ৭ জন সংসদ যোগ দিবেন না । তবে তারা তিন মাসের মধ্যে শপথ না নিলে তাদের সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে । কেননা সংবিধানের ৬৭(১)অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ভোটে জয়ী হয়ে যদি কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেন, তাহলে সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন থেকে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার আসনটি শূন্য হবে ।

এবার সব দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচন সম্পন্ন হলেও ইসি একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠুনির্বাচন সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে । বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা কলঙ্কজনক অধ্যায়ের অবতারণা ঘটেছে। গণতান্ত্রিক দেশের জন্য এটা একটা বিরল ঘটনা । এ নির্বাচনে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষুণœ হয়েছে । ফলে দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয় তা শতভাগ প্রমাণিত হল ।

তবে আগামীতে ২০ দলের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। খালেদা জিয়া জেলখানায় । তার মুক্তির ব্যাপারে আশার আলো আপাতত দেখা যাচ্ছে না। তারেক রহমান যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত । আপতত মির্জা ফকরুল ইসলাম দলের নেতৃত্বে আছেন। তার চেয়ে অনেক সিনিয়র নেতা দলে আছেন । এমতবস্থায় দলের মধ্যে বিভাজন তৈরী হওয়ার আশংকা রয়েছে । এ অবস্থায় দেশের সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে নইলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মহাবিপর্যয় আসার সম্ভাবনা একবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না । সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না । বিগত দশম সংসদে বি এন পির অবর্তমানে জাতীয় পার্টি সরকারিদলে ছিল আবার বিরোধী দলে ছিল। একটা বড় দলের জন্য এটা কোন মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না । একাদশ সংসদে সরকারী দলের চাপে এরশাদের জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । শক্তিশালী বিরোধীদল না থাকায় সরকার একদলীয় হয়ে যায়।গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না । প্রধানমন্ত্রী নিজেই আক্ষেপ করেছেন একাদশ সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকায়। ঐক্যফ্রন্টের ৭ জন নিয়ে যেমন শক্তিশালী বিরোধী দল হয় না, ঠিক তেমনি জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে থাকলেও তার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই । দশম জাতীয় সংসদে ভোটার বিহীন নির্বাচন করারপর মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। বিগত ৫বছরে কোনউদ্যোগ নেয়া হয়নি ।

প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের দাবির মুখে একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ,সুষ্ঠু হওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তা হয়নি। ঐক্যফ্রন্ট সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি করেছিল কিন্তু একটি দাবী ও মানা হয়নি । তার পরও তারা নির্বাচন গিয়ে ছিল কিন্তু বিরোধী দল নির্বাচনের মাঠে কাজ করতে পারেনি। তার উপর তফশীল ঘোষণার পরও এগার সহ¯্রাধিক নেতাকর্মীসহ প্র্র্র্র্র্র্র্র্রায় ২ডজন ধানের শীষের প্রার্থীকে আটক করা হয় । যা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল । নির্বাচনের পর কিছু লোমহর্ষক ঘটনা গোটা জাতীর বিবেক নাড়িয়ে দিয়েছে । ধানের শীষে ভোট দেওয়ার কারণে নোয়াখালির সুবর্নচরে চার সন্তানের জননীকে স্বামী সন্তানদের সামনে নরপশুরা ধর্ষণের ঘটনা,রাজশাহী কলমা গ্রামের ধানের শীষে ভোট বেশী পড়ায় পুরো গ্রামের সব মানুষকে শাস্তির আওতায় আনার পদ্ধতি হিসেবে গ্রামটিকে একটি বিছিন্ন জনপদে পরিণত করা ; গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা, সেচ ব্যবস্থা, ডিসের লাইনসহ জীবন যাত্রারজন্য প্রয়োজনীয় জিনিস বন্ধ করে জীবনযাত্রা রুদ্ধ করে দেয় । তৃতীয় বিশ্বের মুক্তবাজার অর্থনীতির বেশীরভাগ দেশের সরকারী অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক র্দুনীতি হাতধরাধরি করে চলে। কিন্তু র্দুনীতির মাত্রাগত দিক থেকে বাংলাদেশ দুঃখজনক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পর তা বাস্তবায়নের সময়কালে প্রাক্কলিত বাজেটের আকারে দু তিনগুন বেড়ে যাওয়া এবং রাস্তা সেতুর মত প্রকল্পগুলোর অস্বাভাবিক খরচ সীমাহীন দুর্নীতির ইঙ্গিতবহ বলে মনে করা হয়।

বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ করেও সর্বনিম্ম মানের অবকাঠামো তৈরী করা আমাদের বিশেষত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধনী আরো ধনী হওয়ার বিশ্বব্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ গত বছর প্রথম স্থান অধিকার করেছে। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বা অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র না বাড়লে ও পরিসংখ্যানে জানা যায় গত এক দশকে দেশ থেকে টাকা পাচারের পরিমাণ ৬ লক্ষ কোটি টাকার বেশী । সরকার এক শ্রেণীর মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তাদের দেশে বিদেশে শত শত কোটি টাকার সম্পদের যে ফিরিস্তি দেখা যায় তার পেছনে দেখা যায় সম্পদের তছরুপ ও লুণ্ঠন । নতুন সরকার র্দুনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাইলে এবং সে লড়াইয়ে জিততে চাইলে মন্ত্রী এমপিদের সম্পদ ও কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে । অনেকের মনে থাকার কথা ,নবম সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ লাভের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের মন্ত্রী এমপিদের সম্পদের তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে নির্দেশ অদ্যাবধি বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক র্দুনীতিতে গত ১০ বছরের সাক্ষী আমরা। কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে ব্যাংকিং সেক্টরের সর্বনাশ করা হয়েছে। কিভাবে শেয়ার বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। কিভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ হ্যাক করে মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা চুরি করা হয়েছে।

এসব প্রশ্ন নিয়ে যে সব ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়ে ছিল তা অপসারণ করে স্বচ্ছতার আলোয় আনা সরকারের দুর্নীতি বিরোধী লড়াইয়ের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ । সরকার নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হলে সরকারী দলের সব সাবেক এমপি, আমলা ও ডাকসাইটে নেতার বড় বড় র্দুনীতির অভিযোগ আছে, প্রথমেই তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে । তার আগে অবশ্যই বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন বিভাগের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, আইনগত সক্ষমতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজনীতি নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এমপিদের উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্ষমতাকে সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার বানাবেন না। কিন্তু বাস্তবে সেটা কতটুকু প্রতিফলিত হয় সেটা দেখার বিষয়। তবে জনগণের বড় প্রত্যাশা হলো, নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনায় নিজেদের অংশিদারিত্বের অধিকার রক্ষা করা এবং সরকারের সমালোচনাসহ সংবিধান স্বীকৃত রাজনৈতিক অধিকার রক্ষায় সরকার এবং বিচার বিভাগসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা জরুরী ।

http://www.dailysangram.com/post/363280