ক্যাম্পাসে হাঁটু গেড়ে ও কান ধরে অভিনব আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা—
৩১ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:০০

হাঁটু গেড়ে ও কান ধরে অভিনব আন্দোলন

'এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটাই ছিল আমাদের শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। জীবনে হয়তো কোনো পাপ করেছি, যার প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বের কারণে আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এমনিতেই আমরা সেশনজটের মধ্যে পড়েছি। তার ওপর ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় আমাদের শিক্ষাজীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রশাসন ও শিক্ষকরা আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিতে তাদের পা ধরেও বিবেককে আমরা নাড়া দিতে পারিনি। এমন অবস্থায় আত্মাহুতি দেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই।'

ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাঁটু গেড়ে ও কান ধরে অভিনব আন্দোলন কর্মসূচি পালনকালে ক্ষোভে-দুঃখে-কষ্টে এমন কথা বলছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র শামীম ইসলাম।

শুধু শামীম নন, দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষক আন্দোলনের ফলে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে শিক্ষাজীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হওয়ায় সিএসই, বিজ্ঞান ও ফিশারিজ অনুষদের শত শত শিক্ষার্থী বুধবার অভিনব আন্দোলন কর্মসূচি পালনকালে এমন কথা জানান। কারও কারও মাথায় যমটুপি ও হাতে ফাঁসির রশিও ছিল।

ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র সজীব চৌধুরী মাথায় যমটুপি আর হাতে ফাঁসির রশি নিয়ে বলেন, 'আড়াই মাস ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবি জানালেও শিক্ষক ও প্রশাসন আমাদের কথা শুনছেন না। বাবা-মা অনেক আশা নিয়ে তাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় আমাদের শিক্ষাজীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমাদের আত্মাহুতি দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ই নেই। আমরা আত্মাহুতি দিলে, তার দায়ভার প্রশাসন ও শিক্ষকদেরই নিতে হবে।'

ক্লাস ও পরীক্ষাবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসন ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তারা শুধু তাদের নিজেদের কথাই ভাবছেন, শিক্ষার্থীদের কথা ভাবছেন না।

এদিকে হাবিপ্রবির সংকট নিরসনে গত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় নিজ বাসভবনে আন্দোলনরত নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক, প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম, ছাত্রছাত্রী নিয়ে বৈঠকে বসেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম। রাত ১২টা পর্যন্ত বৈঠক চললেও দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে চলা সংকটের নিরসন হয়নি। ফলে বুধবারও ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়নি।

ক্লাস ও পরীক্ষা চালু না হওয়ায় বাধ্য হয়েই হাবিপ্রবির সিএসই, বিজ্ঞান, ফিশারিজ অনুষদের শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বুকে ফেস্টুন নিয়ে হাঁটু গেড়ে এবং কান ধরে অভিশাপ মোচনের প্রতীকী কর্মসূচি পালন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সহকারী অধ্যাপকদের নেতৃত্বদানকারী কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, 'ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না, এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক, শিক্ষার্থীদের দেখে কষ্ট লাগে। কিন্তু আমরা আমাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করছি। এই জায়গা থেকে সম্মানজনক নিষ্পত্তি পাচ্ছি না।'

হাবিপ্রবির প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতা প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ বলেন, 'মঙ্গলবার আমরা সমাধানের জন্য বসেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন ও কিছু শিক্ষকের জন্যই আলোচনাটি ভেস্তে গেছে। এটি খুবই দুঃখজনক।'

এ ব্যাপারে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম জানান, একাধিকবার আলোচনার পরও কোনো সিন্ধান্ত হয়নি। এরপরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যাতে করে অতি দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে, এরপরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর থেকে বেতনবৈষম্য দূরীকরণ, সহকারী অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত ও নারী শিক্ষিকাদের শ্নীলতাহানিকারীদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টার বহিস্কার ও দুই সহকারী অধ্যাপকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও। আড়াই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় হাবিপ্রবির বিজ্ঞান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ফিশারিজ অনুষদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা।

https://samakal.com/bangladesh/article/19012148