৩১ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৭:৪৬

জানুয়ারিতেই বিএসএফ-এর হাতে নিহত ৬ বাংলাদেশী

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : সীমান্তে ভারতীয় বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক নিরস্ত্র বাংলাদেশী হত্যা থামছেই না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বারবার সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যত সেটি শুধুই আইওয়াশ। প্রতিবছরই একইহারে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে বিএসএফ। বছর দুয়েক আগে নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বলা হয়েছে, সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হবে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এই আশ্বাসের পর গত দুই বছরে কমপক্ষে ৩৬ জন বাংলাদেশী হত্যার শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছে প্রায় ৭০ জন। এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে বিএসএফ যেন বাংলাদেশীদের হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধের সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন নেই। দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশীদের হত্যার ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত পুরোদমে চলছে। তার নির্বাচিত এলাকা ঠাকুরগাঁও সীমান্তে গুলীতে বাংলাদেশী নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের এক বৈঠকের পর বলা হয়েছিল, এখন থেকে আর সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশীদের হত্যা করা হবে না। কিন্তু বাস্তবে এই সিদ্ধান্তের কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি। সরকার সীমান্তে রক্ত ঝরানো বন্ধ করতে পারেনি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের কথার সঙ্গে কাজের মিল কখনও নেই। এরা সবসময় জনগণকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে প্রতারণা ও ধোঁয়াশার মধ্যে রাখে। গণবিচ্ছিন্ন সরকার বলেই এরা কখনও জনগণের জানমালের তোয়াক্কা করে না। আওয়ামী লীগ সরকার বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশীদের হত্যা ও ধরে নিয়ে নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি দাবি করে এজন্য বর্তমান সরকারের ‘নতজানু পররাষ্ট্র নীতি’কে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে এধরনের নির্মম হত্যাকান্ড বন্ধ করার জোরালো আহবান জানান।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জানুয়ারিতে সীমান্তে কমপক্ষে ৬ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। আসক জানায়, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে জানুয়ারি মাসে ৬ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। তারা এঘটনার গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজার দেওয়া এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি মাসেই ঠাকুরগাঁওয়ে ৪ জন, নীলফামারী ও রাজশাহীতে যথাক্রমে ১ জন করে মোট ৬ বাংলাদেশীর মৃত্যু ঘটেছে।

সীমান্তহত্যা বন্ধে ভারত সরকারের বারবার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা সত্ত্বেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আসক ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সীমান্তহত্যা বন্ধে দ্রুত জোরদার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে বিএসএফ এর হাতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে কিশোরী ফেলানী হত্যা ছিল আলোচিত। এই হত্যার বিচার এখনো চলছে। ফেলানীর লাশ কাটাতারের উপর ঝুলিয়ে রাখে বিএসএফ। এই হত্যা ইতিহাসের বিষয়ই শুধু নয়, সীমান্ত হত্যার প্রতীক হয়ে রয়েছে। সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশের ছবিটা কখনো ভোলা যাবে না। এ হত্যাকান্ডের পর সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তখন ভারতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, গত সাত বছরেও ফেলানী হত্যাকারীর শাস্তি হয়নি। এখনও উচ্চ আদালতে ফেলানী হত্যার বিচার চলছে। তবে ফেলানী হত্যার পর সীমান্তে হত্যা বন্ধের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেক আলাপ-আলোচনা ও প্রতিশ্রুতির পরও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। বিএসএফ’র গুলীতে সীমান্তে প্রায়ই বাংলাদেশী নাগরিকরা নিহত হচ্ছেন। পৃথিবীর কোথাও সীমান্তে এতো হত্যাকান্ডের ঘটনা লক্ষ্য করা যায় না। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানীর লাশের ছবি দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় উঠে আসার পর ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নিষ্ঠুরতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে মন্তব্য প্রকাশ করতে থাকে বিবেকবান মানুষরা। তারা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে ‘মৃত্যর দেওয়াল’, দক্ষিণ এশিয়ার ‘বার্লিন প্রাচীর’ আখ্যা দেয়। মানবাধিকার সংস্থা হিউমান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র বর্বরতার নিন্দা জানায়। গত ৭ জানুয়ারি ছিল সেই ফেলানীর হত্যাকা-ের ৭ম বার্ষিকী। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, বিএসএফ সদস্যরা খুব কাছে থেকে তার চোখের সামনেই ফেলানীকে গুলী চালিয়ে হত্যা করে। বিএসএফ কোন প্রকার সতর্ক করা ছাড়াই গুলী চালায়। ওরা থামতে বললেই ফেলানী বেঁচে যেত।

এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালের ৯ মার্চ কাঞ্চনপুরের পুনারবাস সীমান্তে ভারীয় সীমান্ত রক্ষীরা গুলী করে গোবিন্দ গৌতম নামে এক নেপালী নাগরিককে হত্যা করে। গোবিন্দকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করেছে নেপাল সরকার। নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। তার সন্তানদের লেখাপড়ার খরচও বহন করছে রাষ্ট্র। নেপাল সরকার এই হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ভারতও এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। কিন্তু বিএসএফ’র হত্যাকা- নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে তেমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে দেখা যায় না। এ জন্যই কি বিএসএফ এতো বেপরোয়া?

সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাবেক প্রধান ও কূটনীতিকদের মতে, সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত প্রতিশ্রুতি দিলেও তাতে আন্তরিকতার ঘাটতি আছে। কারণ সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশ্বাসের উল্টোটা মাঠপর্যায়ে ঘটতে থাকলে সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। সাধারণত সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যার পর প্রথমে বিজিবি মৌখিকভাবে ও পরে লিখিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে থাকে। এরপর বিজিবির কাছ থেকে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও তদন্তের দাবি জানায়।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি বলেছেন, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত, যেখানে দুই দেশের মধ্যে লড়াই হচ্ছে না। অথচ নিরস্ত্র লোকজনকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ঘনিষ্ঠ দুই নিকট প্রতিবেশী দেশে সীমান্ত হত্যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুঃখ লাগে, ভারতের মানবাধিকারকর্মীদের এ নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় না। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো সীমান্তে এভাবে হত্যাযজ্ঞ চলেনা।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার জানায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরের শাসনামলে বিএসএফ এর হাতে ৪১৪ জন নিরস্ত্র বাংলাদেশী মারা গেছে। এদের অধিকাংশকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া গুলিতে আহত হয়েছে ৬১৭ জন। অপহরণ করা হয়েছে ৪৮৪ জনকে। একই সময়ে ধরে নেয়ার পর খোজ মেলেনি প্রায় ২০ বাংলাদেশীর। গেল বছরে সীমান্তে ১১ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এছাড়া তাদের হামলায় আহত হয়েছে ২৪ জন বাংলাদেশী। অপহরণ করা হয়েছে ১৬ জনকে। সংগঠনটি জানায়, ২০১৭ সালে বিএসএফ এর হাতে মারা যায় ২৫ জন বাংলাদেশী। আহত ৩৯ জন, অপহরণ হয় ২৮ জন। ২০১৬ সালে হত্যা করা হয় ২৯ জনকে।

গুলিমে আহত হয় ৩৬ জন, অপহরণ করা হয় ২২ বাংলাদেশীকে। ২০১৫ সালে ৪৪ বাংলাদেশীকে হত্যা করে বিএসএফ। তাদের হাতে আহত হয় ৬০ জন, অপহরণ করা হয় ২৭ জনকে। একজনকে ধরে নেয়ার পর ফেরৎ পাঠানো হয়নি। ২০১৪ সালে হত্যা করা হয় ৩৫ জনকে। আহত হয়েছে ৬৮ জন, অপহরণ করা হয় ৯৯ জনকে। ধরে নেয়ার পর খোঁজ মেলেনি ২ জনের। ২০১৩ সালে বিএসএফ এর হাতে মারা যায় ২৯ জন। আহত হয়েছে ৭৯ জন, অপহরণ করা হয় ১২৭ জনকে। বিএসএফ কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন এক নারী। ২০১২ সালে হত্যা করা হয় ৩৮ বাংলাদেশীকে। এ ছাড়া ১০০ জনকে আহত করা হয়েছে। অপহরণ করা হয় ৭৪ জনকে। ২০১১ সালে ৩১ জনকে হত্যা করা হয়। গুলিতে আহত হয়েছে ৬২ জন। অপহরণ করা হয় ২৩ জনকে। ২০১০ সালে ৭৪ জন নিরস্ত্র বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী। আহত হয়েছে ৭২ জন। অপহরণ করা হয় ৪৩ জনকে। ধরে নেয়ার পর খোঁজ মেলেনি দুই জনের। ২০০৯ সালে ৯৮ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। তাদের হাতে আহত হয়েছে ৭৭ জন। এই বছরে ১৩ বাংলাদেশীকে ধরে নেয়ার পর খোঁজ দেয়নি বিএসএফ। এছাড়া ২০১৮ সালে ৬১ জন, ২০০৭ সালে ১১৮ জন, ২০০৬ সালে ১৫৫ জন, ২০০৫ সালে ৮৮ জন, ২০০৪ সালে ৭২ জন, ২০০৩ সালে ২৭জন, ২০০২ সালে ৯৪জন, ২০০১ সালে ৮৪ জন এবং ২০০০ সালে ৩১ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। গত ১৮ বছরে বিএসএফ এর হাতে হত্যা, আহত, অপহরণ ও গুম হয়েছে চার হাজার ২৫৯ বাংলাদেশী।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আজিজুর রহমান সম্প্রতি বলেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধে ভারতের পক্ষ থেকে বারবার যে আশ্বাস দেওয়া হয়। তা পূরণে তাদের সদিচ্ছার অভাব আছে। এ কারণেই এ ধরনের বিয়োগান্ত হত্যা অব্যাহত আছে। এজন্য তিনি বাংলাদেশের কুটনৈতিক ব্যর্থতাকেও দায়ী করেন।

বিএসএফ অভিযোগ করে, সীমান্তে যে সব কারণে বাংলাদেশীদের হত্যা করা হয় তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধ অনুপ্রবেশ। বিশেষ করে গরু ব্যবসায়ীই বেশী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা গরু ব্যবসার সাথে জড়িত তারা শুধুই বাংলাদেশী নন। ভারতের ব্যবসায়ীরাও জড়িত। বিএসএফ নিজ দেশের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়না। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলীতে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত জেনারুল হরিপুর উপজেলার ৪নং ডাঙ্গীপাড়া ইউপির তালডাঙ্গী গ্রামের আব্দুল তোয়াফের ছেলে। গত ২২ জানুয়ারি মঙ্গলবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে।

হরিপুর থানা পুলিশের ওসি আমিরুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার ভোরে জেনারুলসহ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী হরিপুর উপজেলার মিনাপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে। এ সময় মালদ্বখন্ড ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা গুলী ছোড়ে। এতে গুলীবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জেনারুল নিহত হন। তবে বাকি গরু ব্যবসায়ীরা পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন। ৪২-বিজিবির কারিগাঁও কোম্পানি কমান্ডার এনামুল হক বলেন, নিহত জেনারুলের লাশ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফেরত দেয়ার কথা হয়েছে। বিজিবিকে লাশ ফেরতের বিষয়টি ভারতের মালদ্বখন্ড ক্যাম্পের বিএসএফ নিশ্চিত করেছে। ৪২-বিজিবির অধিনায়ক লে কর্নেল গাজী নাহিদুজ্জামান বলেন, সকল-প্রকার প্রক্রিয়া শেষ করে বিকেলে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে নিহত গরু ব্যবসায়ীর লাশ ফেরত আনা হবে। এই ঘটনার চারদিন আগে ১৮ জানুযারি ঠাকুরগাঁওযরে রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলীতে জাহাঙ্গীর আলম রাজু (২১) এক বাংলাদেশী নিহত হন।

হত্যার পাশাপাশি বাংলাদেশীদের ধরেও নিয়ে যাচ্ছে বিএসএফ। গত ৪ জানুয়ারি রাতে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্ত থেকে রেজাউল করিম (৩৩) নামের এক বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ)। উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের মাস্টারবাড়ি সীমান্তের ৮৪৩ নম্বর মেইন পিলারের ৭ নম্বর সাবপিলার সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আটক রেজাউল করিম ওই ইউনিয়নের ইসলামপুর (ডাঙাপাড়া) এলাকার আব্দুল জলিলের ছেলে। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, রেজাউলসহ কয়েকজন বাংলাদেশী গরু আনতে ওই সীমান্ত হয়ে ধরলা নদী পথে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। এ সময় ভারতীয় কোচবিহার-৬১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের পানিশালা ক্যাম্পের টহল দল তাদের ধাওয়া করলে অন্যরা পালিয়ে এলেও রেজাউল করিম আটক হয় । বডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রংপুর ৬১ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেজর মুনীরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে বিএসএফ’কে প্রতিবাদ পত্র পাঠানো হয়েছে।

সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী হত্যা প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী উপজেলা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন-উর-রশিদ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভারতের ব্যবসায়ীরাই কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু পারাপারের ব্যবস্থা করে। ওই গবাদি পশুদের চোরাচালান করার সময় বাংলাদেশ থেকে মেষপালকরা মারা যায় এবং উভয় দেশের প্রধান ব্যবসায়ীরা নাগালের বাইরে চলে যায়।

ফেনী ১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আক্তার বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনও এত বড় ঘটনা [রোহিঙ্গা প্রবাহ] পরেও অক্ষত। উভয় পক্ষ যখনই সমস্যার সমাধান করার জন্য আন্তরিক হবে তখনই সমস্যার সমাধান হবে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে চাইলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি তা করতে পারি, আমরা চোরাচালান সহ অন্যান্য অপরাধের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব।

ফোলানি হত্যার মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিঙ্কন বলেন, প্রথমত, আমাদের নাগরিকদের নো ম্যানের জমি থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী লোকেরা তাদের পেশা পরিবর্তন করে এবং সীমান্ত এড়াতে পারে তবে মারা যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। লিঙ্কন বলেন, উভয় জাতিই বেশি সহনশীল হওয়া উচিত এবং তারা একে অপরকে সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রধান অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য শূন্য সহনশীলতা দেখানো উচিত।

জানা গেছে, আগামী ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ড. আব্দুল মোমেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। চলতি শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশের তিস্তা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানির তীব্র সঙ্কটসহ সীমান্তে হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত থাকলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের আসন্ন ভারত সফরে এই ইস্যুগুলো অগ্রাধিকারে নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দিল্লিতে প্রথম সফরটিতে তিনি সৌর্হার্দ্য ও সম্প্রীতির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। নির্দিষ্ট কোনো ইস্যুর ওপর আলোকপাত করতে চান না ড. মোমেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেসিসি বৈঠকে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর উপায়সহ সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/363232