১৫ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ৮:২৫

মন্ত্রীর বক্তব্যে আতঙ্কে আইন কর্মকর্তারা

পদত্যাগের বিষয়টি প্রকাশ্যে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না-ব্যারিস্টার শফিক

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এক বক্তব্যে দেশের সব আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে পদত্যাগ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার সুপ্রিমকোর্টসহ দেশের সব আদালত অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন মন্ত্রীর ওই বক্তব্য।

সব আইন কর্মকর্তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে আইনমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য নিয়ে দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরাও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। একজন আইনজ্ঞ বলেছেন, এ নিয়ে প্রকাশ্যে বলার কিছু আছে বলে মনে করি না। তবে কোনো কোনো আইন কর্মকর্তা মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মনে করলেও নিজের পদ ধরে রাখার জন্য সিনিয়র নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন কেউ কেউ। মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, পদত্যাগ না করলে যারা একেবারে অযোগ্য তাদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।

রোববার সুপ্রিমকোর্টে এক আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে কিছু দিনের মধ্যে পুরনোদের পদত্যাগ করতে বলা হবে। সব অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, পিপিসহ সব সরকারি আইন কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে বলব। যাতে নতুন নিয়োগ দেয়া যায়।’ তিনি বলেন, যারা ত্যাগী তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। হাইব্রিড রাখব না। নতুনদের জায়গা দিতে হবে।’ ওই সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে একজন অ্যাটর্নি জেনারেল ছাড়াও দু’জন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৭৯ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, ১০৮ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রয়েছেন। এছাড়া প্রতি জেলায় একজন পিপি, একজন এপিপি, একজন জিপি (সরকারি উকিল) ও একজন এজিপি রয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের সব আইন কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে আইনমন্ত্রণালয় জেলা ও ট্রাইব্যুনালে আইন কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ দেয়।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়টি ওপেনলি বলার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কেন তিনি অনুভব করলেন সেটা উনার ব্যাপার। উনি যদি কাউকে বাদ দিতে চান তাহলে মন্ত্রণালয়ের আদেশের মাধ্যমে করতে পারেন। ওপেন বলার দরকার কি ছিল?’

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। উনি সবাইকে পদত্যাগের কথা বলেছেন। এটা উনার এখতিয়ার।’

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এখানে আমরা সরকারি দায়িত্ব পালন করছি। নতুনদের কাজ করার ডিমান্ড আছে। নতুনদের সুযোগ দেয়া দরকার। নতুন সরকার এসেছে পরিবর্তন হতেই পারে। মন্ত্রীর উদ্যোগে খারাপ কিছু দেখছি না, প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করি।’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহের হোসেন সাজু যুগান্তরকে বলেন, ‘নতুন সরকার আসার পর সংযোজন-বিয়োজন হতেই পারে। আইনমন্ত্রী পদত্যাগের যে বিষয়টি বলেছেন তা শুনেছি। এখন তিনি কিভাবে সেটা করবেন একান্তই উনার বিষয়। এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। তিনি বলেন, ‘যারা দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের যেন রাখা হয় সে প্রত্যাশা করি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল যুগান্তরকে বলেন, ‘সবাইতো আর অযোগ্য না। প্রত্যেক কর্মকর্তার কাজের রিপোর্ট দেখা হোক। তারপরও সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আমরা মেনে নিতে বাধ্য।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/133269/