২ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ১২:২৮

ভোটের জেরে গণধর্ষণের অভিযোগ ঢাকায় মানববন্ধন আসকের উদ্বেগ

ভোটের জেরে রোববার রাতে এক নারীকে গণধর্ষণের পর মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। রোববার একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবিলী ইউনিয়নের এক গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে ওই নারীকে মারধর ও ধর্ষণ করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

অন্যদিকে ঘটনা তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করেন, যুবকদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দেয়ায় তার ওপর এমন আক্রমণ করা হয়েছে। হামলাকারী যুবকদের একটি দল আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং ভোটের দিন তাদের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার প্রস্তাবে রাজি না হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে ভোট দেয়ায় তার ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। চরজব্বর থানার ওসি (তদন্ত) মো. ইব্রাহীম খলিল জানান, এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।

ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে মামলাটি করেছে। পুলিশ দুই আসামি রুহুল আমিন মেম্বার ও বাদশা আলমকে গ্রেপ্তার করেছে।

বাদশা আলম প্রকাশ কুড়াইল্যা বাসুকে মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-২ এ সোপর্দ করলে জামিন না মঞ্জুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তারা যদি আওয়ামী লীগের হয় তদন্ত করে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পুলিশে সোপর্দ করা হবে। এ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর নির্বাচনের সমন্বয়কারী মো. মাহবুবুর রহমান জাবেদ বলেন, এমপি সাহেব ঘটনা শুনেছেন। তিনি পুলিশকে কোনো ছাড় না দিয়ে আওয়ামী লীগের হলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।

ধর্ষিতার স্বামী সিরাজ মিয়া জানান, সোমবার সন্ধ্যায় চর জব্বর থানার ওসি (তদন্ত) হাসপাতালে এসে আমাকে চর জব্বর থানায় নিয়ে যায় এবং থানায় লেখা এজাহারে আমার সই নেয়। বলেছেন এটাই মামলা। তবে এখন দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের গডফাদার রুহুল আমিন মেম্বার ও আরো কয়েকজনের নাম মামলায় দেয়া হয়নি এবং পুলিশ তাকে ধরেও ছেড়ে দিয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, অন্য আসামিরাও প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ সুপার ইলিয়াস শরীফ জানান, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আমলে নেয়া হবে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষিতার চিকিৎসারও খোঁজ খবর নেন। এদিকে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল আসকের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানান।

আসকের বিবৃতিতে বলা হয়, নিজের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট প্রদানের অধিকার প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার। সেটিকে ভয় দেখিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা অন্যথা প্রতিশোধ পরায়ণতার বশবর্তী হয়ে এমন ঘৃণ্যতম আক্রমণ একটি সভ্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না। আসক দ্রুত ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে অভিযোগটি খতিয়ে দেখার এবং সত্যতা সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের প্রতিশোধপরায়ণতা পরিহার করতে সব পর্যায়ের সমর্থকদের কঠোর নির্দেশনা প্রদান করা জরুরি। কোনোভাবেই যেন এমন ঘৃণ্যতম কাজ দলীয় পৃষ্ঠপোষকতা না পায়।

অন্যদিকে ভোট প্রদানকে কেন্দ্র করে এক নারীর গণধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। রিয়াজুল হক বলেন, ?বিষয়টি গণমাধ্যমের মাধ্যমে তারা শুনেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কমিশন কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন বলে জানান তিনি।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=152648&cat=3