শোক সংবাদ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর পূর্ব সাংগঠনিক জেলার আমীর মাস্টার নূরুন্নবী ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় ৬০ বছর বয়সে রাজধাধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন)। তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র ও ১ কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গিয়েছেন।
যশোরের গণমানুষের প্রিয় নেতা মাস্টার নূরুন্নবী (রাহি.)-এর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন
৮ আগস্ট সকাল ১০ টায় যশোর সদরের বকচরে অবস্থিত নিজ গ্রামের বাড়িতে মাস্টার নূরুন্নবীর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের পরিচালক জনাব মোবারক হোসাইন, স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দসহ হাজারো মুসল্লী জানাযায় শরীক হন। জানাযা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানাযা পূর্ব এক স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতায় বলেন, “মুহতারাম আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে জাতীয় দায়িত্ব থাকায় আজ এখানে আসতে পারেননি। তিনি তাঁর পক্ষ থেকে আমাদেরকে এখানে পাঠিয়েছেন। তিনি মাস্টার নূরুন্নবী (রাহিমাহুল্লাহ) এর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সালাম ও গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, “মাস্টার নূরুন্নবী ছিলেন গণমানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা। তিনি ছিলেন ছাবেত তথা দৃঢ়চেতা একজন নির্ভীক দায়িত্বশীল। কোনো ধরনের ভয়ভীতি ও বিপদাপদ তাঁকে কখনো নিষ্ক্রীয় করতে পারেনি। তাঁর ছবর ও ধৈর্যশীলতা ছিল উল্লেখ করার মত এবং সকলের জন্য অনুকরণীয়। তিনি ছিলেন সকল ফ্যাসীবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠ। তিনি কখনো অন্যায়ের নিকট মাথা নত করেননি। আমি তাঁর মাগফিরাতের জন্য মহান রবের নিকট দোয়া করছি এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”
অপর এক সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণে মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, “একটি আদর্শবাদী আন্দোলন ও সংগ্রামের জন্য যেমন নিবেদিত প্রাণ নেতা দরকার, যেমন বিশুদ্ধ ও নিখুঁত মনের নেতা দরকার তিনি ছিলেন মাস্টার নূরুন্নবী। তিনি যেমন সাংগঠনিক কাজে দক্ষ ছিলেন, তেমনি আন্দোলন-সংগ্রামেও ছিলেন দক্ষ। মাস্টার নূরুন্নবী দল-মত-নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন, আমীন। ”
শোকবাণী
মাস্টার নূরুন্নবীর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ৮ আগস্ট এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।
শোকবাণীতে তিনি বলেন, মাস্টার নূরুন্নবী ছিলেন পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ মনের অধিকারী একজন নেতা। দুনিয়ার সম্পদের প্রতি তার কোনো লোভ-লালসা ছিল না। তিনি অনাড়ম্বর জীবন-যাপন করতেন। তিনি ছিলেন মানবদরদি একজন নেতা। মানুষের বিপদ দেখলেই তিনি সেখানে ছুটে যেতেন। তিনি ধনী-গরিব সকলের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখতেন। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী, নির্ভীক ও দক্ষ সংগঠক ছিলেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় যশোর অঞ্চলে সংগঠনের কাজ গতিশীল হয় এবং সংগঠন এক মজবুত ভিত্তি লাভ করে। তাঁর ইন্তিকালে আমরা ইসলামী আন্দোলনের একজন নিবেদিত প্রাণ দাঈকে হারালাম। তিনি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। আমি তাঁর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি।
শোকবাণীতে তিনি আরও বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁকে ক্ষমা ও রহম করুন এবং তাঁর কবরকে প্রশস্ত করুন। তাঁর গুনাহখাতাগুলোকে ক্ষমা করে দিয়ে নেকিতে পরিণত করুন। কবর থেকে শুরু করে পরবর্তী প্রত্যেকটি মঞ্জিলকে তাঁর জন্য সহজ, আরামদায়ক ও কল্যাণময় করে দিন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন এবং তাঁর শোকাহত পরিবার-পরিজনদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।