১৪ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ১১:০৭

মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খানের ইন্তিকাল: চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াত নেতৃবৃন্দের গভীর শোক প্রকাশ

আবু তাহের খান আমাদের প্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবেনঃ জানাযায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ

-মুহাম্মাদ শাহাজাহান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরীর মজলিশে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্য, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জনাব আবু তাহের খান আজ ২২ রমজান পবিত্র জুমার দিনে চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দীর্ঘদিন তিনি হৃদরোগ, লিভারসহ শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। গত বুধবার শারীরিক ভাবে অসুস্থ বোধ করলে হাসপাতালে ভর্তি হন, সেখানে ক্রমেই শারীরিক অবস্থায় অবনতি হওয়ার পর আজ তিনি মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যান। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন পুত্র ও তিন কন্যাসন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে যান। তাঁর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন।

এক শোকবার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, মহান রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন প্রাণপ্রিয় সহকর্মী, শ্রদ্ধাভাজন মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের খান। তাঁর ইন্তেকালে গভীর শূন্যতা অনুভব করছি। ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিতপ্রাণ সদা কর্মপাগল দায়িত্বশীল প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহের ভাইয়ের ইন্তেকালে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা মরহুম তাহের ভাইয়ের জন্য গাফুরুর রহীম আল্লাহ তায়ালার নিকট জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম কামনা করছি। দ্বীনের জন্য ওনার ত্যাগ, কুরবানী, সময়, শ্রম সবকিছু আল্লাহ কবুল করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ক্ষমা ও রহম করুন এবং তাকে নিরাপত্তা দান করুন। তাকে সম্মানিত মেহমান হিসেবে কবুল করুন ও তার কবরকে প্রশস্ত করুন। তার গুণাহখাতাগুলোকে নেকিতে পরিণত করুন। তার জীবনের নেক আমলসমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দান করুন। তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে শোকবাণীতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাদেরকে এ শোকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন।

জানাযায় নেতৃবৃন্দ

প্রবীণ শ্রমিকনেতা আবু তাহের খানের জানাযা স¤পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী ঝাউতলা বাজারস্থ ডিজেল কলোনী মসজিদ মাঠে আজ বাদ আসর মরহুমের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। অশ্রুকাতর চোখে জানাযায় অংশ নেন সর্বস্তরের শ্রমিকজনতা। শ্রমিকরা তাদের প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে জানাযাস্থলে।

জানাযায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মাদ শাহাজাহান।

মুসল্লিদের সমবেত হওয়াকালীন জানাযাপূর্ব সময়ে বক্তব্য রাখেন নগর আমীর মুহাম্মাদ শাহাজাহান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোঃ তসলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শীরো বাঙালি, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান ও মরহুমের মেঝো ছেলে মুহাম্মদ আবু সৈয়দ।

জানাযাপূর্ব সমাবেশে অশ্রসিক্ত নয়নে মুহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, আমাদের নেতা ও আমাদের ভাই আবু তাহের খান ছিলেন একজন সংগ্রামী মানুষ। জীবনের শুরু থেকে শেষাবধি তাঁর জীবন ছিল কর্মমুখর। তিনি যেমন এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবনবাজি রেখেছিলেন, ঠিক তেমনি এই দেশকে একটি ইনসাফপূর্ণ সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত করতে তিনি আজীবন কাজ করেছেন। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে তিনি সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের আন্দোলনে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ দায়িত্বশীল।

শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি লস্কর মোঃ তসলিম বলেন, আমাদের ভাই আবু তাহের খান আজ চলে গেলেন আল্লাহর ডাকে। কিন্তু তিনি আমাদের প্রেরণার বাতিঘর হয়ে থাকবেন। তিনি তাঁর হাতে গড়া জনশক্তির মাঝে বেঁচে থাকবেন। তাঁর দাওয়াত ও তারবিয়াতে গড়ে ওঠা মানুষদের আমল ও আল্লাহর দ্বীনের পথে তৎপরতা মরহুমের জন্য সদকায়ে জারিয়া হয়ে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

মুক্তিযোদ্ধা শীরো বাঙালি বলেন, আবু তাহের খান ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা। আমার ইউনিটে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁর হাতে এখনো বুলেটের আঘাতের চিহ্ন আছে। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল বলিষ্ঠ। তাঁর সাথে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও তাঁর দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি দিতে আমার দ্বিধা নেই।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান বলেন, মরহুম আবু তাহের খান ছিলেন আমাদের অভিভাবক। তাঁর বিদায়ে আমরা অভিভাবকহারা হয়ে পড়লাম। তাঁর চিরবিদায় আমাদের জন্য বিরাট বেদনার। আমাদের মুরব্বি ও নেতা আবু তাহের খানের জন্য আমরা এখন কেবল দুটো কাজই করতে পারি: এক. তাঁর জন্য আমরা প্রাণ খুলে দুআ করতে পারি। দুই. তিনি যে আন্দোলন ও সংগঠনের জন্য সারা জীবন কাজ করেছেন, আমরাও তাঁর দেখানো পথে তাঁর রেখে যাওয়া মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। ইনশাআল্লাহ, আমরা দুটো কাজই অব্যাহতভাবে করে যাব।

জানাযায় শ্রমিকজনতার পাশাপাশি জাতীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। জানাযায় যোগ দিয়ে শোক প্রকাশ করেন মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক আহসানুল্লাহ, শ্রমিক কল্যাণের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক, উত্তর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নুরুল আমিন চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর নজরুল ইসলাম, সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, সাংগঠনিক স¤পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, কোতোয়ালি থানা উত্তর আমীর আমির হোসেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক সহ-সভাপতি ডা. আবদুল ওয়াছি, মহানগরীর সাধারণ স¤পাদক মকবুল আহমদ ভূঁইয়া, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু তাহের, জামায়াতের কোতোয়ালী থানা দক্ষিণের আমীর আকম ফরিদ, বিআরইলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবিএম এহতেশাম উদ্দিন, উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আলাউদ্দিন সিকদার, উত্তর জেলা শ্রমিক কল্যাণের সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, সাধারণ স¤পাদক জসিম উদ্দিন আযাদ, দক্ষিণ জেলা শ্রমিক কল্যাণের সভাপতি মাওলানা নুর হোসাইন, সেক্রেটারি আরিফুর রশিদ, ইসলামিক ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল সেক্রেটারি শামসুল আলম, চট্টগ্রাম বন্দর শ্রমিকনেতা কাজী জাহাঙ্গীর হোসাইন, শ্রমিকনেতা মনিরুল ইসলাম মজুমদার, শিক্ষাবিদ মাওলানা মমতাজুর রহমান প্রমুখ।