১৩ জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার, ২:৪৮

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জাতিকে বিভক্তির দিকে ঠেলে দিবে

বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১২ জানুয়ারী জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ১৩ জানুয়ারী প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে কটাক্ষ করে আক্রমণাত্মক ভাষায় যে সব মন্তব্য করেছেন তা তার দোষারোপের রাজনীতিরই অংশমাত্র।
জাতি আশা করেছিল যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার ব্যাপারে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের আহŸান জানাবেন। কিন্তু তিনি তা না করে বিরোধী দল বিশেষ করে জামায়াত ও বিএনপিকে দোষারোপ করে যে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন তাতে দেশবাসী হতাশ হয়েছেন।
তিনি যেভাবে জামায়াত ও বিএনপিকে তীর্যক ভাষায় আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন তা জাতিকে বিভক্তির দিকেই ঠেলে দিবে যা কারো কাম্য হতে পারে না। দেশে কোন ঘটনা ঘটলেই সরকার যেভাবে কোন তদন্ত এবং তথ্য প্রমাণ ছাড়াই জামায়াত ও বিএনপিকে দায়ী করে ঢালাওভাবে বক্তব্য দিয়ে আসছেন গত ১২ জানুয়ারীর ভাষণে তারই পূনরাবৃত্তি করেছেন।
তার বক্তব্যের জবাবে আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘গত বছর অবরোধ আন্দোলন চলাকালে বিএনপি ও জামায়াতের জোটের পেট্রোল বোমা হামলায় ২৩১ জন মানুষ নিহত হয়েছে, ১১৮০ জন আহত হয়েছে, ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ী ভাংচুর করেছে, ১৮টি রেল গাড়ী ও ৮টি লঞ্চে আগুন দিয়েছে, সরকারী অফিস, স্থাপনা ও ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে’ মর্মে যে সব অভিযোগ করেছেন তার কোন সত্যতা নেই। তথ্য প্রমাণ ছাড়াই তিনি এ সব ঢালাও অভিযোগ করেছেন। দেশবাসী সকলেই জানেন যে, বিএনপি ও জামায়াতের বদনাম করার জন্য আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় সরকার দলীয় সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীই ঐ সব ঘটনা ঘটিয়েছে এবং তারা সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে হাতে নাতে জনতা ও পুলিশের নিকট ধরা পড়েছে। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ সব খবর গুরুত্ব সহকারে তখন প্রকাশিত হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারী সোমবার গভীর রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ধাইনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বাক্কারের নিকট থেকে আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী ৬ রাউণ্ড গুলি ও ৮ কেজি গান পাউডার উদ্ধার করেছে (দৈনিক দিনকাল ১৩/১/২০১৬)। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমার ময়দান থেকে সরকার দলীয় ৯ জন সশস্ত্র ছিনতাইকারীকে আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করেছে। এ সব ঘটনা থেকেই প্রমাণি হচ্ছে যে, বর্তমান সরকারের দলীয় লোকেরাই অতীতে যেমন বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে, এখনও ঘটাচ্ছে। আর সে সব ঘটনার জন্য জামায়াত ও বিএনপিকে দায়ী করে তিনি মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
সরকার তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদেরকে হত্যা করে জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছেন। দেশে-বিদেশে কোথাও এ বিচারের গ্রহণযোগ্যতা নেই।
সরকার কণ্ঠ চেপে ধরে গণমাধ্যমকে হত্যা করছেন। আর জাতির উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, গণমাধ্যম ¯^াধীনভাবে সমালোচনা করতে পারছে। এর চাইতে আর দুঃখজনক কথা কী হতে পারে! বর্তমান সরকার আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি ও ইসলামী টিভি বন্ধ করে দিয়েছে। আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান এখনও কারাগারে বন্দী আছেন। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, সরকার প্রধানের বক্তব্য সঠিক নয়।
দেশের উন্নয়নের কোন চিত্র জাতির সামনে নেই। দেশের ভাঙ্গা-চুড়া রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। দেশের দরিদ্র ভূমি হীন ও বেকারের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। শিল্প-কারকানায় উৎপাদন নি¤œগামী। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর ভাষণের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
আগামীতে জাতির সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরে সঠিক বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহŸান জানাচ্ছি।”