২ মার্চ ২০১৬, বুধবার, ১১:০০

এক-এগারোর কুশীলবদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান

এক-এগারোর কুশীলবদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২ মার্চ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “সম্প্রতি এক-এগারোর কুশীলবদের নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে একটি ইংরেজী দৈনিকের সম্পাদকের ঐ সময়ের ডিজিএফআই প্রদত্ত সংবাদ ছাপানোর ব্যাপারে ভুল স্বীকারকে কেন্দ্র করে আলোচনা শুরু হয়। ফলে তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় মানহানির মামলা রুজু হয়।

এক-এগার সৃষ্টির পেছনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটের রাস্তায় জামায়াতে ইসলামীর একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে শসস্ত্র আক্রমণ করা হয়। এ আক্রমণে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ৬ জন নেতা-কর্মীকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এতে সহস্রাধিক নেতা কর্মী আহত হয়। শুধু তাই নয় লাশের উপর উঠে নাচানাচিও করা হয়। এ সন্ত্রাস সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। মিডিয়ার বদৌলতে সারা দুনিয়ার মানুষ এই বর্বরোচিত হামলার ঘটনা দেখে হতবাক হয়।

২৮ অক্টোবরের এই ঘটনার সূত্র ধরে এক-এগারোর সৃষ্টি হয়। সারাদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ বিরোধীদলের অর্ধশাধিক নেতা-কর্মীকে খুন করা হয়। শুধু মাহফুজ আনামই নয় এক-এগারো সৃষ্টির পেছনে যে সব সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী জড়িত ছিল তাদের সকলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যারা বিভিন্ন মিডিয়ায় মনগড়া অন্যায় চাপ প্রয়োগ করে মিথ্যা, বিভ্রান্তিমূলক এবং চরিত্র হননকারী সংবাদ পরিবেশন করতে বাধ্য করত তাদেরসহ সকল কুশীলবদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন। ইনসাফের দাবিও তাই। কিন্তু ঐ সময় সেনা সমর্থিত জরুরী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যারা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তারা বলেছিলেন এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল, আমরা সরকার গঠন করলে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেব। তারাই তো আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। তাই তাদের পক্ষে বিচার করা আদৌ সম্ভব হবে কি? বর্তমান সরকার ঐ সময়কার একজন সেনা কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেন। তার মেয়াদকাল ৩ বার বৃদ্ধিও করা হয়।

এক-এগারোর জরুরী সরকার দেশকে রাজনীতি শূন্য করার পরিকল্পনা করেছিল। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ অনেকের উপর সীমাহীন অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। ক্যাংগারু ট্রায়াল করে অনেক রাজনীতিবিদদের স্ত্রী ও সন্তানদেরকেও সাজা দিয়েছিল। বর্তমান সরকার সেনাসমর্থিত জরুরী সরকারের কারো বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই ঐ সময়কার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মনে ক্ষোভ, ব্যথা ও বেদনা রয়েছে। এ সরকারের কর্মকাণ্ড দেখেই দেশবাসীর কাছে এটা পরিষ্কার যে এক-এগারোর জরুরী সরকার বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আন্দোলনের ফসল এ কথা মিথ্যা নয়।

তাই দেশবাসীর আজকের দাবি এক-এগারোর কুশীলবদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। লগি-বৈঠা দিয়ে যে ছয়জন জামায়াত-ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হয়েছিল, যাদের নির্দেশে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল এবং যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল তাদের সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। দুর্ভাগ্যক্রমে এ নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল তাও বর্তমান সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এক-এগারোর কুশীলবদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এ সংক্রান্ত সৃষ্ট ধূম্রজাল নিরসনের জন্য আহবান জানাচ্ছি।”