১৩ এপ্রিল ২০১৬, বুধবার, ৭:০৭

শিবির নেতা গিফারী ও শামীমকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করার নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা

ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ পৌরসভা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবু জর গিফারী ও জেলার কেসি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, ছাত্রশিবিরের নেতা শামীমকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে গুলি করে হত্যা করার নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ১৩ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা আবুজর গিফারী ও শামীমকে আটক করার পর নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করার এ ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই।

পুলিশ গত ১৮ মার্চ কালিগঞ্জ পৌরসভা ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবু জর গিফারীকে এবং কেসি কলেজের ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা শামীমকে ২৫ মার্চ আটক করে নিয়ে যায়। তাদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের পরিবার-পরিজন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে বারবার খোঁজ নিয়েও তাদের সন্ধান পায়নি। ফলে তারা দীর্ঘদিন যাবত মানসিক যাতনা ভোগ করছেন। তারা দু’জনই ছিল সম্ভাবনাময় মেধাবী যুবক। তাদের হারিয়ে তাদের পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন মানসিকভাবে ভেংগে পড়েছেন।

আজ ১৩ এপ্রিল তাদের দু’জনের গুলিবিদ্ধ লাশ যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের জোড়াদহ গ্রামের একটি পুুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের আত্মীয়-পরিবার-পরিজন তাদের শোকে মুহ্যমান এবং আমরাও গভীরভাবে শোকাহত। তাদের আত্মীয়-পরিবার-পরিজনদের সান্ত¡না জানানোর মত কোন ভাষা নেই।

তাদের পরিবার-পরিজন এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির তাদের মুক্তির দাবী জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে এবং তাদের পরিবার ও ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। প্রতিনিয়তই কেবল ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীই নয়, বিরোধী দলমতের অসংখ্য নেতাকর্মী ও সমাজের সাধারণ মানুষকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে রাতের অন্ধকারে কিংবা স্পষ্ট দিবালোকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। তাদের স্বজনরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে অসহায়ের মত ঘুরছে। কিন্তু তাদেরকে সহযোগিতা করে রাষ্ট্রের এ সমস্ত নাগরিদেরকে উদ্ধার করা তো দূরের কথা, তাদের আহাজারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কানে ঢুকে বলে তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। হয়তো তারা রহস্যজনক নিরবতা পালন করে কিংবা কখনো কখনো রহস্যজনক কথাবার্তা ও আচরণ করে থাকে। এ থেকে জনগণ নিশ্চত যে, এ কাজ সরকারের ইংগিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীই করছে।

কোন নাগরিক অপরাধ করে থাকলে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচার হবে। কিন্তু এভাবে নাগরিকদের গুম করে হত্যা করা বাংলাদেশের সংবিধান ও মানবাধিকারের চরম লংঘন। এ ধরনের হত্যাকান্ড সংঘটন পরিকল্পিত হত্যাকা- হিসেবেই বিবেচিত হবে।

দেশের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল, সচেতন মহল ও মানবাধিকার সংগঠনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সংগঠন এবং জাতিসংঘ এ বিষয়ে দফায় দফায় উদ্বেগের কথা জানিয়ে সরকারকে তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করে দিলেও সরকার কোন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। নাগরিকদের সকল গুম ও খুনের সমুদয় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, কোন সরকারই চিরস্থায়ী ও শেষ সরকার নয়।

দেশবাসীর সাথে সাথে সকল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি এ চরম জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি আহবান জানাচ্ছি।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঝিনাইদহ জেলার নেতা আবু জর গিফারী ও শামীমের হত্যার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে এ ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

আমি আবু জর গিফারী ও শামীমের শাহাদাত কবুল করার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে দোয়া করছি আল্লাহ তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।”