২৩ এপ্রিল ২০১৬, শনিবার, ১১:১৩

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, ভোট ডাকাতি ও ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনার তীব্র নিন্দা

আজ ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬১৪টি ইউনিয়নে ব্যাপক সংঘাত, সংঘর্ষ, অনিয়ম, কারচুপি, ভোট ডাকাতি ও ব্যাপক ভোটকেন্দ্র দখলের ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২৩ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিত দেশের ৬১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত, সহিংসতা, ব্যালট ডাকাতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জোর করে ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মেরে বাক্সে ঢুকানো ও জালভোট দিয়ে সরকারী দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করা হয়েছে। এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, বর্তমান সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।
 
১ম ও ২য় ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক সংঘাত, সংঘর্ষ ও প্রাণহানি, ভোট ডাকাতি, ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনার ব্যাপক সমালোচনার পর দেশবাসী আশা করেছিল যে, সরকার ও আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হবে। কিন্তু তৃতীয় দফার নির্বাচনে ব্যাপক ব্যালট ডাকাতি, ব্যালট ছিনতাই, সংঘাত-সংঘর্ষ, সহিংসতার ঘটনার দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সরকার ও  নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হয়নি।
 
১ম, ২য় ও তৃতীয় দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫৮ জন লোক নিহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ২৫ জন প্রার্থী তৃতীয় দফার নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, ১ম দফার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৯৬ জন, দ্বিতীয় দফায় ৩১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮১টি ইউনিয়ন পরিষদে বিরোধী দলের কোন প্রার্থীই ছিল না। এ দেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন।
 
শেরপুর জেলার সদর উপজেলার চরশেরপুরের একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৫ জন আহত হয়েছে। রাজবাড়ি জেলার বানিয়াকান্দি সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার মশিউল আযম চুন্নুসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কুমিল্লা সদর দক্ষিণে খেতসার ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে ও ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে এবং কুমিল্লা সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে ১ নং ওয়ার্ডে জাকুনিয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা ২০০টি ব্যালট পেপার ছিনতাই করায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। 
 
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জের ৬ নং গুপ্টি ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। বি-বাড়িয়ার চুনতা ইউনিয়নে এসি একাডেমীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সায়দাবাদ ইউনিয়নের পঞ্চসারটিয়া ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ঢুকায়। প্রায় সকল ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধী দলের পোলিং এজেণ্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। নাটোরে ৭টি ইউনিয়নের ৪টি ইউনিয়নে বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করেছে। নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার রামনারায়নপুর ইউনিয়নে বিরোধী দলের প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। উদাহরণ আর না বাড়িয়ে বলা যেতে পারে যে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় দফায় ব্যাপক অনিয়ম, সন্ত্রাস, সংঘাত, সংঘর্ষ, ব্যালট ডাকাতি ও ব্যালট ছিনতাই এবং প্রকাশ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে নৌকায় সিল মেরে বাক্সে ঢুকানো হয়েছে। নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি। নির্বাচনের নামে প্রহসন করে সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে দিচ্ছে। 
 
যে সব ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম, সংঘাত-সংঘর্ষ, কারচুপি, ভোট ডাকাতি, ব্যালট ছিনতাই ও জালভোট দেয়া হয়েছে সে সব ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করে নতুন নির্বাচন দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”