২৩ মে ২০১৬, সোমবার, ১০:১৭

জামায়াতে ইসলামীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সরকার রেহাই পাওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ, এইচ, মাহমুদ আলী গত ২২ মে বিকালে ইউরোপিয় ইউনিয়নের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে “বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডগুলো জামায়াত করেছে। সাম্প্রতিক সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও তার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলো যেমন, জামায়াতুল মুজাহিদীন (জেএমবি), আনসার-আল-ইসলাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টীম, হরকাতুল জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি-বি), হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ এবং আল-মুজাহিদ এই হত্যাকান্ডগুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে।” মর্মে যে ভিত্তিহীন অসত্য বক্তব্য প্রদান করেছেন তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের আজ ২৩ মে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ, এইচ, মাহমুদ আলী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যে ভিত্তিহীন অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন তাতে আমি বিস্ময় প্রকাশ করে তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার এ বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাচ্ছি যে, সাম্প্রতিক সংঘটিত কোন হত্যাকান্ডের সাথে যেমন জামায়াতের কোন স¤পর্ক নেই, তেমনি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বর্ণিত উপরে উল্লেখিত কোন সংগঠনের সাথেই জামায়াতের কোন সম্পর্ক নেই।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অসত্য বক্তব্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সম্মানিত বিজ্ঞ কূটনীতিকদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তার মনে রাখা উচিত যে, তিনি যদি মনে করে থাকেন যে, তিনিই সব কিছু জানেন ও বুঝেন অন্যরা কিছুই বুঝে না তাহলে সেটা হবে তার মস্তবড় বোকামী। বিজ্ঞ কূটনীতিকগণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালভাবেই অবহিত আছেন। কাজেই আমি আশা করি তাদের অসত্য বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা যাবে না।

বাংলাদেশে বর্তমানে সরকার অব্যাহতভাবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা কর্মীসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্য দিবালোকে বাসাবাড়ী থেকে ধরে এনে গুম করছে ও হত্যা করছে। তাদের হত্যা থেকে সাধারণ মানুষও রেহাই পাচ্ছে না।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করছে ও গুম করছে। আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসী নেতা-কর্মীরা নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের পর্যন্ত নির্বিচারে হত্যা করছে। তারা সংখ্যালঘুদের জায়গা জমি, ঘর-বাড়ী দখল করছে ও সংখ্যালঘুদের হত্যা করছে। দেশে বর্তমানে যে সব গুম, হত্যা, সন্ত্রাস ও ডাকাতি, ছিনতাই, দখলদারী, চাঁদাবাজী চলছে তার নাটের গুরু আওয়ামী লীগ। এ কারণেই দেশের জনগণের মনে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে যে, সাম্প্রতিক যে সব হত্যাকান্ড হচ্ছে তার সাথে কি আওয়ামী লীগই জড়িত?

জামায়াতে ইসলামীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সরকার রেহাই পাওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। জামায়াতের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সরকার রেহাই পাবে না। বাংলাদেশ সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এ দেশ কোন দল, ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর সম্পত্তি নয়। এ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে দেশবাসী সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির রাজনীতিকে ঘৃণা করে।

আমি স্পষ্ট ভাষায় চ্যালেঞ্জ দিয়ে জানাতে চাই যে, জামায়াতুল মিজাহিদীন (জেএমবি), আনছার-আল-ইসলাম, আনসার উল্লাহ বাংলা টীম, হরকাতুল জিহাদ (হুজি-বি), হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশ এবং আল-মুজাহিদ ইত্যাদি সংগঠনের সাথে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো জামায়াতের অংগ সংগঠন হওয়ার প্রশ্নই আসে না। জামায়াতের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করার হীন উদ্দেশ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঐ সব উগ্র সংগঠনের সাথে জামায়াতের সম্পর্ক থাকার কথা জুড়ে দিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছেন।

আমরা বহুবার বলেছি যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে পরিচালিত হয়ে আসছে। সরকার এবং সরকারী দল রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের সাথে সংশ্লিষ্ট। দেশকে সন্ত্রাস মুক্ত করতে হলে আগে সরকার এবং সরকারী দলের কর্মকান্ডে পরিবর্তন আনতে হবে। দেশের জনগণ সন্ত্রাসমুক্ত দেশ চায়।

আমি দৃঢ়তার সাথেই বলছি যে, সাম্প্রতিক সংঘটিত কোন হত্যাকান্ডের সাথে জামায়াতের কোন সম্পর্ক নেই। কাজেই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর অসত্য বক্তব্য রাখা থেকে বিরত থাকার জন্য আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।