অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ২ জুন বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের জন্য ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার যে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন তাকে অতি উচ্চাভিলাষী বাজেট হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ৩ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রস্তাবিত এ অতি উচ্চাভিলাষী ও ঘাটতি বাজেটের ফলে দেশের জনগণের দুর্ভোগ এবং দুর্দশা আরো বাড়বে। জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বৃহৎ বাজেটে বৃহৎ ঘাটতি হিসেবে ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। কিন্তু এ ঘাটতি কোথা থেকে পূরণ করা হবে তা নির্দেশ করা হয়নি। প্রস্তাবিত এ বাজেটে দেশী ও বিদেশী ঋণ প্রাপ্তির আশায় উচ্চ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বাজেটের ২৯ শতাংশই ঘাটতি বা ঋণ নির্ভর। প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতির ৩৮ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে পূরণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা থেকে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী ঋণ মিলে ১ লক্ষ ৪৯৫ কোটি টাকা ঋণনির্ভর বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। জাতির ঘাড়ে অতিরিক্ত করের বোঝা চাপবে ৬৫ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। পূর্বের নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই ব্যয় হবে ৮ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। নীট বিদেশী ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০ হাজার ৭৮৯ কোটি টাকা। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মাণ হচ্ছে যে, প্রস্তাবিত বাজেট বিদেশী ঋণ নির্ভর একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটে টেকসই উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার পদক্ষেপের গাল ভরা প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও উপেক্ষিত হয়েছে দেশের প্রান্তিক এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এই অর্থের ৭১ শতাংশেরও বেশী আসবে ভ্যাট ও আয় কর থেকে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট ও করের আওতা বাড়ানো হয়েছে। ফলে দরিদ্র জনগণের উপর করের বোঝা বাড়বে এবং সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য বাড়বে। সার্বিকভাবে বাজেটের বাস্তবায়ন ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় এবং কাঙ্খিত বৈদেশিক অর্থ প্রাপ্তি বাজেটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা রেখে অনৈতিক কাজ করা হয়েছে। এতে ঘুষ ও দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করা হয়েছে। বাজেটে খুচরা ও পাইকারী পর্যায়ে কর বাড়বে। মিডিয়ায় সব ধরনের বিজ্ঞাপনকে ভ্যাটের আওতায় এনে মিডিয়া সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, যা মিডিয়ার স্বার্থ বিরোধী।
প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.২ শতাংশ, যা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। কর ও ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি করায় জনদুর্ভোগ বাড়বে। সর্বনিম্ন করমুক্ত আয় সীমা আড়াই লক্ষ টাকা বহাল রাখা হয়েছে। অথচ করমুক্ত আয়ের টাকার সীমা আরো বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। বাজেটে মোবাইল ফোনের গ্রাহকদের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপানো হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের ফলে দাম বাড়বে আমদানি করা চাল, মশার ব্যাট, কেক, পাউরুটি, বিস্কুটসহ বেকারীর সামগ্রী, ওয়াশিং মেশিন, শিশুদের বই, কৃষি যন্ত্রপাতি, ট্র্যাভেল ব্যাগ, চা, সাগু, মেডিকেল যন্ত্রাংশ, কাগজ এবং এ জাতীয় উৎপাদন সামগ্রী, হার্ডবোর্ড, স্পঞ্জের স্যান্ডাল, প্লাস্টিক এবং রাবারের জুতা ও স্যান্ডাল এ সব দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত দরিদ্র জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দাম কমানো হয়েছে হাইব্রিড গাড়ী, মোটর সাইকেল, এলইডি বাতি ও সিমেন্টের কাঁচামাল ইত্যাদির। এসব দ্রব্যের মূল্য কমানোর ফলে ধনী লোকেরাই লাভবান হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সমতা ভিত্তিক সমাজ উন্নয়নের ভিত্তি রচিত হয়নি।
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের দলীয় লোকদের অবৈধ সুযোগ সুবিধা দিয়ে লালন পালন করে লুটেপুটে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দরিদ্র জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা প্রস্তাবিত বাজেটে রাখা হয়নি। বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যয় বরাদ্দ ২১% ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে দেশের জনগণের উপর জুলুম-নির্যাতন আরো বাড়বে।
বর্তমান সরকার জনগণের নির্বাচিত সরকার নয়। দেশের জনগণের প্রতি এ সরকারের কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ উপেক্ষা করে সরকারের দলীয় লোকদের ভোগবিলাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে সরকার একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা করেছে। তাই আমরা প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৬-১৭ প্রত্যাখ্যান করছি।”