আজ ৪ জুন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৬ষ্ঠ ধাপে বা শেষ ধাপে ৭০০ টি ইউনিয়নে ব্যাপক ভোট ডাকাতি, হত্যা, সন্ত্রাস ও সহিংসতা, কেন্দ্র দখল করে ব্যাপক জাল ভোট প্রদানের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ০৪ জুন প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “এবারের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের মত সন্ত্রাস ও সহিংসতা, খুনাখুনি, ভোট ডাকাতি, জালভোট প্রদান, অনিয়ম, নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন, ভোটকেন্দ্র দখল অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি। এবারের নির্বাচনে সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ, বোমাবাজি, সহিংসতা ও ভোট ডাকাতি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
গত ৫ ধাপে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সহিংসতায় প্রায় ১১৩ জন মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত ও পঙ্গু হয়েছে প্রায় ৮ হাজার লোক । গত ৩ জুন নড়াইলে একজন ও চট্টগ্রামে ১জন মানুষ নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছে। ৪ঠা জুন ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ৬ নং চরচান্দিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে বিরোধী দলের ১জন কর্মী নিহত হয়েছে, মোমেনশাহী জেলার গফরগাঁও-এ ১ জন ও নোয়াখালীতে ১ জনসহ মোট ৩ জন নিহত এবং শতশত লোক আহত হয়েছে। গত ৩ জুন নির্বাচনের আগের দিন কুমিল্লা জেলার মুরাদ নগর উপজেলায় সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র দখল করে রাখে এবং বিরোধী দলের লোকদের ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাজশাহীর পবা উপজেলার হাড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগের দিন ৩রা জুন স্থানীয় জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইনকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে তাকে ভোট দানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে প্রিজাইডিং অফিসারকে জিম্মী করে ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে। রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ভোট কেন্দ্র দখলের প্রতিবাদে বিরোধী দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলের প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মেরেছে। ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ের লংগাইর ইউনিয়নে বিরোধী দলের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে বেঁধে রেখে প্রাকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। পিরোজপুর সদর উপজেলার সিকদার মল্লিক ইউনিয়নে বিরোধী পোলিং এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারা হয়েছে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ভাংগরা পশ্চিম ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ব্যাপক জাল ভোট দিয়ে ৯৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দেখানো হয়েছে।
সরকারী দলের সহিংসতার অভিযোগে পাবনা সদর ও চাটমোহর উপজেলায় বিরোধী দলের ৪জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখলসহ সহিংসতার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বিরোধী দলের ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। কুমিল্লা সদর দক্ষিণে ৬ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। এসব ঘটনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি।
বর্তমান সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অন্যায় এবং অবৈধ কর্মকান্ডের দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে যে, সরকারের আজ্ঞাবহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদৌ সম্ভব নয়।
বর্তমান সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তামাসার মাধ্যমে নির্বাচনের অস্তিত্ব এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা নির্বাচন সম্পর্কে জনগণের চিন্তা ও সকল আগ্রহ নষ্ট করে দিয়েছে। দলীয় প্রতীকের মাধ্যমে নির্বাচন করে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসকে দেশের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
যে সকল ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালট ছিনতাই করে সিল মারা হয়েছে, ভোট ডাকাতি, সহিংসতা, জালভোট প্রদানসহ নানা অনিয়ম হয়েছে সে সব ভোট কেন্দ্রের নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”