শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েও বিদেশে বসে নানা ষড়যন্ত্র করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তবে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহবান জানিয়েছেন তিনি। আগস্ট বিপ্লবের পর গত তিন মাসে পতিত শেখ হাসিনা প্রতিবিপ্লবের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসতে চায়। ৫ আগস্টের চেতনায় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই অপশক্তিকে আমরা মোকাবেলা করবো। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থানে সংস্কার প্রয়োজন। বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ, সংবিধান ও প্রশাসনের মৌলিক সংস্কার ছাড়া সামনে এগোনো সম্ভব না। রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ সব কথা বলেন।
এ সময় খুলনা প্রেসক্লাবের আহবায়ক এনামুল হক ও সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সরকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন হেলাল, জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম, জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, মহানগরী ছাত্রশিবির সভাপতি আরাফাত হোসেন মিলন, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বেলাল হোসাইন রিয়াদ, মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজি, ছাত্রশিবিরের মহানগরী সেক্রেটারি এসএম নুরুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত খুলনা প্রেসক্লাবের উন্নয়নের জন্য ক্লাবের উন্নয়নে ক্লাবের কর্মকর্তাদের হাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে পাঠানো তিন লাখ টাকা হস্তান্তর করেন।
খুলনা প্রেসক্লাবের মত একটি দল-মতের ঊর্দ্ধে প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলায় বিচলিত ও বিষ্মত হন তিনি। খুলনা প্রেসক্লাবের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি অনুদানে একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ কোটি টাকার এই প্রকল্প অনুমোদন পেতে প্রেসক্লাবের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটিকে আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত হবো। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্লাবের আহবায়ক এনামুল হক ও সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুলসহ কমিটি অন্যান্য সদস্য ও ক্লাবের সিনিয়র সদস্যদের ভুমিকার প্রশংসা করেন। বিশেষ করে ক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুলের তৎপরতার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, পালিয়ে গিয়ে অডিও-ভিডিও প্রকাশ করে ষড়যন্ত্র করছে শেখ হাসিনা। ন‚র হোসেন দিবসকে কেন্দ্র করে সারাদেশে এক অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে ফ্যাসিবাদী দল। রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছে, তা প্রশাসন ও ছাত্র-জনতা নস্যাত করে দিয়েছে। তিনি বলেন, যতই দেশের বাইরে থেকে চক্রান্ত করা হোক, যতই মিথ্যাচার করা হোক, প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জাতিকে অস্থির করার চেষ্টা করা হোক, আমরা আশাবাদি বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদকে চিনেছে, ফ্যাসিবাদী দলকে চিনেছে, ফ্যাসিবাদের মাস্টার মাইন্ডকেও চিনেছে। তাদেরকে এ দেশের মানুষ কখনও আর গ্রহণ করবে না। তিনি দেশবাসীকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছাত্র-জনতার মত আপনারাও দিন-রাত রাজপথ পাহারা দিন।
সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রশাসনের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে এখনও ফ্যাসিবাদের দোসর আছে জানিয়ে বলেন, আইন উপদেষ্টা ড. প্রফেসর আসিফ নজরুলকে সুইজারল্যান্ডে হেনস্তা করা হয়েছে। সেখানে তার সিকিউরিটি কোথায়? তার প্রোটোকল কোথায়? সেদেশে নিযুক্ত এ্যাম্বাসডর কোথায়? বিদেশের মাটিতে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাথেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের ওপর ওই হামলা অরাজনৈতিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। এমনকি সেখানে যেসব অশ্লীল কথাবার্তা বলা হয়েছে তাতেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নগ্ন চরিত্র ফুটে উঠেছে। এমনিভাবে বিগত ১৬ বছরে দেশের মানুষ আওয়ামী বর্বরতা দেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও সক্রিয় উল্লেখ করে তিনি সকলকে সজাগ থাকার আহবান জানান। তিনি এ সব ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
তিনি অভিযোগ করেন, দেশ বিদেশ থেকে একটি চক্র বলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। পুজোর সময় অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। এ জন্য জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ছোট করার চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে অন্য ধর্মের লোকেরা নিরাপদ নয় বলে তারা মিথ্যাচার করেছিল। কিন্তু সফল হতে পারেনি। জনগণের উত্তাল ক্ষোভের মুখে পলাতক ফ্যাসিবাদী শক্তিকে এই জাতি আর কখনো গ্রহণ করবে না।