আমীরে জামায়াত

2024-02-23

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের বার্ষিক রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত

চলমান সংকট থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে জামায়াতে ইসলামীর সকল নেতাকর্মীকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, "আগামীদিনে আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে একটি আদর্শিক কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে জামায়াতে ইসলামীর সকল পর্যায়ের জনশক্তিকে জনকল্যাণমুখী কাজ করতে হবে। সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে আপোষহীন হতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদেরকে নিজেদের আমল-আখলাক ও চারিত্রিক দিক থেকে সাহাবায়ে কেরামের প্রতিচ্ছবি হতে হবে। এই দেশের জুলুমবাজ, ফ্যাসিস্ট সরকারকে হঠাতে হলে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।"

২৩ ফেব্রুয়ারি জুমা'বার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত বার্ষিক রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা সদস্য অধ্যক্ষ নুরুল আমিন এর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আবদুর রব।

অধ্যপক মুজিবুর রহমান বলেন, "জনগণের সরকার হলো সেই সরকার, যে সরকার জনগণকে ভালোবাসবে জনগণও সরকারকে ভালোবাসবে। কিন্তু বর্তমান জুলুমবাজ এই সরকার ছল-চাতুরির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেঁড়ে নিয়ে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসে আছে। যে সরকারকে জনগণ ভালোবাসে না সে সরকার জনগণের সরকার হতে পারে না। আজ দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি সবকিছুতেই নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে। চলমান এমন অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করতে হলে জামায়াতে ইসলামীর সকল নেতাকর্মীদেরকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদের জানমালের কোরবানি করার মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে ঘরে পাড়া-মহল্লায় দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। দাওয়াতী কাজ যতো বাড়বে আমাদের মিছিলের সারিও ততো বড় হবে।"

তিনি আরও বলেন, "জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদেরকে দুনিয়াবী চিন্তায় বেশি মগ্ন না হয়ে আখেরাতের চিন্তা ও জবাবদিহিতার অনুভূতি লালন করতে হবে। দুনিয়ায় দান সদকার মাধ্যমে আমাদের জন্য আখেরাতে তৈরি করা হবে বাড়ি। তাই দুনিয়ার জীবনে ভোগবিলাসে মত্ত না থেকে আমাদেরকে আখেরাতের বাড়ি বানানোর কাজ করতে হবে।"

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, "জালিমের কারাগারে এখনো বন্দি রয়েছে আমীরে জামায়াতসহ অনেক নেতাকর্মী। আজ পুরো দেশটাই একটি কারাগারে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে উত্তরণ করতে হলে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যদেরকে নিজেদের শপথের আলোকে জীবন-যাপন করতে হবে। রুকনিয়াতের আসল চেতনা নিজেদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। রুকনরা হলো জামায়াতে ইসলামীর মূল চালিকা শক্তি। এই শক্তির উপর ভিত্তি করেই সকল ঝড়-তুফান অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে বৃহত্তর এই সংগঠন। রুকনদেরকে পরকালীন জবাবদিহিতার অনুভূতি প্রতিনিয়ত হৃদয়ে ধারন করতে হবে। দ্বীন প্রতিষ্ঠার সকল আন্দোলন সংগ্রামে রুকনদের সর্বোচ্চ ত্যাগের নাজরানা পেশ করতে হবে।"

এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, "কঠিন সময়ে অতিক্রম করছে দেশ। জামায়াতে ইসলামী এই দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে একটি ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ তৈরির কাজ করছে। আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করব। জামায়াতের প্রতিটি কর্মীকে সমাজ কর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
এই দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যারাই কাজ করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। আমরা শক্তিশালী গণভিত্তি তৈরি করতে চাই।জনশক্তিকে জনসম্পদে তৈরি করে একটি সৎ ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি করবে জামায়াতে ইসলামী।"

মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, "পাশ্চাত্য ও পৌত্তলিক ধ্যানধারণার মানুষরা সারা পৃথিবীতে ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাদের বিপরীতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করছি আমরা। কোরআনের জন্য পাগল এই জনপদের মানুষ তাদের পরিকল্পনা কখনো বাস্তবায়ন করতে দিবেনা।"

বিশেষ অতিথি উপাধ্যক্ষ আবদুর রব বলেন, "আমরা চট্টগ্রামকে নিয়ে এক স্বপ্নে বাস করছি। চট্টগ্রাম হচ্ছে ইসলামের প্রবেশদ্বার। হতাশার সাগরে না ডুবে সাহসিকতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে। সুষ্ঠু ও সুন্দর নেতৃত্ব দিতে পারলে ইসলামের বিজয়ের সূচনা চট্টগ্রাম থেকেই হবে ইনশাআল্লাহ।"

সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, "আখেরাতের সাফল্য হচ্ছে আসল সাফল্য। সেই ধারণাকে আঁকড়ে ধরেই আমাদের কাজ করতে হবে। আখেরাতের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমাদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে। এই পথচলার পথে বাঁধার পাহাড় রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে, এখনো হচ্ছে। সকল বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে জামায়াতে ইসলামী সারা বিশ্বে কাজ করে যাচ্ছে।"

সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, মহানগরীর নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুছ, মো. মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী প্রমূখ।