বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, সরকার জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে এক স্বৈরতান্ত্রিক ও মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই দেশের হারানো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছে। জনতার চুড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে-ইনশাআল্লাহ। তিনি জুলুমবাজ সরকারের পতনের লক্ষ্যে সকলকে রাজপথে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহবান জানান।
তিনি আজ ঢাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলা দক্ষিণ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা আমীর মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং জেলা সেক্রেটারি এবিএম কামাল হোসাইনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী আমীর মাওলানা আব্দুল জাব্বার। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন জেলা নায়েবে আমীর শাহিনুর ইসলাম, জেলা শ্রম বিভাগের সভাপতি ডাঃ শহিদুজ্জামান, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবদুর রাজ্জাক মণ্ডল, আবদুর রহিম, শিবিরের ঢাকা জেলা দক্ষিণ সভাপতি মোঃ মাঈনুল ইসলামসহ জামায়াতের জেলা ও বিভিন্ন থানার নেতৃবৃন্দ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সরকার দেশকে নেতৃত্বশূণ্য ও করদরাজ্য বানানোর জন্যই ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে বিশেষভাবে টার্গেট করেছে। আর সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নাস্তিক বানানোর কারখানা বানানোর গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়ে কথিত নির্বাচনের নামে চর দখলের মহড়া শুরু করেছে। তারা দেশকে নিজস্ব তালুক এবং এমপি হওয়াকে পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করতে শুরু করেছে। কিন্তু জনগণ তাদের স্বপ্নবিলাস কখনোই সফল ও স্বার্থক হতে দেবে না।
তিনি তামাশা ও ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন প্রতিহত করতে সকলকে ভোটদান থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। অন্যথায় স্বৈরাচারিরা জাতির ঘাড়ে আবারো জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসবে।
তিনি বলেন, আমরা সকলেই আল্লাহর সৈনিক। জমিন আল্লাহর; সুতরাং আইনও চলবে আল্লাহর। তাই আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার কাজে আঞ্জাম দেওয়ার জন্য প্রত্যেক কর্মীকে রুকনিয়াতের শপথ গ্রহণ করতে হবে। দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ময়দানে থাকতে হবে আপোষহীন। আর জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। আর এতেই রয়েছে বিশ্বমানবতার ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মুহা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, দেশ ও জাতি এক মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। শুধু জামায়াতে ইসলামী নয় বরং গোটা দেশই পড়েছে মহাসঙ্কটে। এমতাবস্থায় একটি পরিবর্তন অবশ্যাম্ভাবী হয়ে উঠেছে। তাই দেশে একটি সফল ও স্বার্থক পরিবর্তন আনার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু জাতির পরিবর্তনের আগে নিজের পরিবর্তন করা জরুরি। মূলত, যারা ঈমানের হেফাজত করে তারাই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের হেফাজত করতে সক্ষম। তিনি দেশের হারানো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে ময়দানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
মাওলানা আব্দুল জাব্বার বলেন, আমরা একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছি। মূলত, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। মুমিনের জীবনে পরীক্ষা আসবেই। তাই এই পরীক্ষায় আমাদেরকে অবশ্যই উত্তীর্ণ হতে হবে। মূলত, আমরা আল্লাহর দলের সৈনিক। তাই কোনভাবেই শয়তানের দলভুক্ত হওয়া যাবে না। তিনি জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারি হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জীবনে কোন ব্যর্থতা বা হারানোর কিছু নেই। তাই দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে সকলকে ময়দানে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদ নেতৃবৃন্দের হত্যার বদলা নেওয়া হবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।