আমীরে জামায়াত

2023-02-17

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মহান আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের কাজ নিরলসভাবে চালিয়ে যেতে হবে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বর্তমান বিশৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মহান আল্লাহর আইনের আলোকে সমাজকে পরিচালনা করতে হবে। চির শাশ্বত সত্য হচ্ছে মহান আল্লাহর আইন। আর আল্লাহ তা'য়ালার আইনই হচ্ছে হক। জাহিলিয়াত হচ্ছে তাগুত। তাই তাগুতকে পরাজিত করতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছিলেন এবং রাসূলেরাই মহান আল্লাহর আইনকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাই বর্তমান সময়েও যদি কোন দল মতো মহান আল্লাহর আইনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়, তাহলে তাদেরকেও জীবন, অর্থ, সম্পদ ইত্যাদি কোরবানির মাধ্যমে এই পথে চলতে হবে। মহান আল্লাহর আইনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে প্রয়োজন রাষ্ট্রশক্তির। তাই লোকবল তৈরি, জনমত গঠন ও মহান আল্লাহর সাহায্যের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের কাজ নিরলসভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কক্সবাজার জেলা শাখা আয়োজিত রুকন সম্মেলনে (ভার্চুয়াল) প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও কক্সবাজার জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথি আরো বলেছেন, পাঠ্যপুস্তকে পৌত্তলিকতা, মুসলিম শাসকদের চরিত্রহরণ এবং শিশুদেরকে যৌনতাই উদ্দীপ্ত করার কুমানসে একশ্রেণীর ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষীরা পাঠ্যপুস্তক রচনা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতির মানসপটে বিষ ঢেলে দিয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই সকল পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবি জানাচ্ছি এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা, ইতিহাস ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবাবেগের আলোকে মননশীল লেখকদের সমন্বয়ে নতুন করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে হবে। দেশবাসী অবিলম্বে এই দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তিনি আরো বলেছেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকার গায়েবি মামলা হামলা ও নির্যাতন চালিয়ে মুক্তিকামী জনতা কে পরাধীন করে রাখতে চায়। দেশবাসী এই পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে গণতন্ত্র ও জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে ১০ দফা দাবি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। জনগণের তীব্র আন্দোলনে কেয়ারটেকার সরকার নামক যে সিঁড়ি দিয়ে সরকার ক্ষমতারোহণ করেছিল সেই সিঁড়ি দিয়েই ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অন্যতম সরকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, জনগণের মাঝে আদর্শিক মজবুতি অর্জন করতে হলে ব্যাপকভাবে দাওয়াত ও সমাজ কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমল ও আখলাকের পরিপূর্ণ চর্চার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে ইসলামের প্রতি ভাবাবেগ সৃষ্টি করেছিলেন। আমরা ইকামতে সালাতের পাশাপাশি সকল ধরনের বিতর্ক এড়িয়ে ইসলামের সামাজিক সুবিচার, সাম্য, মানবাধিকার ও সুশাসন জনগণের মাঝে প্রচার করতে হবে। আর মুমিন হিসেবে মানবসেবার মাধ্যমে ঈমানী দায়িত্ব কে পরিপূর্ণতায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবুল হাসানাত মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেছেন, ইসলামী আন্দোলনের পথ কণ্টকাকীর্ণ পথ। এই পথে চলতে হলে সকল প্রকার ঝুঁকি ও সম্ভাবনাকে মোকাবেলা করে চলতে হবে। পৃথিবীর সকল নবী রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনসহ দ্বীন কায়েমের সকল পর্যায়ের যুগের কর্মীরা ঝুঁকি ও সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে দীনের পথে চলেছিলেন। আমরা যদি সত্যিকারের একটি সমৃদ্ধশালী, দুর্নীতিমুক্ত ও শোষণ মুক্ত সমাজ কায়েম করতে চায় তাহলে আমাদেরকেও পূর্বসূরীদের মত ত্যাগ-কুরবানীর মানসিকতা লালন করে পথ চলতে হবে হবে।

সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগর আমীর মোঃ শাহজাহান বলেছেন, চরিত্রই ইসলামী আন্দোলনের আসল পুঁজি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সমাজ বিনির্মাণ আন্দোলনে সাহাবায়ে কিরামের চরিত্রই প্রাণশক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিল। আমরা যদি আমাদের অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, আন্তর্জাতিক ও পরিবার নীতিকে সাজাতে চাই তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেই নির্দেশনার আলোকে মধ্যমপন্থা অনুসরণ করে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। জামায়াতের রুকনদেরকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে বিনয়ের মূর্ত প্রতীক ছিলেন সেভাবে জীবন যাপন করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সকল প্রতিকূল অবস্থায় সত্য পথে অটল ও অবিচল থাকতে হবে। জনশক্তিরা যেন রুকনদের জীবন যাপনে সাহাবায়ে কেরামের জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায় সেভাবে নিজেদের কে গড়ে তুলতে হবে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক উপাধ্যক্ষ আব্দুর রব বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী আল্লাহর রাসূল, খোলাফায়ে রাশদীনের ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। কোন একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সিদ্ধান্তে জামায়াতে ইসলামী পরিচালিত হয় না। জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনে বিশ্বাসী। স্বাধীনতার পর থেকে দেশ ও জনগণের সকল প্রকার দুর্যোগ এবং দুঃসময়ে জামায়াতে ইসলামি সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছে। তাই জামায়াতের সোনালী ইতিহাস- ঐতিহ্যকে ধারণ করে ভবিষ্যতের পথ রচনা করতে হবে। সকল প্রকার বিকৃতি, বিশৃঙ্খলা ও ভাঙ্গনের ব্যাপারে সর্বস্তরের সর্বোচ্চ স্তরের জনশক্তি হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

সম্মেলনে ২০২২ সালের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী। আরো বক্তব্য রাখেন জেলা নায়েবে আমির মুফতি মাওলানা মোঃ হাবিবুল্লাহ। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জেলা সহকারী সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলাম।