আমীরে জামায়াত

2022-03-22

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সাহিবে নিসাবগণদের নিয়ে আয়োজিত সুধী সমাবেশে আমীরে জামায়াত

ফরজিয়াতের কাজে যিনি বেশি এগিয়ে থাকবেন, তিনি আল্লাহর ততবেশি প্রিয় বান্দা হবেন

-ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে আর কয়েকটি দিন পরেই আসছে পবিত্র রমাদান মাস, এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। আল্লাহ পাক কুরআনে অনেক বিধান বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম বিধান হচ্ছে যাকাত ব্যবস্থাপনা, ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ। সাহিবে নিসাবদের উপরে ফরজ করেছেন এ বিধান। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি যে সম্পদ তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে’। ঐ খরচ করাটা হচ্ছে ব্যক্তির উপরে ফরজ। এই ফরজিয়াতের কাজে প্রতিযোগিতা করে যিনি যত বেশি এগিয়ে থাকবেন, তিনি আল্লাহর কাছে ততবেশি প্রিয় বান্দা হবেন। আমরা সবাই আশাকরি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার। আর তার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে তাক্বওয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই রমাদান উপহার দিয়েছেন তাক্বওয়া অর্জনের জন্য। রমাদান কুরআন নাজিলের মাস, এটা তাক্বওয়া অর্জনের মাস। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াত অত্র এলাকায় মানুষের প্রয়োজনে নানাবিধ সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এটা আপনাদের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ফলেই সম্ভব হয়েছে। এই কল্যাণমূলক কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রয়োজনে তাদেরকে আপনারা সহযোগিতা করুন। আপনারা যত বেশি এগিয়ে আসবেন সংগঠন মানুষের কল্যাণে ততবেশি ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি সোমবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে সাহিবে নিসাবগণদের নিয়ে আয়োজিত 'সুধী সমাবেশে’ এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আব্দুস সবুর ফকির। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে এডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মুহা. দেলাওয়ার হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে ড. আব্দুল মান্নান, কামাল হোসাইন সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন পর্যায়ের জামায়াত নেতৃবৃন্দ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ৯০ ভাগ মুসলমানের এই দেশটিতে আমরা মনে প্রাণে চাই, কুরআন ও সুন্নাহর আইন যেন মহান আল্লাহ নিজেই প্রতিষ্ঠিত করে দেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার এই কাজটি সরাসরি ফেরেশতাগণ এসে করবেন না। করবে মূলত এই মানবজাতি, করবেন মুমিন মুসলমানেরা। অন্যদিকে ফেরেশতাগণ আসবেন ঠিকই তবে মানুষের সাহায্যকারী হিসেবে, মূল নিয়ামক শক্তি হচ্ছে এই মানুষ। কুরআন নাযিল করা হয়েছে মূলত এই মানবজাতিকে কেন্দ্র করেই। আমরা এই কুরআনের নির্দেশিত বিধানের আলোকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই। যেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা থাকবে। আমরা স্বপ্ন দেখি কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে মানুষের প্রাপ্য সবকিছু পরিচালিত হবে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের স্রষ্টা, মহান মালিকের চেয়ে বেশি দরদ ভালোবাসা মানুষের প্রতি অন্য কারো হতে পারে না। মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। সেই সাথে মানুষকে কিছু দায়িত্বও দিয়েছেন। এসব দায়িত্ব কেবল একটি ইসলামী রাষ্ট্রে পুরোপুরি ভাবে পালন করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সকল পরিস্থিতি উত্তরণে নানাবিধ সেবা সামগ্রী নিয়ে দেশের মানুষের পাশে আছে। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের জীবন মরণ, অর্থ সম্পদ সবকিছুই ঐ মহান আল্লাহ তা’আলার অনুগ্রহ। সুতরাং আপনার অর্থ সম্পদ যাকাত মানুষের প্রকৃত কল্যাণে ব্যয় করুন। অবশ্যই মহান আল্লাহ আপনার দানে বরকত দান করবেন। মানুষের জন্য সাহায্য সহযোগিতার হাত নিয়ে সামর্থবান সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ইসলামের যাকাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা খুবই কল্যাণকর। এরফলে সমাজে সুদূরপ্রসারি শান্তি নিশ্চিত হয়। আল্লাহ ঘোষণা করেছেন ঈমানের স্বাক্ষ্য দেওয়ার পরেই নামাজ ও যাকাত সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বড় মাধ্যম। যাকাত ধন-সম্পদ এবং ব্যক্তি মনকে পবিত্র করে। আমরা ৮ শ্রেণীর মাঝে যাকাত প্রদানের খাত জানি। সেখানে বলা হয়েছে যাকাত কোন অনুগ্রহ অনুকম্পা নয়, বরং এটা গরিবের অধিকার। মহান আল্লাহ কুরআনের অসংখ্য স্থানে সালাত আদায়ের সাথে সাথেই যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বিগত বছরের সমাজকল্যাণ মুলক বিভিন্ন কার্যক্রমের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি আমাদের কল্যাণমূলক সকল কার্যক্রম অব্যহত রাখতে সাহেবে নিসাবগণ আরও বেশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন। অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এই বছরে আরও ব্যাপক ভাবে মানুষের প্রয়োজনে আমরা পাশে দাঁড়াতে চাই। সেই ব্যাপকভিত্তিক সমাজকল্যাণ মুলক কাজে আপনার যাকাতের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে অবদান রাখবেন। মহানগরীর কল্যাণমূলক কাজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আপনাদের হাত আরও সম্প্রসারিত করবেন। আমরা যেসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছি তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই। আপনারা আস্থা রাখতে পারেন, এই যাকাত ফান্ডে যা সংগৃহীত হবে তা যথাযথ ভাবে আয়-ব্যয় এবং যাকাত বণ্টনের নির্ধারিত খাত সমূহে সঠিক ভাবে প্রদান করতে আমরা সচেষ্ট থাকবো ইনশাআল্লাহ। যারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাদের পাশে আমাদের ভাইয়েরা আন্তরিকতার সাথে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি সমাজের কল্যাণমূলক কাজে বিত্তবান সকলকে এগিয়ে আসার উদ্বাত্ত্ব আহবান জানান।