আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলা এবং গাজায় মানবতাবিরোধী অপরাধের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আজ ১৭ নভেম্বর এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সকল আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় আইনে যুদ্ধ চলাকালে নারী-শিশু-বৃদ্ধ এবং অসুস্থ মানুষ হত্যা নিষিদ্ধ। সকল আইন ও নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে মানবতাবিরোধী খুনি ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনের গাজার সবচাইতে বড় হাসপাতাল আল-শিফায় অবস্থানরত রোগী, ডাক্তার, নার্স এবং শিশু ও বৃদ্ধসহ আশ্রয়গ্রহণকারী বহু মানুষ হত্যা করে হাসপাতালটিকে কবরস্থানে পরিণত করেছে। গাজার হাসপাতালের রোগীরা বিদ্যুৎ, পানি ও অক্সিজেনের অভাবে কাতরাচ্ছে। বিদ্যুৎ, পানি ও অক্সিজেন বন্ধ করে দিয়ে খুনি ইসরাইলি বাহিনী ঠান্ডা মাথায় ইনকিউবেটর-এ রাখা নবজাতক শিশুসহ বহু ফিলিস্তিনি শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এমনকি যুদ্ধাপরাধী বর্বর ইসরাইলি বাহিনী হাসপাতালের অভ্যন্তরে নিহতদের জানাযা ও দাফন-কাফনে বাধা দিচ্ছে। দাফন করতে না দেয়ায় লাশগুলোতে পচন ধরেছে এবং কুকুরে খাচ্ছে। সভ্য পৃথিবীর ইতিহাসে এমন মর্মন্তুদ ঘটনার কোনো নজির নেই। গাজায় এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ১৯২ জন স্বাস্থ্য কর্মী ও জাতিসংঘের ১০১ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। আমরা মানবতার দুশমন খুনি ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী আগ্রাসী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আল-শিফা হাসপাতালের নিচে হামাসের টানেলে অস্ত্র ভাণ্ডার থাকার মিথ্যা অজুহাতে মানবতার দুশমন বর্বর ইসরাইলি বাহিনী তল্লাশি চালিয়ে কিছুই পায়নি। এতগুলো জীবন ও সম্পদ বিনষ্টের জন্য ইসরাইলকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। একই কায়দায় গণবিধ্বংসী রাসায়নিক অস্ত্র থাকার মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে ১০ লক্ষ নিরীহ মুসলিম হত্যা করে পশ্চিমারা মূলত মুসলিম রাষ্ট্র ধ্বংসের নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জাতিসংঘ এবং মানবতাবাদী বিশ্ব অতীতের ন্যায় গাজায়ও মানবতা রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। মজলুমের পাশে মুসলিম উম্মাহর যেভাবে দাঁড়ানো উচিত ছিল, তা হয়নি। এ ব্যর্থতা লজ্জাজনক। নিজেদের মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার অথচ অন্যদের বেলায় চুপ-বিশ্ববাসীর এই পক্ষপাত দুষ্ট আচরণকে আমরা ধিক্কার জানাই।
তিনি বলেন, দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলা থেকে শরণার্থী শিবির এবং দক্ষিণ গাজায় যাওয়ার পথে বাস্তুহারা মানুষও রেহাই পাচ্ছে না। গাজায় এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার শিশু, সাড়ে ৩ হাজার নারীসহ ১৩ হাজার নিরপরাধ লোককে বোমা মেরে হত্যা করে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে খুনি ইসরাইল। ২টি পরমাণু বোমার চেয়ে ৩২ হাজার টন বেশি বোমা ফেলে ৪০ হাজার ঘর-বাড়ি পুরোপুরি ও ২ লাখের বেশি আংশিক, ৫৪টি মসজিদ পুরোপুরি ও ১১০টির বেশি আংশিক এবং হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। গাজাবাসীর খাবারের প্রধান উৎস বহু বেকারী ধ্বংস করা হয়েছে। খাদ্য ও জীবন রক্ষাকারী ঔষধবাহী ট্রাক গাজায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। গাজাবাসীকে বিনা চিকিৎসায় এবং না খেয়ে মারার অমানবিক পলিসি নেয়া হয়েছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ ইসরাইলের এইসব অমানবিকতার বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
আল-শিফা হাসপাতাল ও ফিলিস্তিনে যুদ্ধের নামে আজ যা ঘটছে, তা চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ। এমতাবস্থায় ফিলিস্তিনে মানবতা রক্ষায় এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। অনতিবিলম্বে মজলুমের পক্ষে এবং জালিমের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে জরুরি ভিত্তিতে দখলদারিত্বমূলক আগ্রাসী যুদ্ধ বন্ধ এবং যুদ্ধাপরাধী খুনি ইসরাইলের শস্তি বিধান করে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়ে গাজাবাসীকে বাঁচার সুযোগ দেয়ার জন্য আমরা জাতিসংঘ, ওআইসি এবং সকল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”