সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের নীলনকশার জাতীয় সংসদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে জামায়াত ঘোষিত ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ১৮ নভেম্বর এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বর্তমান জালেম সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠন, আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানসহ সকল রাজবন্দি ও আলেম-ওলামার মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে এবং বিরোধীদলের মতামত অগ্রাহ্য করে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের একতরফা ফরমায়েসি তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সরকারের একগুঁয়েমি, হঠকারিতা ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার লক্ষ্যেই হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করতে আমরা বাধ্য হয়েছি।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, সরকার তাদের নীল নকশার নির্বাচনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটিয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় জামায়াতে ইসলামীর ২৪ জন নেতাকর্মী এবং গত এক মাসে জামায়াতে ইসলামীর ২ হাজার ২ শত ৮৩ জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সরকারের জুলুম-নির্যাতন সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নাটোরের এক মাদ্রাসা শিক্ষককে মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা কোন্ দলের লোক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সিলেট জেলা ছাত্র দলের একজন নেতার পিতার ইন্তেকালের পরেও তাকে আদালত জামিন না দেয়ায় সে তার পিতার লাশ একবার দেখতে ও জানাযায় শরীক হতে পারেনি। এ ঘটনার চাইতে অমানবিক ও দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? এভাবে সরকার দেশকে সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় কোনো দেশ চলতে পারে না। আমি সরকারের এই সব জুলুম-নির্যাতন এবং গ্রেফতার-হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গ্রেফতারকৃতদের দ্রুত মুক্তি দাবি করছি।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “জনগণের দীর্ঘ আন্দোলন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিকে উপেক্ষা করে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী এবং জুলুমবাজ বাকশালী সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শাসকদলের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী। ষড়যন্ত্রমূলক নীল নকশার তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন মূলত বিরোধীদলকে নির্বাচনের বাইরে রেখে অতীতের মত শাসকদলকে জিতিয়ে আনার কৌশল নিয়েছে। গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী জনতা সরকারের একতরফা নির্বাাচনের দিবাস্বপ্ন কোনোভাবেই পূরণ হতে দিবে না। জনগণের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে কমিশনকে অবশ্যই এ তফসিল প্রত্যাহার করতে হবে। সকল দলের মধ্যে ঐকমত্য ও সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত করে কমিশনকে নতুনভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার আহবান জানাচ্ছি। নতুবা একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের ফলে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতির দায় ষড়যন্ত্রকারী সরকার এবং তথাকথিত নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে।
ঘোষিত তফসিল বাতিল ও কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মেনে নিয়ে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার লক্ষ্যে জামায়াত ঘোষিত ১৯ ও ২০ নভেম্বর ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সফল করে তোলার জন্য আমি জামায়াতের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং সংগ্রামী দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”