২৩ মে ২০১৯, বৃহস্পতিবার

ঐতিহাসিক বদর দিবসের আলোচনা সভা

বদরের যুদ্ধ সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার অমূল্য স্মারক -মকবুল আহমাদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মকবুল আহমাদ বলেছেন, বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সত্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার এক অমূল্য স্মারক। কুরআনের আলোকে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের প্রেরণার বাতিঘর। সেই চেতনাকে ধারণ করেই সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির মাধ্যমে সোনালী সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরন্তর কাজে করে যাচ্ছে ছাত্রশিবির।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন। উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. রেজাউল করিম, ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক, আবদুল জব্বার, ইয়াছিন আরাফাত। উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের সাবেক এবং বর্তমান কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও সেক্রেটারিয়েট সদস্যদৃন্দ।

আমীরে জামায়াত বলেন, শুধু মুসলিম ইতিহাস নয় বরং মানব সভ্যতার ইতিহাসে বদর যুদ্ধ এক ঐতিহাসিক স্থান দখল করে আছে। এ যুদ্ধ ছিল সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী এবং ইতিহাস নির্ধারণকারী যুদ্ধ। আরব সমাজ কি আগামী দিনে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় সমাবেত হবে না জাহিলিয়াতের অন্ধকারচ্ছন্ন পথে হাটবে তার ফয়সালা হয় বদরের প্রান্তরে। সেদিন মক্কার কাফেররা ইসলামকে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে মিটিয়ে দেয়ার মানসে সর্বশক্তি নিয়ে বদরের প্রান্তরে সমাবেত হয়। রাসূল সা. আল্লাহর উপর ভরসা করে এক অসম যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যান। একদিকে রাসূলুল্লাহ স. এর নেতৃত্বে মাত্র ৩১৩ জন প্রায় নিরস্ত্র মুজাহিদ আর অপরদিকে আবু জেহেলের নেতৃত্বে রয়েছে ১০০০ প্রশিক্ষিত সৈন্যের সুসজ্জিত বাহিনী। কিন্তু আল্লাহর সাহায্যে এ অসম লড়াইয়ে নিরস্ত্র মুষ্টিমেয় মুজাহিদদের কাছে পরাজিত হয় সুসজ্জিত বিশাল বাহিনী। সংখ্যা বা যুদ্ধাস্ত্র নয় বরং আল্লাহর উপর উপর অবিচল বিশ্বাস, অসীম সাহস ও মিথ্যার কাছে মাথা নত না করার দৃঢ় প্রত্যয় ছিল এই অসম যুদ্ধে বিজয়ের মূল নিয়ামক। এ যুদ্ধে কুরাইশদের দর্প চূর্ণ হয়ে যায়। মুসলমানদের আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের বিষ্ময়কর এক নজির স্থান করে নেয় ইতিহাসের পাতায়। সুতরাং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে এগিয়ে চলা মুসলমানদের জন্য সংখ্যা নয় বরং আল্লাহ তায়ালার উপর অবিচল আস্থা ও ঈমানী দৃঢ়তাই যে মূল বিষয় বদরের প্রান্তর তার অনন্য দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, আবু জেহেলের সেই তাগুত শক্তির প্রেতাত্মারা ইসলামের বিরুদ্ধে আজও সমানভাবে সক্রিয়। সেদিনের আইয়্যামে জাহেলিয়াত আজ নব্য জাহিলিয়াতের রূপ ধারণ করেছে। সমগ্র বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তাদের ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে মুসলিম বিশ্ব আজ জর্জরিত। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ইভটিজিং, সন্ত্রাস আর মাদকের ভয়াবহতায় যুব সমাজ চরমভাবে হুমকির সম্মূখীন। একশ্রেণির দুষ্টচক্রের অশুভ চক্রান্তের ফলেই আমাদের সম্ভাবনাময় প্রজন্ম পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এসব সমাজ-নিষিদ্ধ অপকর্ম সমাজে বিস্তার লাভের আগেই রাষ্ট্র যদি তার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারতো তাহলে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারকে 'যুদ্ধ' ঘোষণা করতে হতো না। রাসুল সা. যেমনভাবে মক্কার ধূষর মরুর বুকে সকল প্রকার অপকর্ম রোধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন তেমনভাবে সমাজের কুচক্রের বলয় যেন যুবক-তরুণদের গ্রাস করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই একটি সুন্দর সোনালী সমাজ গঠনে কাজ করে যেতে হবে। মানুষ যখন খুন-হত্যা, রাহাজানিসহ নানান অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে নিজেদের মনুষ্যত্ববোধ হারাতে বসেছিল ঠিক সেসময় তা থেকে রক্ষার জন্য মহান প্রভু তাঁর প্রিয় রাসূলকে (সঃ) এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন। শেষ নবীর উম্মত হিসেবে রাসূলের (সঃ) দেখানো পথ অনুসরণ করে ছাত্রশিবির প্রত্যেক ছাত্রের মাঝে ইসলামের সুমহান আদর্শ পৌঁছিয়ে দিয়ে একটি সম্প্রতির সোনালী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রেও ছাত্রশিবিরের পথ চলার মূল চালিকা শক্তি অনুকূল পরিবেশ বা জনশক্তির আধিক্য নয় বরং আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও ঈমানী দৃঢ়তা।

কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন বলেন, আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তৎকালীন মক্কার সমাজে বিরাজিত জাহেলিয়াতকে দূর করে একটি সুন্দর, সভ্য, জ্ঞান নির্ভর আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এপথে নানান নির্যাতন, নিপীড়ন, বাধা-বিপত্তি আসলেও রাসূল (সঃ) দৃঢ়তার সাথে পথ চলেছেন। বদর যুদ্ধ সেসব বাধার মধ্যে একটি মাইলফলক, যাতে মুসলমানরা আল্লাহর উপর ভরসা করে লড়েছিলেন এবং বিজয় অর্জন করেছিলেন। তাই বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় জিহাদ। যুদ্ধবন্ধীদের সাথে আল্লাহর নবী (সঃ) ও মুসলিমরা যে সহমর্মীতা প্রদর্শন করেন, বিশ্বের ইতিহাসে তার নজির বিরল। মুক্তিপণ আদায়ে অক্ষমদের সুযোগ দেয়া হয়েছিল মুক্তিপণ হিসেবে ১০ জন মুসলিম শিশুকে পড়ালেখা শেখানোর। ইসলাম মানবজাতিকে আবার সেই উন্নত মাকামে নেয়ার ঘোষণা দেয়। বদরের প্রান্তর থেকে ইসলামের বিজয়ধারা সূচিত হয়। সেই বিজয়ের ধারা শেষ হয়ে যায়নি। আবারো নব্য আইয়্যামে জাহিলিয়াতের মোকাবেলায় বদরের চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে ইসলামের আলোকে সমাজ বিনির্মাণের প্রচেষ্টা যেকোন মূল্যে অব্যাহত রাখতে হবে।